হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলা
সন্দেহভাজন দুই জঙ্গি চিকিৎসাধীন, বলছে পুলিশ !!
গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি নামের রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন দুই জঙ্গি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে আজ সোমবার মন্তব্য করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শহীদুল হক। তবে তিনি কারও নাম-পরিচয় প্রকাশ করেননি।
এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গুলশানের ঘটনায় আটক একজনকে গতকাল রোববার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর নাম জাকির হোসেন ওরফে শাওন। হাসপাতাল সূত্র বলেছে, তাঁকে হাতকড়া পরিয়ে আনা হয়।ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগের চিকিৎসক মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘রোববার রাতে শাওন নামের ছেলেটিকে পুলিশি পাহারায় আনা হয়। তিনি গুলশানের হামলায় জড়িত কি না, সে সম্পর্কে আমাদের জানা নেই। তাঁর গায়ে অসংখ্য স্প্লিন্টার আছে। কথা-বার্তাও অসংলগ্ন। কোনো কথার জবাব ঠিকমতো দিতে পারছেন না।’
জিম্মি সংকট অবসানের আগেই শনিবার ভোরের দিকে ওই রেস্তোরাঁর পেছন থেকে আনুমানিক ২০ বছর বয়সী এক তরুণকে ‘সন্দেহজনক আচরণের কারণে’ রক্তাক্ত অবস্থায় আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। তার পরিচয় কি, তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে কি না—সে তথ্য পুলিশ প্রকাশ করেনি।
গত শনিবার সেনা সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ‘অভিযানে ছয়জন সন্ত্রাসী নিহত ও একজন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ওই দিন এক অনুষ্ঠানে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। আর হামলাকারীদের মধ্যে ছয়জন নিহত হয়েছে, আটক করা গেছে একজনকে। তবে তার পরিচয় জানা যায়নি।
আজ সোমবার রাজারবাগ পুলিশ লাইন মিলনায়তনে এক শোকসভার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পুলিশের মহাপরিদর্শক শহীদুল হক বলেন, ‘গুলশানের ঘটনায় সন্দেহভাজন দুজনকে আটক করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শেষে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ ঘটনায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন।’
ওই সভাতেই ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, আটকদের একজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনিও তাঁর পরিচয় স্পষ্ট করেননি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কমপক্ষে পাঁচটি বিভাগে খোঁজ নিয়ে পুলিশি পাহারায় একজন ব্যক্তির হাসপাতালে ভর্তির খবর পাওয়া যায়। তাঁর নাম জাকির হোসেন ওরফে শাওন। তবে জাকিরের বাবা আব্দুস সাত্তার ও মাহমুদা বেগম দাবি করেছেন, তাঁদের ছেলে হলি আর্টিজানে বাবুর্চির সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। তিনি কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। আজ সকালে জাকিরের অভিভাবকেরা ছেলেকে খুঁজতে হোলি আর্টিজানের সামনে ছবি নিয়ে হাজির হয়েছিলেন।
মা-বাবার কাছে থাকা জাকিরের ছবি দেখে ঘটনাস্থলে থাকা সাংবাদিকেরা রক্তাক্ত অবস্থায় এক তরুণকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ে যাওয়ার ছবিটি দেখান। তাঁরা বলেন, হামলার পর থেকে জাকিরকে তাঁরা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তাঁর (শাওন) খোঁজে অভিভাবকেরা কয়েকবার গুলশান থানার পুলিশের কাছে গেছেন। পুলিশ ইউনাইটেড হাসপাতালে জাকিরকে খোঁজার কথা বলে। সেখানে গিয়েও তাঁরা ছেলেকে পাননি। রোববারও রাত দেড়টা পর্যন্ত তাঁরা গুলশান থানায় বসে ছিলেন। কিন্তু পুলিশ জাকিরের কোনো খোঁজ দিতে পারেননি।
জাকির হোসেনের মা মাহমুদা জানান, তাঁদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের নয়াপাড়ার গোদনাইল এলাকায়। গত বৃহস্পতিবার ইফতারের পরে ছেলে জাকির ফোন করেছিলেন। জানিয়েছিলেন ঈদের বোনাস পেয়েছেন। রোববার বাড়ি আসবেন। বাবা আবদুস সাত্তার বলেন, তিনি নারায়ণগঞ্জে মেঘনা ডিপোতে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। গত শনিবার টিভিতে রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার ঘটনা দেখেন। এরপর থেকেই ছেলের খোঁজ পাচ্ছেন না।
রেস্তোরাঁর হিসাবরক্ষণ বিভাগের ব্যবস্থাপক সাজেদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, জাকিরকে তাঁরা হাসপাতালে শনাক্ত করেছেন। তাঁকে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
বিকেলের দিকে এই প্রতিবেদকের সামনেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে ছেলেকে খুঁজে পান বাবা-মা। জাকিরের পরনে তখন কড়কড়ে নতুন লুঙ্গি। ছেলে ওই রাতের ঘটনা সম্পর্কে তাঁদের কিছু বলেছে কি না জানতে চাইলে কাঁদতে কাঁদতে মাহমুদা বলেন, ‘ছেলে বাপরে ভাই ডাকতেছে। সে বাঁচবে তো! এইভাবে নির্যাতন করে পুলিশ বড় বড় পুরস্কার পাবে সন্ত্রাসী ধরার জন্য।’
0 comments:
Post a Comment