advertisement

adverisement

your javascript ads here

Thursday, 30 June 2016

ঐশীর ফাঁসি ঈদের আগেই !

ঈদের আগেই হয়ে যেতে পারে বাবা মা হত্য‍ায় দায়ে অভিযুক্ত আলোচিত সেই ঐশী রহমান এর ফাঁসি ! এর আগে ঐশীর ফাঁসি কার্যকরের আদেশ দেয়া হয়।
ধারণা করা হচ্ছে, দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের আওতায় খুব শীঘ্রই ঐশীকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতে পারে। যদিও ঐশীর পুরো বিষয়টিই এখনো জনসম্মুখে ঘোল‍াটে। এমনকি আজপর্যন্ত ঐশীর কোনো সাক্ষাৎকার বা নিজ মুখে স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও প্রকাশ করা হয়নি। কেনো তাকে ক্যামেরার সামনে আনা হয়নি। তা আজো রয়ে গেছে অজানা।

(হত্যাকান্ডের বর্ণণা এবং হত্যাকান্ড ঘটার পর থেকে এপর্যন্ত ঐশীকে নিয়ে গণমাধ্যমের সকল প্রতিবেদন এখানে দেয়া হলো)
পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানকে হত্যার দায়ে তাদের মেয়ে ঐশী রহমানের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার জন্য ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শিগগিরই শুরু হচ্ছে। একই সময়ে শুরু হবে নিম্ন আদালতের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ঐশীর করা আপিলের শুনানি। ডেথ রেফারেন্সের শুনানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ৭২০ পৃষ্ঠার পেপার বুক। চাঞ্চল্যকর এই মামলার শুনানি এখন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার অনুমোদনের অপেক্ষায়।
সুপ্রিম কোর্টের একটি সূত্র জানায়, নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ঐশীর করা আপিল ও রাষ্ট্রপক্ষের ডেথ রেফারেন্স আবেদনের শুনানির জন্য ঐশীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন বিষয়ক। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (বিচার ও প্রশাসন) সাব্বির ফয়েজ বলেন, ‘ঐশীর মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি অনুমতি দিলে শুনানির জন্য হাইকোর্টের কার্যতালিকায় আনা হবে।’
হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখার সুপারিনটেনডেন্ট বলেন, ‘ঐশী রহমানের ৭২০ পৃষ্ঠার পেপার বুকের কাজ শেষ হয়েছে। আমরা কয়েকটি ভাগে দ্রুত সময়ের মধ্যে এই পেপার বুক তৈরি করি।’
তবে ঐশীর আইনজীবী মাহবুব হাসান রানা বলেন, ‘ঐশীকে নিম্ন আদালত যে রায় দিয়েছেন, তাতে অনেক ধরনের ক্রটি রয়েছে। আমরা আপিল করেছি। আশা করি, আপিলে ঐশী খালাস পাবেন।’
এসব পেপারবুক কীভাবে প্রস্তুত করা হয় জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ফৌজদারি মামলার বিশেষজ্ঞ এস এম শাহজাহান বলেন, মামলা দায়ের থেকে শুরু করে নিম্ন আদালতের রায়সহ সকল নথি পেপার বুকে থাকে। এ ছাড়া আসামিপক্ষ আপিল দায়ের করলে সেখানে নতুন যুক্তি ও নিম্ন আদালতের রায়ে কী ভুল ছিল তা উপস্থাপন করা হয়।
গত বছরের ৬ ডিসেম্বর ২৫টি যুক্তি দেখিয়ে ঐশী রহমান হাইকোর্টে আপিল দায়ের করেন। আপিলে তিনি বলেছেন, তাঁর বিচার প্রক্রিয়া ছিল ভুলে ভরা। মিথ্যা সাক্ষীর ওপর ভিত্তি করে তাঁকে সাজা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বয়সের ক্ষেত্রে মামলার বাদীর বক্তব্য গ্রহণ করেননি আদালত।
মামলার বাদী ঐশীর চাচার মতে, ঐশীর জন্ম ১৯৯৬ সালে। এতে ঘটনার সময় ঐশীর বয়স হয় ১৬ বছর। তাই বয়স অনুযায়ী শিশু আদালতে ঐশীর বিচার হওয়ার কথা ছিল। এ ছাড়া ঘটনার সময় তিনটি ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে মর্মে তদন্ত কর্মকর্তা তাঁর প্রতিবেদনে উল্লেখ করলেও তিনি আসামি ঐশীর হাতের আঙুলের ছাপ আদালতে হাজির করেননি।
মামলার বিবরণে জানা য়ায়, গত বছরের ১৫ নভেম্বর পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না রহমানকে হত্যার দায়ে মেয়ে ঐশী রহমানকে দুবার মৃত্যুদ- দেন আদালত। প্রত্যেক মৃত্যুদণ্ডের সঙ্গে ২০ হাজার টাকা করে মোট ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অনাদায়ে দুই বছর কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। তবে একটি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর অন্যটি সরাসরি বাতিল হয়ে যাবে।
একই সঙ্গে ঐশীর বন্ধু মিজানুর রহমান রনিকে দুই বছর কারাদন্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে এক মাসের কারাদ- দেওয়া হয়। মামলার অপর আসামি আসাদুজ্জামান জনিকে খালাস দিয়েছেন আদালত। ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহমেদ এ রায় ঘোষণা করেন।
বিচারক রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ ঐশীর প্রকৃত বয়স প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। আর সে যে সাবালিকা, এটাও প্রমাণ হয়েছে।’ আসামিপক্ষ ঐশীর বয়সের পক্ষে যা যুক্তি দিয়েছে, তা যথাযথ নয় বলে মন্তব্য করেন আদালত। পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ‘ঘটনার দিন ঐশী নেশাগ্রস্ত ছিল। তার ক্রিমিনাল ইনটেন্ট ছিল। হঠাৎ করেই কোনো উত্তেজনা ছিল না, পূর্বপরিকল্পিতভাবে সে তার বাবা-মাকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করে। সে সুকৌশলে কফির সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে তার বাবা-মাকে হত্যা করেছে।’
২০১৪ সালের ৯ মার্চ ঐশীকে প্রধান আসামি করে তিনজনের বিরুদ্ধে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আবুল খায়ের। পরে গত বছরের ৩০ নভেম্বর ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ বি এম সাজেদুর রহমান তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এ মামলায় বিভিন্ন সময়ে ৪৯ সাক্ষীর মধ্যে ৩৭ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন।
২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগের বাসা থেকে পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ১৭ আগস্ট নিহত মাহফুজুর রহমানের ছোট ভাই মো. মশিউর রহমান রুবেল পল্টন থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। একই দিন পল্টন থানায় আত্মসমর্পণ করেন ওই দম্পতির মেয়ে ঐশী রহমান।
খুনের বিবরণ যেভাবে দিয়েছিলেন ঐশী :
২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগে নিজের বাসা থেকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (পলিটিক্যাল শাখা) ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর পরদিন ঐশী গৃহকর্মী সুমিকে নিয়ে রমনা থানায় আত্মসমর্পণ করেন। সে সময় গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ঐশী জানিয়েছিলেন, এক বন্ধু উচ্চমাত্রার ঘুমের ট্যাবলেট এনে দেয় ঐশীকে। ঐশী ট্যাবলেটগুলো কফির সঙ্গে মিশিয়ে তাঁর বাবা-মাকে পান করান। বাবা-মা দুজনই কফিপানে অচেতন হয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। তারপর ঐশী হত্যা করেন তাঁর বাবা-মাকে। মা-বাবাকে হত্যার পর ঐশী গোসলও করেন।
আরেক জিজ্ঞাসাবাদে ঐশী বলেন, প্রথমে তিনি মাকে হত্যা করেন। হত্যার পর তাঁর লাশ লুকিয়ে রাখেন। মাকে হত্যার সময়ে বাবা বাইরে ছিলেন। বাবা ঘরে আসার পর তাঁকেও চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে হত্যা করেন তিনি। টুকরো করার জন্য বাসায় ধারালো অস্ত্র না পাওয়ায় লাশ টুকরো করতে পারেননি। ঐশী মেঝের রক্ত মুছে গোসলও করেন।
২০১৩ সালের ২৫ আগস্ট আদালতে ঐশী বলেন, ‘২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট আমি ছয় পাতা ঘুমের বড়ি কিনেছিলাম। রাত ১১টার পর তিন পাতা বাবার কফিতে মিশিয়ে পান করাই। আর মায়ের কফিতে তিন পাতা মেশাই। কফি পান করার পর তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েন। পরে আমি চাকু দিয়ে বাবাকে স্ট্যাব করি। এরপর বাবা মারা যান। বাবাকে হত্যার পর আমি হুইস্কি পান করি। বাবাকে হত্যার পর একইভাবে মাকে চাকু দিয়ে স্ট্যাব করতে থাকি।
একপর্যায়ে মা গোঙাতে থাকেন। এরপর মা আমার কাছে পানি চান। আমি তাঁকে পানি খাওয়াই। এরপরও মা যখন মারা যাচ্ছিলেন না, তখন মায়ের গলায় চাকু দিয়ে স্ট্যাব করতে থাকি। পরে মা মারা যান। বাবা-মাকে হত্যার পর কাজের মেয়ে সুমিকে ডাকি। দুজনে লাশ টেনে বাথরুমে রাখি। পরে কৌশলে ছোট ভাইকে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যাই।’
কাকে আগে খুন করা হয়েছিল বা খুন নিয়ে আদালতে তাঁর জবানবন্দিতে একেক সময় একেক কথা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে আসে।
আদালতে ঐশী আরো জানান, মা স্বপ্না রহমানকে হত্যার পর বঁটি দিয়ে চাবির গোছা কেটে চাবি নেন তিনি। এরপর লকারের তালা খুলে নগদ প্রায় লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে সকালে কাজের মেয়ে সুমি, ছোট ভাই ঐহীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। হত্যার পর দেশের বাইরে চলে যাওয়ারও পরিকল্পনা করেন ঐশী।
Sponsored by Revcontent
যেসব কারণে বাবা-মাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন ঐশী :
মামলার অভিযোগপত্র অনুযায়ী, ঐশী রহমান সব ধরনের মাদকেই আসক্ত ছিলেন। হেরোইন, পেথিডিন, ইয়াবা, অ্যালকোহল এমনকি গাঁজা সেবনেও অভ্যস্ততা ছিল তাঁর। এসব কারণেই প্রতি মাসে নতুন নতুন কৌশলে বাবা-মাকে বলে হাত খরচ হিসেবে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন ঐশী।
তবে বিভিন্ন সময় আদালতে মা-বাবাকে খুনের কথা অস্বীকার করেন ঐশী। এ বছরের অক্টোবরে ট্রাইব্যুনালে লিখিত বক্তব্যে ঐশী জানান, ঘটনার সময় তিনি অন্য স্থানে ছিলেন। সেখানে তিনি মদ পান করছিলেন। ঘটনা জানার পর তিনি পুলিশের কাছে যান।
ঐশী আদালতকে আরো বলেন, তাঁকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ বড় বড় লাঠি দিয়ে তাঁকে বেদম মারধর করে। মা-বাবাকে হত্যার কথা স্বীকার করতে বলে। স্বীকার না করলে তাঁকে আবারও রিমান্ডে নেওয়ার ভয় দেখায় পুলিশ। পরে বাধ্য হয়ে তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

0 comments:

Post a Comment