advertisement

adverisement

your javascript ads here

Wednesday, 27 July 2016

আটক রাকিবুল হাসান ঢামেক হাসপাতালে !!!

সমকাল প্রতিবেদক, ঢাকা ও বগুড়া ব্যুরো
রাজধানীর কল্যাণপুরে আস্তানায় মূল অভিযানের আগেই ভবন থেকে লাফিয়ে পালাতে চেয়েছিল জঙ্গি রাকিবুল হাসান ওরফে রিগেন। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে গুলি করে ধরে ফেলে। এ হাসানই এখন কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায়

নিহত জঙ্গিদের বিষয়ে এবং তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে পুলিশের কাছে বড় 'তথ্যভাণ্ডার'। পুলিশ পাহারায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রেখে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তার কাছ থেকে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জঙ্গি হাসান জানিয়েছে, তার লক্ষ্য ছিল সিরিয়ায় গিয়ে যুদ্ধ করার। বগুড়ার এ তরুণ এক বছর আগে থেকে নিখোঁজ ছিল। তালিকাভুক্ত এই হাসানকে গ্রেফতারের জন্য হন্যে হয়ে খুঁজছিল পুলিশ। পুলিশের খাতায় এ জঙ্গির পুরো নাম রাকিবুল হাসান ওরফে রিগেন। পুলিশের হাতে আটকের পর সোমবার রাত ২টার দিকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তির সময় হাসানও তার নাম ঠিকভাবেই বলেছিল। পায়ে গুলির চিহ্ন ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন থাকলেও কথা বলছিল অনেকটা স্পষ্টভাবেই। কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় সে বাবুর্চির কাজ করে জানালেও পরে আবার জানায়, ওই মেসে সে ছাত্র হিসেবে ছিল।

হাসপাতালে দেওয়া হাসানের তথ্য নিয়ে বগুড়া শহরের জামিলনগর এলাকায় তাদের বাড়ির সন্ধান পাওয়া যায়। সেখানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ তার মা রোকেয়া আকতারকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তিনি বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্স। ২০১২ সালে হাসানের বাবা রেজাউল করিম মারা যান।

রোকেয়া আকতার জানান, হাসান ২০১৫ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর বগুড়ায় 'রেটিনা কোচিং সেন্টার'-এ মেডিকেল কোচিংয়ে ভর্তি হয়েছিল। ওই কোচিং সেন্টারে যাওয়ার কথা বলে ২০১৫ সালের ২৬ জুলাই সকাল সাড়ে ৭টার দিকে হাসান বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। তাকে খুঁজে না পাওয়ায় পরের দিন তিনি বগুড়া সদর থানায় জিডি করেছিলেন। এর পর থেকে ছেলের সঙ্গে তার আর যোগাযোগ হয়নি।

অবশ্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হাসান পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছিল, ছয় মাস ধরে সে তার মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে না। তবে কল্যাণপুরের বাসাটিতে সে এক মাস ধরে ছিল। সেখানে রবিন, অভি, আতিক, সোহান, ইমরান, তাপস, ইকবাল ও সাবি্বরসহ ১০ ছিল। তারাও সবাই ছাত্র।

স্থানীয় লোকজন জানান, বগুড়ায় শিবির নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান রেটিনায় কোচিং করতে গিয়েই মূলত হাসান জঙ্গিপনায় জড়ায়। এ ছাড়া আজিজুল হক কলেজ সংলগ্ন জামিলনগর এলাকাটিও জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত হিসেবে পরিচিত।

কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে থাকা পুলিশের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, রাত সাড়ে ১২টার পর হাসানসহ দু'জন ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে পালানোর চেষ্টা করে। তখন পুলিশ গুলি চালালে সে পড়ে যায়। পুলিশ তাকে ধরতে পারলেও সম্ভবত অন্যজন পালিয়ে গেছে।

পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, মূলত হাসানের কাছ থেকেই জঙ্গি আস্তানায় কয়টি কক্ষ, কোন কক্ষে কে থাকে, সে বিষয়ে বিবরণ নেওয়া হয়। আস্তানায় মজুদ অস্ত্রশস্ত্রের বিষয়েও ধারণা নেওয়া হয়। সে নিশ্চিত করে, জঙ্গি মেসে তারা মোট ১১ জন ছিল। দু'জন বেরুতে পারলেও ভেতরে আরও ৯ জন অস্ত্র নিয়ে অবস্থান করছে। সব কিছু বিশ্লেষণ করে অপারেশন স্টর্ম-২৬-এর পরিকল্পনা করা হয়।

হাসপাতালে হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন ডিবি পুলিশের এমন এক কর্মকর্তা বলেন, শুরুতে হাসান তার পরিচয় লুকাতে চেয়েছিল। কখনও সে নিজেকে ছাত্র বলে দাবি করে। আবার পড়ালেখা করে না বলেও জানায়। সিরিয়া গিয়ে জঙ্গিদের সঙ্গে মিলে যুদ্ধ করার ইচ্ছার কথাও সে জানায়। একটু পরই চুপ হয়ে যায়। সে পুরোপুরি সুস্থ হলে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

বগুড়ার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, কল্যাণপুর থেকে আটক হাসানই বগুড়ার নিখোঁজ রাকিবুল হাসান। সে বগুড়ার তালিকাভুক্ত জঙ্গি। তাকে গ্রেফতারে বেশ কয়েকটি অভিযানও চালানো হয়েছে।

বগুড়া পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, নিখোঁজ হওয়ার আগে হাসানের বাড়িতে জঙ্গিদের আনাগোনা ছিল। সেখানে নিয়মিত বৈঠক হতো। প্রায় দুই মাস আগে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া থেকে মোহাইমিনুল শিহাব নামে তার এক সহযোগীকে গ্রেফতারের পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হাসানের জঙ্গি সম্পৃক্ততার কথা জানতে পারে। সে সময় জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গি শিহাব পুলিশকে জানিয়েছিল, হাসানের বাড়িতে তারা নিয়মিত বৈঠকে করত। ওই বৈঠকগুলোতে মাসুদ রানা নামে বগুড়ার আদমদীঘি এলাকার অপর জঙ্গিও উপস্থিত থাকত। এ মাসুদ রানা ঢাকার গাবতলীতে পুলিশের এএসআই ইব্রাহিম হত্যা মামলার অন্যতম আসামি।

গতকাল হাসানের মা রোকেয়া আকতার দাবি করেন, তার ছেলে কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নয়। ছেলে জঙ্গি দলের সদস্যও নয়। সে খুব ভদ্র ও শান্ত ছিল। নিখোঁজের আগে নিয়মিত নামাজ পড়ত। ইচ্ছে ছিল ছেলেকে চিকিৎসক বানাবেন।

হাসানের অপর এক স্বজন জানান, এক ভাই এক বোনের মধ্যে হাসান ছোট। তার বোন তানিয়া আকতারের বিয়ে হয়েছে। তিনি বগুড়া সরকারি শাহ সুলতান কলেজে অধ্যয়নরত। ২০১৫ সালে এই কলেজ থেকেই হাসান উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে।

হাসানের কয়েক প্রতিবেশী জানান, নিখোঁজ হওয়ার আগে হাসান বাড়ির বাইরে তেমন বের হতো না। রেজা নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, শুনেছি বছরখানেক আগে মায়ের সঙ্গে রাগারাগি করে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে হাসান।

বগুড়া সদর থানার ওসি আবুল বাসার জানান, কিছু তথ্য জানার জন্য রাকিবুল হাসান রিগেনের মাকে থানায় নেওয়া হয়েছিল। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

বগুড়ায় রেটিনা কোচিং ও ফোকাস কোচিং সেন্টারের তিনটি শাখায় হামলা, ভাংচুর ও অগি্নসংযোগ করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে শহরের সূত্রাপুর এলাকার রিয়াজ কাজী লেনে রেটিনা ও ফোকাস কোচিংয়ের দুটি শাখায় হামলা ও অগি্নসংযোগ করা হয়। সোয়া ৯টার দিকে শহরের আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠ সংলগ্ন জলেশ্বরীতলা এলাকায় ফোকাস কোচিং সেন্টারের একটি শাখায় হামলা, ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। কে বা কারা হামলা চালিয়েছে, তা জানা যায়নি।

বগুড়া শহর ফাঁড়ির উপপরিদর্শক ফজলে এলাহী রাত সাড়ে ৯টার দিকে বলেন, ছাত্রশিবির নিয়ন্ত্রিত বগুড়ায় রেটিনা ফোকাস কোচিং সেন্টারের তিনটি শাখায় হামলা ও ভাংচুর করেছে একদল বিক্ষুব্ধ যুবক। পুলিশ ঘটনাস্থলে পেঁৗছার আগেই তারা ভাংচুর-অগি্নসংযোগ চালিয়ে সটকে পড়ে। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন

0 comments:

Post a Comment