লাল কৃষ্ণচূড়ার গল্প
-- আচ্ছা আমরা কি আমাদের রিলেশনটা কন্টিনিউ করতে পারি না?-- না। আমি তোমার মতো ছেলের সাথে থাকতে পারবো না। তুমি নিজেকে কষ্ট দিয়ে কি মজা পাও জানি না কিন্তু এইটা বুঝো না যে তোমাকে কষ্ট পেতে দেখলে আমি কষ্ট পাই। আমি নিজেকে এভাবে কষ্ট দিতে পারবো না।
-- আচ্ছা আমাকে কি আরেকটা সুযোগ দেয়া যায় না?
-- তুমি এর আগেও অনেক বার এইভাবে সুযোগ চেয়ে নিয়েছো। বলেছো নিজেকে বদলে ফেলবে। কোনদিনও যখন পারোনি।
এবার পারবে! তার গ্যারান্টি কি?
-- প্রিয়ন্তি আমি সত্যি বদলে যাবো!!
-- স্যরি নীলয়। আমি আর পারছি না।
-- তাহলে আমার একটা শেষ ইচ্ছা রাখবে?
-- কি ?
-- কাল শেষ বারের মতো দেখা করব! তারপর আর হয়তো এই জীবনে দেখা নাও হতে পারে।
-- প্লিজ!! তুমি ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করবে না!!
-- এইখানে এমন কিছুই করা হচ্ছে না। তুমি শুধু কাল নীল রঙের শাড়ি পরে আসবে আমাদের সেই প্রথম দেখা হওয়ার জায়গাটাতে।
-- আচ্ছা। কিন্তু মাত্র ১০ মিনিট। আমার কাল ক্লাস আছে।
-- আচ্ছা!! জো হুকুম প্রিন্সেস
নীলয়টা কাল যে কি পাগলামী করবে তা কে জানে। কোনদিনও ছেলেটা স্বাভাবিক মানুষের মতো ভাবে না। উল্টা পাল্টা কাজ কারবার করে। কাল যত কিছুই হোক প্রিয়ন্তি আর এই রিলেশন রাখবে না।
প্রিয়ন্তি ঠিক সময়মতো এসে হাজির হয়েছে সেই গাছটির নিচে যেখান থেকেই তার আর নীলয়ের সম্পর্কের শুরু। প্রিয়ন্তির এক মুহুর্তে সব মনে পড়ে গেল!
আচ্ছা নীলয়টা আসে না কেন? দেরী করা স্বভাব ছেলেটার। আজ আসলে আমি সাথে সাথেই চলে যাবো। আমার বসে থাকার সময় নেই। গাছটার নিচে বসে বসে ভাবে প্রিয়ন্তি।
-- কেমন আছো প্রিয়ন্তি? (পেছন থেকে এসে হুট করে প্রশ্ন করে নীলয়)
-- কে? ওহ তুমি!! সব সময় উল্টা পাল্টা কাজ করবে না। ভয় পাইছি
-- কেমন আছো বললে না তোহ
-- তোমার জেনে কাজ কি? কি করতে ডেকেছো তাই বলো। আর আগেই বলে দেই আমার কাছে মাফ চাইলেও কোন কাজ হবে না। আমি রিলেশনে ব্যাক করবো না।
-- আচ্ছা বাব্বা!! থামো একটু। তুমি আমার কাছে কিছু জিনিস পাও। সেগুলো দিতেই এইখানে ডাকা তোমাকে।
-- কি জিনিস? জলদি দাও!! আমি ক্লাসে যাবো। তোমার সাথে ক্লাস বাঙ্ক করে প্রেম করার ইচ্ছা আমার নাই
-- চোখ বন্ধ করে হাত দুটি এগিয়ে দেও!
-- আচ্ছা!! এই নাও
নীলয় তার প্রিয়ন্তির জন্য অনেকগুলো কাঁচের চুড়ি এনেছিলো। সেগুলো পরিয়ে দিল তার প্রিয়ন্তিকে। প্রিয়ন্তি চোখ খুলে অবাক হয়ে যায়। অনেক আগে প্রিয়ন্তি নীলয়ের কাছে এই জিনিসগুলা চেয়েছিলো। প্রিয়ন্তি নিজেই ভুলে গিয়েছিলো এইগুলোর কথা!! নীলয়ের দিকে তাকিয়ে দেখে নীলয়ের হাতে একগুচ্ছ কৃষ্ণচূড়া!! প্রিয়ন্তির সবথেকে প্রিয় ফুল। আজ পর্যন্ত নীলয় যেটা ওকে কোনদিনও দেয় নি।
প্রিয়ন্তির চোখ দিয়ে অশ্রু পড়ে যাচ্ছিল মাটিতে!! নীলয় গিয়ে সেই অশ্রুকণা কে তার হাতে ধরল!
-- পৃথিবীর সবথেকে মূল্যবান জিনিসকে এভাবে মাটিতে ফেলতে নেই প্রিয়ন্তি! আমি শুধু একটা কথায় বলবো আজ থেকে এই অমূল্য অশ্রুকণা গুলো আর কেও কখনো দেখতে পারবে না।
প্রিয়ন্তি আর নিজেকে সামলে রাখতে পারে না। জড়িয়ে ধরে নীলয়কে। কিছুক্ষণ পরে নীলয় আর প্রিয়ন্তিকে দেখা যায় তাদের সেই প্রিয় রাস্তায় হাত ধরে হেটে যেতে। তারা হয়তো নতুন জীবনের রাস্তায় হাটছে। নতুন কোন স্বপ্ন দেখতে। আর তাদের হাতে ধরা এক গুচ্ছ কৃষ্ণচূড়া!।
0 comments:
Post a Comment