advertisement

adverisement

your javascript ads here

Monday, 18 July 2016

‘চিন্তা করো না, আমরা মুসলিম কান্ট্রিতে আছি’!!

‘চিন্তা করো না, আমরা মুসলিম কান্ট্রিতে আছি’!!

 ‘চিন্তা করো না, আমরা মুসলিম কান্ট্রিতে আছি। আমরা ইসলামের জন্য আছি। আমরা ভালো আছি। আমরা আর দেশে ফিরবো না।’ দেশ থেকে পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে লাপাত্তা হওয়ার পর হঠাৎ একদিন ফোন করে বড় বোন ডা. হালিমাকে এ কথা বলেন নাইমা আক্তার নিলু। তিনি যশোরের সরকারি এমএম কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন।
নাইমা ও তার স্বামী ডা. রোকনুদ্দীন খন্দকার, দুই মেয়ে রেজোয়ানা রোকন ও রামিতা রোকন এবং রেজোয়ানার স্বামী সাদ কায়েস ওরফে শিশিরসহ সবই চলে গেছেন অজ্ঞাত স্থানে। পরিবার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ধারণা করছেন, তারা জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েছেন। এ কারণে দেশ ছেড়ে তারা মধ্যপ্রাচ্যের আইএস নিয়ন্ত্রিত কোনও দেশে চলে গেছেন।
ডা. রোকনুদ্দীন খন্দকার ও নাইমা আক্তার দম্পতি যে বাসায় থাকতেন সোমবার বিকেলে সেই বাসায় গিয়ে কথা হয় নাইমার বোন ডা. হালিমার সঙ্গে। তিনি জানান, গত বছরের ঈদুল ফিতরের আগে ১০ জুলাই তারা মালোশিয়ায় ঈদ করবে বলে চলে যায়। ঈদের পর আর তারা ফিরে আসেনি। পরে একদিন হঠাৎ নাইমা ফোন করে বলে, তারা একটি ‘মুসলিম কান্ট্রি’তে অবস্থান করছে এবং তারা আর দেশে ফিরবে না। ডা. হালিমা বলেন, নাইমাকে বারবার কোন দেশে অবস্থান করছে জানতে চাইলেও সে তা বলেনি।

সম্প্রতি ঢাকার গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারি ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় জড়িতরা বেশ কয়েক মাস ধরে নিখোঁজ ছিলো বলে তাদের পরিবারের সদস্যরা জানায়। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রথম দফা ১০ জন ও দ্বিতীয় দফায় ৭ জন নিখোঁজের তথ্য ও ছবি প্রকাশ করা হয়। এই সাত জনের পাঁচ সদস্যই ডা. রোকনুদ্দীনের পরিবারের সদস্য।
রোকনুদ্দীনের বাড়িস্বজনরা জানান, ঢাকা শিশু হাসপাতালের পেড্রিয়াটিক বিভাগের স্লিপিং ডিসঅর্ডারের চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন ডা. রোকনুদ্দীন খন্দকার। দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে তিনি শিশু হাসপাতালের চাকরিতে ইস্তফা দেন। আর তার স্ত্রী নাইমা আক্তার যশোরের সরকারি এমএম কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। দেশ ছাড়ার আগে তিনি বিদেশে ভ্রমণ করবেন বলে কলেজ থেকে ছুটি নিয়েছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকার কবি নজরুল সরকারি কলেজেও অধ্যাপনা করেছেন।
নাইমা আক্তারের বড় বোন ডা. হালিমা বলেন, খিলগাঁও চৌধুরীপাড়ার ৪১১/বি নম্বর পাঁচতলা ভবনটি তারা দুই বোন পৈত্রিক সূত্রে পেয়েছিলেন। নাইমা চলে যাওয়ার পর তিনি জানতে পারেন তাদের সম্পত্তিগুলো বিভিন্ন জনের নামে লিখে দিয়েছে। নাইমারা তৃতীয়তলার যে ফ্ল্যাটে থাকতেন সেই ফ্ল্যাটে এখন রোকনুদ্দীনের বড় ভাইয়ের দুই মেয়ে শিখা ও সীমা থাকে।
সরেজমিন ওই ভবনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভবনের নিচতলার ডান দিকের অংশে নির্ভানা হেলথ সেন্টারে চেম্বার করতেন ডা. রোকনুদ্দীন খন্দকার। ওই হেলথ সেন্টারের ম্যানেজার অলক জানান, ডা. রোকনুদ্দীন দেশের বাইরে চলে যাওয়ার আগে আবার ফিরবেন বলে তাদের জানিয়েছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও তারা ফেরেননি। ওই চেম্বারে বর্তমানে অপর একজন চিকিৎসক বসেন।
অলক জানান, চিকিৎসক পরিবার চলে যাওয়ার কয়েক মাস পর তারা জানতে পারেন, পুরো পরিবারটি জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত হয়ে গেছে।
এই চেম্বারেই বসতেন ডা. রোকনুদ্দীনমেয়ে ও জামাতা পড়তো নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে
জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ার পর দেশ ছেড়ে যাওয়া চিকিৎসক-অধ্যাপকের এই পরিবারের বড় মেয়ে রেজোয়ানা রোকন ও তার স্বামী সাদ কায়েস ওরফে শিশির দু’জনই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্য বিভাগে পড়তো। তারা ২০১৪ সালের মার্চে তারা নিজেরাই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। প্রথমে পরিবার মেনে না নিলেও পরে পারিবারিকভাবে তা মেনে নেওয়া হয়।
চিকিৎসক ওই পরিবারের এক স্বজন জানান, সাদ কায়েস ওরফে শিশিরের মুখে দাড়ি ছিলো। সে কিছুটা ধার্মিক ছিলো। তার বাড়ি শনির আখড়া এলাকার একটি কিন্ডার গার্টেনের পাশে। সেখানকার একটি ডেইরি ফার্মের মালিক তারা। সাদের বিস্তারিত ঠিকানা জানাতে পারেননি তিনি।
স্বজনরা জানান, চিকিৎসক-অধ্যাপক পরিবারের ছোট মেয়ে রামিতা রোকন ভিকারুন্নেসা নুন স্কুলের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী ছিলো। তবে পরীক্ষার আগেই সে বাবা-মা ও বোনের সঙ্গে দেশ ছেড়ে চলে যায়। ওই পরিবারের এক স্বজন জানান, তাদের মনে হয়েছে ডা. রোকনুদ্দীন ও তার স্ত্রী নাইমা আক্তার জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েছিলেন। তারা দুই মেয়েকে ভ্রমণের কথা বলে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখতে পারেন। দুই মেয়ে আধুনিক জীবন-যাপন করতো জানিয়ে ওই স্বজন বলেন, জঙ্গি কার্যক্রমে মেয়েরাও জড়িত হলে তারা অন্তত হিজাব পরে চলাফেরা করতো।
একই কথা বলেন, নির্ভানা হেলথ সেন্টারের ম্যানেজার অলকও। তিনি বলেন, ‘আমরা দুই বোনকে আধুনিক জীবন যাপন করতে দেখেছি।’
সব সম্পত্তি দিয়ে গেছে স্বজনদের
জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িত হয়ে দেশ ছাড়ার আগে সব সম্পত্তি স্বজনদের দিয়ে গেছে চিকিৎসক-অধ্যাপকের এই পরিবার। নাইমা আক্তারের বোন ডা. হালিমা জানান, দেশ ছাড়ার পর আমরা জানতে পারি সম্পত্তি সব রোকনের ভাই ও ভাইয়ের মেয়েদের নামে লিখে দিয়ে গেছে। হেলাল নামে যে গাড়িচালক ছিলো তাকে প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা দিতে বলে গেছে। সে বাসার পাঁচতলার ছাদের ঘরে থাকে। আর নিজের ফ্ল্যাটটি দিয়ে গেছে রোকনের দুই ভাতিজি শিখা ও সীমাকে। এদের একজন বিধবা বলেও জানান তিনি। রোকনের যে গাড়িটি ছিলো তা এখন ভাই অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজুর রহমান চালান।
ডা. হালিমা জানান, সম্পত্তি ভাগাভাগি নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য চলছিলো। নাইমা ফোন করলে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সে ‘সব দিয়ে দিয়েছে’ বলেও জানায়।

0 comments:

Post a Comment