আনারসের নামে আমরা যে বিষ খাচ্ছি ! বিষমুক্ত আনারস চিনবেন যেভাবে !!!!
ভীষণ গরমে পথে ঘাটে লেবুর শরবত, তরমুজের
মতো আরো একটি জনপ্রিয় ফলের নাম আনারস। দেখতে ভালো, খেতে সুস্বাদু দামেও
সাধ্যসীমার মধ্যে। ১০ থেকে ২০ টাকায় একপিস আনারস কিনলেই দোকানি আপনাকে বিট
লবনের স্বাদে কেটে ছিলে মাখিয়ে প্যাকেট করে হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে যে আনারসটি
তার পুষ্টিগুন কিন্তু প্রশ্নাতীত। তবে আমাদের সাবধান বানী তখন-ই কার্যকর
যখন এই আনারস টিকে ব্যবসায়ীক উদ্দ্যেশে রাসয়নিকের ব্যবহারে খাবার অনুপযোগী
করে
বাজারজাত করা হয়েছে।
ফলমূলে কীটনাশকের ব্যবহার বেশ পুরোনো
ইস্যু। গাছ এবং ফল কে কীটপতঙ্গের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতেই সেই ৬০ এর দশক
থেকে মূলত কীটনাশকের ব্যবহার শুরু হয়। কিন্তু শুধু সেই কাজেই থেমে থাকেনি
বিজ্ঞান। আবিষ্কার করেছে আরো অনেক রাসয়নিক। যার মধ্যে ক্যালসিয়াম কার্বাইড
একটা উল্লেখ যোগ্য নাম। ফরমালিন যখন প্রতিদিনের আতংকের নাম তখন অন্য অনেক
রাসয়নিকের মতোই ক্যালসিয়াম কার্বাইড আমাদের গুরুত্বের বাইরে থেকে যাচ্ছে।
খাদ্যে যেসব রাসনিক মেশানো হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে ফরমালিন, প্যারা ফরমালিন,
ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ডিডিটি, ইথেফন, কৃত্রিম হরমোন, ক্যারিথ্রিন এবং
রাসায়নিক রং।
আনারসের বাম্পার ফলনের জন্য টাঙ্গাইল জেলার
মধুপুর উপজেলা বেশ বিখ্যাত। এখান থেকে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ২০০ট্রাক ভর্তি
আনারস পৌঁছে যায় দেশের আনাচে কানাচে। খোদ মধুপুরের বাজারেও রাসয়নিক মুক্ত
আনারস পাওয়া বেশ কঠিন। আনারস দ্রুত বর্ধন এবং পাকানোর জন্য যে হরমোনাল
রাসয়নিক ব্যবহার করা হয় তার নাম গর্ভবতী। আর আনারসের রং সুন্দর করার জন্য
দেয়া হয় রাইপেন ব্রান্ডের ইথেফন। মেডিসিন ছাড়া যে রং হয় না তা কিন্তু নয়,
হয় তবে দেরি হয়। মানে ফলটিকে প্রাকৃতিক ভাবে পাকার সময় দিতে হয়। আনারস
প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে উঠতে এবং খাবার উপযোগী হতে সময় লাগে তিন মাস। কিন্তু
বেশি লাভের আশায় দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে চাষীরা
ব্যবহার করছেন রাসয়নিক। শেয়াল আনারস বাগানের প্রধান শত্রু। ১৯৯০ সাল থেকে
মধুপুরের আনারসে ইথেফন ব্যবহার করা হচ্ছে। এবং তারপর থেকে শেয়ালও এই ফল খায়
না।
কৃষকরা নিজেরা নিজেদের খাবারের জন্য যে আনারস গুলো আলাদা করে রাখেন তাবে
রাসয়নিক স্প্রে করেন না। কারণ তারাও জানে স্প্রে করা আনারস খেলে নানা
রোগব্যাধি হয়। তিন মাসে প্রকৃ্তিক ভাবে ম্যাচিয়ুর হতে না দিয়ে দুই মাসে
যেটা বাজারজাত করনের জন্যই মধুপুরের আনারস চাষীরা বেশি দাম পাবার আশা জেনে
এবং না জেনে এই ক্ষতিকর রাসয়নিক ব্যবহার করে যাচ্ছেন। ইথাইলিন বা
ক্যালসিয়াম কার্বাইড প্রয়োগের কারণে ২-৪ দিনের মধ্যেই ফল হলুদ রং ধারণ করে।
বাস্তবে এসব ফল বাইরে পাকা মনে হলেও এর ভিতরের অংশে অপূর্ণতা থেকেই যায়।
ফল পাকাতে যে বিপজ্জনক রাসায়নিক পর্দাথটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় তার
নাম কার্বাইড। স্থানীয় বাজারে কীটনাশকের দোকানে প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে
রাইপেন, টমটম, প্যানোফিক্স, সুপারফিক্স নামক কেমিক্যালগুলো। যেগুলো আমাদের
কিডনীর মারাত্মক ক্ষতিকর।
আনারসের জীবন চক্র যদি এক লাইনে বলা হয়,
তবে এমন দাঁড়ায় যে আনারস এখন হরমোনে বাড়ে, রাইপেনে পাঁকে, ফরমালিনে টেকে।
প্রথমে আনারসে ফুল আসলেই স্প্রে করা হয় হরমোন। এতে ফুলেফেঁপে বড় হয়ে ওঠে
আনারস। এরপর সেই আনরসে ইথোফেন স্প্রে করা হয়। এতে দ্রুত পেঁকে যায় আনারস।
আর সবশেষে স্প্রে হয় ফরমালিন। এতে অসময়ে পাকানো আনারস পচনের হাত থেকে রক্ষা
পায়। ফরমালিন স্প্রের পরদিন কাটা হয় আনারস। সুপারফিক্স নামের একটি গ্রোথ
হরমোনের কার্যকারিতা হলো এতে একটি আনারস এক মাসের মধ্যে স্বাভাবিকের তুলনায়
তিন থেকে চার গুন বড় ও মোটাসোটা হয়। রাইপেন বা টমটম নামের এই ওষুধগুলো
গাছে স্প্রে করলে এক থেকে তিন দিনের মধ্যে আনারসে লাল রঙ ধরে। এবং রাসয়নিক
ব্যবহারে চাষীর আরেকটি লাভ হচ্ছে ক্ষেতের সব আনারস একসাথে পাকে।
কিভাবে চিনবেন রাসয়নিক মুক্ত আনারস। দেখতে
অসুন্দর, আকারে অতটা বড় নয়। আনারসে ওষুধ না দিলে গোড়া থেকে পাকাঁ শুরু হয়
এবং এক-দুই চোখ রং হয়।
জেনে নিই আনারসের ৭টি উপকারিতা-
পুষ্টির অভাব দূর করে: আনারস পুষ্টির বেশ
বড় একটি উৎস। আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি, ক্যালসিয়াম,
পটাশিয়াম ও ফসফরাস। এসব উপাদান আমাদের দেহের পুষ্টির অভাব পূরণে কার্যকরী
ভূমিকা পালন করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে: শুনতে
অবাক লাগলেও আনারস আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে। কারণ আনারসে প্রচুর
ফাইবার এবং অনেক কম ফ্যাট রয়েছে। সকালে আনারস বা সালাদ হিসেবে এর ব্যবহার
অথবা আনারসের জুস অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর।
হাড় গঠনে: আনারসে রয়েছে
প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ। ক্যালসিয়াম হাড়ের গঠনে বেশ
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং ম্যাঙ্গানিজ হাড়কে করে তোলে মজবুত।
প্রতিদিনের খাবার তালিকায় পরিমিত পরিমাণ আনারস রাখলে হাড়ের সমস্যাজনিত যে
কোনও রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
দাঁত ও মাড়ি সুরক্ষায়:
আনারসের ক্যালসিয়াম দাঁতের সুরক্ষায় কাজ করে। মাড়ির যে কোনো সমস্যা সমাধান
করতে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন আনারস খেলে দাঁতে জীবাণুর
আক্রমণ কম হয় এবং দাঁত ঠিক থাকে।
চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায়:
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, আনারস ম্যাক্যুলার ডিগ্রেডেশন হওয়া থেকে আমাদের
রক্ষা করে। এ রোগটি আমাদের চোখের রেটিনা নষ্ট করে দেয় এবং আমরা ধীরে ধীরে
অন্ধ হয়ে যাই। আনারসে রয়েছে বেটা ক্যারোটিন। প্রতিদিন আনারস খেলে এ রোগ
হওয়ার সম্ভাবনা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। এতে সুস্থ থাকে আমাদের চোখ।
হজমশক্তি বাড়ায়: আনারস
আমাদের হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে বেশ কার্যকরী। আনারসে রয়েছে ব্রোমেলিন, যা
আমাদের হজমশক্তিকে উন্নত করতে সাহায্য করে। বদহজম বা হজমজনিত যে কোনো
সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন আনারস খাওয়া অত্যন্ত জরুরি।
রক্ত জমাটে বাধা দেয়:
দেহে রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয় এই ফল। ফলে শিরা-ধমনির (রক্তবাহী নালি)
দেয়ালে রক্ত না জমার জন্য সারা শরীরে সঠিকভাবে রক্ত যেতে পারে। হৃদপিণ্ড
আমাদের শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। আনারস রক্ত পরিষ্কার করে
হৃদপিণ্ডকে কাজ করতে সাহায্য করে।
0 comments:
Post a Comment