বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি লক্ষাধিক পরিবার পানিবন্দী !!!
যমুনা, ব্রহ্মপুত্র তিস্তাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সারা দেশে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। পানির প্রবল চাপে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো হুমকির মুখে পড়েছে। বিভিন্ন জেলার চরাঞ্চলের লক্ষাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। অনেক স্থানে বন্যার্তরা বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিচ্ছেন। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলাকে দুর্যোগপূর্ণ উপজেলা ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যার পানি ওঠায় শত শত
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে। বন্যার্তদের জন্য সরকারিভাবে ত্রাণসামগ্রী দেয়া হলেও তা প্রয়োজনের চেয়ে নগণ্য বলে দুর্গতরা অভিযোগ করেছেন। এ দিকে জামালপুরের ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় বন্যার পানিতে পড়ে গিয়ে তিন শিশু ও মাদারগঞ্জ উপজেলায় সাপের কামড়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
বগুড়া অফিস ও সারিয়াকান্দি সংবাদদাতা জানান, যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত
থাকায় জেলার বন্যাকবলিত সারিয়াকান্দি, ধুনট ও সোনাতলা এলাকার কয়েকটি
পয়েন্টে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। এসব এলাকায় অন্তত ২০টি
পয়েন্টে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দিয়ে পানি চুইয়ে ভেতরে প্রবেশ করায় লোকজনের
মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। শুক্রবার সারিয়াকান্দি পয়েন্টে যমুনার পানি
বিপদসীমার ৯৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানিবৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন
স্থানে বেড়েছে নদীভাঙন। এ ছাড়া নতুন করে কিছু নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায়
সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে।
বগুড়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আমিন জানান, বাঁধের
অবস্থা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং পানি চুইয়ে পড়াস্থান মেরামত করা হচ্ছে। তিনি
জানান, পাঁচটি পয়েন্টে বাঁধ দিয়ে পানি চুইয়ে পড়ার পরিস্থিতি গুরুতর। অনেক
পরিবার খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছে। দেখা দিয়েছে খাবার পানি, জ্বালানি ও
গোখাদ্য সঙ্কট। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের ত্রাণসামগ্রী ও পানি
বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। রৌমারী
উপজেলাকে দুর্যোগপূর্ণ উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ্ মামুন
তালুকদার। এ দিকে জেলার ৯ উপজেলায় কমেনি ৬ লক্ষাধিক বানভাসি মানুষের
দুর্ভোগ। বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য ও ল্যাট্রিনের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে
উঁচু বাঁধ, পাকা সড়কে আশ্রয় নেয়া হাজার হাজার পরিবার। স্থানীয় পানি উন্নয়ন
বোর্ড জানায়, চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি
পেয়ে বিপদসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার ও সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপদসীমার ৮৮
সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যাদুর্গতের মধ্যে ৫৭৫ মেট্রিক টন চাল ও সাড়ে
১৫ লাখ টাকা বিতরণ করা হলেও তা অপ্রতুল। জেলার ৯ উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে
পড়েছে ৫৫০ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক ও ৪০ কিলোমিটার নদ-নদীর তীররক্ষা বাঁধ।
বন্ধ করে দেয়া হয়েছে দুই শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
জামালপুর সংবাদদাতা জানান, জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি
হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি বেড়েছে পাঁচ সেন্টিমিটার। গতকাল দুপুরে
বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে যমুনার পানি বিপদসীমার ১২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে
প্রবাহিত হয়েছে। বসতঘরে বন্যার পানি ঢুকে যাওয়ায় বিভিন্ন বাঁধ এবং
উঁচুস্থানে আশ্রয় নিয়েছেন দুর্গতরা। বন্যার কারণে জেলায় তিন শতাধিক
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষাকার্যক্রম। পানিবন্দী হয়ে
দুর্ভোগ পোহানো দুই লক্ষাধিক মানুষ ত্রাণের জন্য হাহাকার করছেন।
বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের জন্য নতুন করে ৩০০ মেট্রিক টন চাল ও ২০ লাখ ২০
হাজার টাকার শুকনো খাবার বরাদ্দ হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়।
এ দিকে জেলার ইসলামপুর উপজেলার চরপুঁটিমারী গ্রামে শাকিল ও রাকিব নামে দুই
শিশু এবং দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় আশিক নামে এক শিশু বন্যার পানিতে ডুবে মারা
গেছে। এ ছাড়া মাদারগঞ্জ উপজেলার আদারভিটা ইউনিয়নের পোড়াবাড়ি গ্রামে মজনু
(৩০) নামে একজন সাপের কামড়ে মারা গেছেন বলে স্থানীয় সূত্র জানায়।
নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, এবারের বন্যায় তিস্তার গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায়
জেলার ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের ছয়টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,
একটি মাধ্যমিক ও একটি কিন্ডারগার্টেন বন্যা ও ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়েছে।
দু’টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিলীন না হলেও দীর্ঘ দিন ধরে পানিতে তলিয়ে রয়েছে।
শিক্ষাকার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে ওই ইউনিয়নটিতে। নদীভাঙনে কয়েকটি
বিদ্যালয় বিলীন হয়েছে এবং পানি ওঠার কারণে কিছু বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, বন্যা ও ভাঙনে
টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের ছয়টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি উঠেছে। কিছু বিদ্যালয়
তিস্তায় বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো
ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিকল্প উপায়ে কিভাবে শিক্ষাকার্যক্রম চালানো যায় সে
বিষয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করা হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, জেলার বেশির ভাগ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির
উন্নতি হচ্ছে। তবে জেলার কয়েকটি উপজেলার কাঁচা-পাকা সড়ক মারাত্মকভাবে
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানি নামার সাথে সাথে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে।
বিভিন্ন স্থানে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।
এ দিকে গতকাল শুক্রবার সুনামগঞ্জে পাঁচ শতাধিক বন্যার্ত পরিবারের মধ্যে শুকনো খাবার ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘পদক্ষেপ’। সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নে বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় এসব ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাইজার মোহাম্মদ ফারাবী ত্রাণ বিতরণে অংশ নেন।
এ দিকে গতকাল শুক্রবার সুনামগঞ্জে পাঁচ শতাধিক বন্যার্ত পরিবারের মধ্যে শুকনো খাবার ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘পদক্ষেপ’। সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নে বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় এসব ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাইজার মোহাম্মদ ফারাবী ত্রাণ বিতরণে অংশ নেন।
রাজবাড়ী সংবাদদাতা জানান, বিআইডব্লিউটিএ এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের উদাসীনতায়
দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের নদীভাঙন পরিস্থিতি ভয়ানক আকার ধারণ করেছে। গত
বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে দৌলতদিয়ার ৪ নম্বর ঘাটটি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ওই এলাকায় ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে যায়। অল্প সময়ের মধ্যেই ৪ নম্বর ফেরিঘাটসংলগ্ন পাকা সড়কের বেশির ভাগ অংশ নদীতে বিলীন হয়। এতে ফেরিঘাটটি বন্ধ হয়ে যায়। গতকাল শুক্রবার সকালে পদ্মার তীব্র স্্েরাত পাড়ে আঘাত করায় ভাঙনের কারণে ৩ নম্বর ফেরিঘাটের তিনটি পকেটের মধ্যে দু’টি পকেট বন্ধ হয়ে যায়। অপর দু’টি ঘাটও হুমকির মুখে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ওই এলাকায় ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে যায়। অল্প সময়ের মধ্যেই ৪ নম্বর ফেরিঘাটসংলগ্ন পাকা সড়কের বেশির ভাগ অংশ নদীতে বিলীন হয়। এতে ফেরিঘাটটি বন্ধ হয়ে যায়। গতকাল শুক্রবার সকালে পদ্মার তীব্র স্্েরাত পাড়ে আঘাত করায় ভাঙনের কারণে ৩ নম্বর ফেরিঘাটের তিনটি পকেটের মধ্যে দু’টি পকেট বন্ধ হয়ে যায়। অপর দু’টি ঘাটও হুমকির মুখে রয়েছে।
অপর দিকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌ-রুটের ১৮টি ফেরির মধ্যে তীব্র স্রোতের কারণে
ছয়টি ফেরি চলতে পারছে না। আর ছোট ইউটিলিটি চারটি ফেরি বিকল হয়ে পাটুরিয়া
ভাসমান কারখানায় বসে আছে। সাঘাটা (গাইবান্ধা) সংবাদদাতা জানান, উপজেলায়
ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও আলাই নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি উন্নয়ন
বোর্ড সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি ২০.৭২
সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৯০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত
হচ্ছে। এতে সাঘাটা উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী
হয়ে পড়েছে। অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন। বন্যার্তরা বিশুদ্ধ পানি,
জ্বালানি, গোখাদ্য ও ওষুধপত্রের সঙ্কটে পড়েছে। সরকারিভাবে ত্রাণসহায়তা
প্রদান করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। হুমকির মুখে পড়েছে ভরতখালী
থেকে সাঘাটা পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। এ ছাড়াও গতকাল ভাঙ্গামোড়
কমিউনিটি কিনিক নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বন্যাকবলিত এলাকার ২০টি প্রাথমিক ও
মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ চরাঞ্চলের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
ইসলামপুর (জামালপুর) সংবাদদাতা জানান, ইসলামপুর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির
আরো অবনতি হওয়ায় ঢাকার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে।
ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা-ইসলামপুর মহাসড়ক ও ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রেল সড়কসহ শহরের
প্রতিটি সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। গতকাল আন্তঃনগর তিস্তা ও কমিউটার
ট্রেনের যাত্রী দুরমুঠ স্টেশনে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। পানিবৃদ্ধি অব্যাহত
থাকলে যেকোনো মুহূর্তে জেলা সদর ও ঢাকার সাথে ইসলামপুর উপজেলার রেল এবং সড়ক
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে। ইসলামপুর উপজেলা পরিষদেও বন্যার পানি প্রবেশ
করেছে।
সরিষাবাড়ী (জামালপুর) সংবাদদাতা জানান, সরিষাবাড়ী উপজেলার সার্বিক বন্যা
পরিস্থিতি মারাত্মক অবনতি হয়েছে। যমুনার পানি বিপদসীমার ৯৭ সেন্টিমিটারের
ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে উপজেলার আটটি ইউনিয়নের সাতটির প্রায় ৪০টি
গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় দেখা
দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যের অভাব। ছড়িয়ে পড়ছে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগ।
দুর্গত এলাকায় অর্ধ শতাধিক স্কুল, মাদরাসা বন্ধ হয়ে গেছে। পানিবন্দী
মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি বা বেসরকারি কোনো সংস্থা এখন
পর্যন্ত তাদের কোনো খোঁজখবর নেয়নি। এলাকায় কোনো ত্রাণসামগ্রীও পৌঁছায়নি।
দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) সংবাদদাতা জানান, দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভা ও কয়েকটি ইউনিয়নে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। তলিয়ে গেছে ৭০ ভাগ বাড়িঘর ও ফসল।
দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) সংবাদদাতা জানান, দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভা ও কয়েকটি ইউনিয়নে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। তলিয়ে গেছে ৭০ ভাগ বাড়িঘর ও ফসল।
গত বৃহস্পতিবার পৌরসভার জিল বাংলা সুগার মিলস
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র মনির পানির তোড়ে ভেসে
গেছে। সে পৌরসভার চরভবসুর সরকারপাড়া গ্রামের পলাশের পুত্র। ফায়ার সার্ভিস ও
স্থানীয় ডুবুরিরা এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিখোঁজ মনিরকে উদ্ধার করতে
পারেননি। উপজেলার প্রায় ৩০০ কিলোমিটার সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
দেওয়ানগঞ্জ-জামালপুর রেললাইন ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায়
খাদ্য ও গোখাদ্য, শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বেশির
ভাগ সড়কযোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
বেড়া (পাবনা) সংবাদদাতা জানান, উপজেলার ইউনিয়নের বিভিন্ন ইউনিয়নের শত শত
পরিবার এখন পানিবন্দী জীবনযাপন করছেন। নলকূপগুলো পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায়
দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সঙ্কট। অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন পেটের
পীড়ায়। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে মানুষ ঘর ছাড়ছেন। সরেজমিনে বন্যাক্রান্ত
গ্রামগুলো ঘুরে দেখা গেছে, হুরাসাগর, বড়াল ও যমুনার পানি বৃদ্ধি পেয়ে
উপজেলার চরাঞ্চলসহ হাটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়ন, কৈটলা ইউনিয়নের শত শত পরিবার
পানিবন্দী জীবন যাপন করছে। কৈটলা পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৭০ সেমি. ওপর দিয়ে
প্রবাহিত হচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো সাহায্য না পাওয়ায়
স্থানীয়দের মাঝে ােভ বিরাজ করছে।
সবচেয়ে তিগ্রস্ত হচ্ছেন তাঁতীরা। বন্যার কারণে তাঁত বন্ধ। কবে পানি শুকাবে
আর কবে কাজ শুরু হবে তার কোনো ঠিক নেই। এ দিকে ঈদের খুব বেশি দেরি নেই।
লুঙ্গি বুনতে না পারলে লোকসান গুনতে হবে। ফলে এসব তাঁত কারিগরদের চোখে
হতাশা বিরাজ করছে।
চৌহালী (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় চৌহালী উপজেলার প্রায় ১১০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের পঁচাত্তরটি গ্রামে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। নদীতে বিলীন হয়েছে চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। উপজেলার অন্তত সাড়ে ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বন্যার্তদের মাঝে এখনো পৌঁছেনি পর্যাপ্ত ত্রাণসহায়তা।
চৌহালী (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় চৌহালী উপজেলার প্রায় ১১০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের পঁচাত্তরটি গ্রামে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। নদীতে বিলীন হয়েছে চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। উপজেলার অন্তত সাড়ে ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বন্যার্তদের মাঝে এখনো পৌঁছেনি পর্যাপ্ত ত্রাণসহায়তা।
বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে ও শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১১০টি
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। বন্যায় পাকুটিয়া
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খাষদেলদারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,
রেহাইকাউলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (পূর্ব) ও চরমুরাদপুর সরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ দিকে উপজেলার খাষকাউলিয়া,
ঘোরজান, উমারপুর, বাঘুটিয়া, সদিয়া চাঁদপুর এবং স্থাল ইউপির প্রায় ৭৫টি
গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এ পর্যন্ত কোনো সরকারি-বেসরকারি
ত্রাণসহায়তা এলাকায় পৌঁছেনি বলেও অভিযোগ করেন তারা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী জানান, ত্রাণসহায়তার জন্য ৬০
মেট্রিক টন চাল ও ১ লাখ ২০ হাজার টাকার শুকনো খাবার বৃহস্পতিবার থেকে বিতরণ
শুরু হয়েছে। ফুলছড়ি (গাইবান্ধা) সংবাদদাতা জানান, উপজেলার সার্বিক বন্যা
পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বন্যা ও নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হাজার হাজার
মানুষ তাদের পরিবার-পরিজন, গবাদিপশু ও সংসারের মালামাল নিয়ে উঁচু স্থানে ও
বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে নদী ভাঙনে সবকিছু হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে
বসবাস করছেন। বন্যা দুর্গত এলাকায় খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও টয়লেটের তীব্র
সঙ্কট দেখা দিয়েছে। দুর্গত এলাকায় সরকারি ত্রাণসাহায্য পৌঁছতে শুরু করলেও
তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এ দিকে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ফজলুপুর ইউনিয়নের
পূর্ব খাটিয়ামারী গ্রামের ওয়াজেদ আলীর সাত মাসের শিশু উজ্জল মিয়ার খাট
থেকে পানিতে পড়ে মৃত্যু হয়েছে।
ফজলুপুর ইউনিয়নে গত এক সপ্তাহের নদী ভাঙনে ৩২০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে আকস্মিক নদী ভাঙনে ও তীব্র স্রোতে চন্দনস্বর গুচ্ছ
গ্রামের ১৪৫টি পরিবারের ঘরবাড়ি, আসবাবপত্রসহ মালামাল নদীতে ভেসে যায়।
নাগরপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা জানান, যমুনা ও ধলেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নাগরপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে অনেক রাস্তা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো এ পর্যন্ত কোনো ত্রাণসহায়তা পায়নি বলে এসব ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের সূত্রে জানা গেছে।
নাগরপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা জানান, যমুনা ও ধলেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নাগরপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে অনেক রাস্তা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো এ পর্যন্ত কোনো ত্রাণসহায়তা পায়নি বলে এসব ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের সূত্রে জানা গেছে।
বেকড়া আটগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মো: শওকত হোসেন বলেন, এখনো
সরকারিভাবে কোনো ত্রাণ আসেনি। দপ্তিয়র ইউপি চেয়ারম্যান এম ফিরোজ সিদ্দিকী
জানান, বন্যার পানিতে বিভিন্ন স্থানে রাস্তা ভেঙে উপজেলা সদরের সাথে তার
ইউনিয়নের যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ভাদ্রা ইউপি চেয়ারম্যান মো:
হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, তার ইউনিয়নের সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে
পড়েছে। গয়হাটা ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান আসকর বলেন, তার ইউনিয়নের ২
হাজার পরিবার বন্যাকবলিত হয়েছে। ভাড়রা ইউনিয়নে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার
পানিবন্দী রয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) পুলক
কান্তি চক্রবর্তী বলেন, যতদ্রুত সম্ভব বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছে দেয়া
হবে।
শিবচর (মাদারীপুর) সংবাদদাতা জানান, উপজেলায় পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার ৬০
সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুইটি ইউনিয়নের আড়াই শতাধিক ঘরবাড়ি ও
৩০০ হেক্টর জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকিতে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
বাজারসহ বহু ঘরবাড়ি। বন্ধ হয়ে গেছে চরের সব স্কুল। স্কুলগুলোতে
আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
চরের চার দিকে পানি থাকায় ভাঙনকবলিতরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আড়িয়ালখা
নদের ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করায় সন্ন্যাসীরচর ইউনিয়নের দুইটি ওয়ার্ডে
অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। গত কয়েক দিনে পদ্মা অস্বাভাবিক হারে
বৃদ্ধি পেয়ে চরজানাজাত, বন্দরখোলা, কাঁঠালবাড়িয়া ও মাদবরচরের কয়েক হাজার
মানুষ পানিবন্দী হয়ে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ
পানি ও খাবারের তীব্র সঙ্কট। এরই মাঝে বেড়েছে সাপের উপদ্রব। শিবচর উপজেলা
নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান আহমেদ বলেন, জরুরি ত্রাণ ও টাকা চাওয়া হয়েছে।
চরভদ্রাসন (ফরিদপুর) সংবাদদাতা জানান, উপজেলায় বন্যাপরিস্থিতি আরো অবনতি
হয়েছে। উপজেলায় প্রায় আড়াই হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পদ্মা নদী
পয়েন্টে বন্যার পানি বিপদসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে
ফরিদপুর পাউবো সূত্র জানায়। বানভাসীরা আশ্রয়ণ কেন্দ্র ও বেড়িবাঁধ সড়কে
আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া উপজেলার জনচলাচলের ২৪টি রাস্তা, ১০টি কালভার্ট, ১১টি
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানি ঢুকেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা সিদ্দিকা জানান, দুর্গত পরিবারগুলোর
ত্রাণসামগ্রী প্যাকেজ করা হচ্ছে আজকালের মধ্যেই তা বিরতন হবে বলে আশা
করছি। এ ছাড়া উপজেলা সদর ইউনিয়নের পদ্মা পাড় এলাকার বালিয়াডাঙ্গী গ্রাম,
ফাজেলখার ডাঙ্গী, হাজীডাঙ্গী, সেকেরডাঙ্গী, খালাসীডাঙ্গী, মাথাভাঙ্গা,
টিলারচর, এমপিডাঙ্গী গ্রামের প্রায় ৫০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যার
পানি বেড়িবাঁধের কোনো অংশে ভাঙতে পারলেই উপজেলা সদর এলাকা তলিয়ে যাবে বলে
স্থানীয়রা শঙ্কায় রয়েছেন।
0 comments:
Post a Comment