advertisement

adverisement

your javascript ads here

Sunday, 24 July 2016

বিকাশে স্কুলছাত্রের ১৫ টাকা ও লিপির চোখে জল !!

সমকালের খবরে ছুঁয়েছে হৃদয়

বিকাশে স্কুলছাত্রের ১৫ টাকা ও লিপির চোখে জল

সমকাল প্রতিবেদক
কিশোরগঞ্জের একটি বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ে মাহমুদুল হাসান। টিফিনের জন্য সে প্রতিদিন বাবার কাছ থেকে পায় ১৫ টাকা। তাতেই তার টিফিন হয়ে যায়। গতকাল শনিবার সমকালের পাতায় চোখ রেখে 'হার না মানা লিপি আক্তারের' জীবনের নিষ্ঠুর গল্প ছুঁয়ে যায় এই কিশোরের হৃদয়। দ্রুত একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে বিকাশ নম্বরে পাঠিয়ে দেয় তার হাতে থাকা টিফিনের ১৫ টাকা। পরে সমকাল অফিসে ফোন করে বলে, 'আগামী পাঁচদিন আমি টিফিন করব না। জমানো টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠাব লিপির চিকিৎসা তহবিলে।'

সমকালের শেষ পাতায় গতকাল 'হার না মানা লিপি আক্তার-গল্পটা নিষ্ঠুর, স্বপ্ন এখনও অবিচল' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাতে সাড়া মেলে দেশজুড়ে। বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ প্রতিবেদকের কাছে লিপির চিকিৎসার অগ্রগতি সম্পর্কে ফোনে জানতে চান। আবার অনেকেই পত্রিকায় প্রকাশিত বিকাশ নম্বরে বিভিন্ন অঙ্কের অনুদান পাঠানোর কথা জানান। কক্সবাজারের চকরিয়া থেকে ফোন করেন এক পান দোকানি। তিনি জানান, তার হাতে এই মুহূর্তে টাকা নেই। দুই দিন ব্যবসা করে যা রোজগার করবেন তাই ক্যান্সার আক্রান্ত লিপির চিকিৎসার জন্য পাঠাবেন।

এদিকে গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে ভারত থেকে দেশে ফেরেন লিপি আক্তার। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ সময় তাকে অভ্যর্থনা জানান তার চিকিৎসা তহবিল গঠনে শ্রম দেওয়া বেশ কয়েকজন তরুণ-তরুণী। মায়ের বুকে ফিরে লিপি অশ্রুকাতর হয়ে পড়েন। মাকে বুকে জড়িয়ে হু হু করে কেঁদে ওঠেন।

পৃথিবীতে মা ছাড়া লিপির কেউ নেই। মাকে নিয়ে স্বপ্নপূরণে যখন সংগ্রামী পথ পাড়ি দিচ্ছিলেন, তখনই আক্রান্ত হন কোলন ক্যান্সারে। চিকিৎসা করানোর মতো সাধ্য ছিল না; এ অবস্থায় এগিয়ে আসেন ঢাকার সাংবাদিক জয়নাল আবেদীন। তার নেতৃত্বে একদল তরুণ-তরুণী দেশে-বিদেশে প্রচার চালিয়ে লিপির চিকিৎসা তহবিল গঠন করেন। চরম অনিশ্চয়তা মাথায় নিয়ে ২১ মে ভারতে যান লিপি। দীর্ঘ দুই মাস চিকিৎসার পর কিছুটা স্বস্তি নিয়ে দেশে ফিরেছেন তিনি।

সমকালের কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে লিপি মোবাইল ফোনে বলেন, 'মানুষের ভালোবাসা ও সহযোগিতার কারণেই আজ বেঁচে এসেছি; মায়ের কোলে মাথা রাখতে পেরেছি। আজকে যখন শুনছি, একজন শিক্ষার্থী টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে আমার জন্য বিকাশ করেছে, তাতেই আমার খুব কান্না পাচ্ছে, তাদের এমন ভালোবাসার প্রতিদান আমি কীভাবে দিব।' শেষের কথাগুলো বলেই কাঁদতে থাকেন লিপি আক্তার।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দুইবার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে লিপির শরীর থেকে ক্যান্সারের জীবাণু অপসারণ করা হয়েছে। তবে এখনই লিপিকে সম্পূর্ণ নিরাপদ বলা যাবে না। চিকিৎসার প্রথম অংশ শেষ হয়েছে। শিগগির শুরু হবে কেমোথেরাপি। ভারতের ভেলোরের ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজ (সিএমসি) হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক জানিয়েছেন, লিপির শরীরে আটটি কেমোথেরাপি দিতে হবে। এর জন্য খরচ হবে আনুমানিক চার লাখ টাকা।

জয়নাল আবেদীন সমকালকে বলেন, 'লিপি সব সময় মাকে সুখী দেখতে চেয়েছিলেন। নিজের জীবন নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যেও মাকে নিয়ে সারাক্ষণ দুশ্চিন্তা করতেন। চিকিৎসা শেষে তিনি আবার মায়ের বুকে ফিরেছেন। তাতেই আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ।'

তিনি জানান, চার দিন পর লিপির প্রথম কেমোথেরাপি দেওয়া হবে। মোট আটটি কেমো দিতে খরচ হবে প্রায় তিন লাখ টাকা। অন্যান্য ওষুধপথ্য মিলিয়ে আরও এক লাখ টাকা ব্যয় হবে। সেই টাকার ব্যবস্থা এখনও হয়নি। দেশের বড় কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলে খুব সহজেই লিপির চিকিৎসাভার বহন করা যাবে।

লিপির জন্য যে কোনো অঙ্কের অনুদান পাঠানোর ব্যাংক হিসাব নম্বর_ জয়নাল আবেদীন, সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর ২০৫০২৫২০২০২৫৯১৪১৮, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, বারইয়ারহাট শাখা, মিরসরাই, চট্টগ্রাম। এ ছাড়া ০১৬৮২৭৬২০৪৪, ০১৮১৪৩১৮৫৩২ বিকাশ নম্বরের অনুদান পাঠানো যাবে।

Related Posts:

0 comments:

Post a Comment