advertisement

adverisement

your javascript ads here

Wednesday, 27 July 2016

যাবেন কোথায় ব্যাচেলররা !!!

যাবেন কোথায় ব্যাচেলররা !!!

মিরপুরের পল্লবীতে ব্যাচেলরদের বাড়ি ভাড়া দিতে নিষেধ করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ। এই নির্দেশের পর অনেক বাড়িওয়ালাই বাড়ি থেকে মেস উঠিয়ে দিচ্ছেন। গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর শুধু মিরপুর নয়, সারাদেশেই মেস ভাড়ায় আগের চেয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। জঙ্গি কার্যক্রমে মেসবাড়ি ব্যবহার হচ্ছে, হামলাকারীরা ছিল মেসবাসী- এসব তথ্য সামনে আসায় মালিকদের বাড়তি সতর্কতা অমূলক নয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, হাজার হাজার ব্যাচেলর যাবেন কোথায়? চাকরি বা পড়াশোনার জন্য যারা শহরে আসেন, তারা থাকবেন কোথায়?

পরপর দুটি জঙ্গি হামলার পর নিরাপত্তার বিষয়ে সবাই উদ্বিগ্ন। হামলাকারীদের যেসব আস্তানার সন্ধান পাওয়া গেছে, তার সবই ছিল মেসবাড়ি। পুলিশ জানায়, জঙ্গিরা ছাত্র পরিচয়ে মেস ভাড়া নিয়ে চালায় জঙ্গি কার্যক্রম। সর্বশেষ কয়েক দিনের অভিযানে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, শেওড়াপাড়া, কিশোরগঞ্জ ও ঝিনাইদহে জঙ্গিদের মেসের সন্ধান পাওয়া গেছে। গুলশান ও শোলাকিয়ার হামলাকারীরা সেখানে থেকেই হামলার ছক কষেছিল বলে গোয়েন্দাদের ধারণা।

পুলিশের নির্দেশনা অনুযায়ী মালিকরা জঙ্গিদের বাড়ি ভাড়া দেওয়ার সময় ভাড়াটিয়ার তথ্য রাখেননি। এতে বিপাকে পড়েছেন তারা। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় জঙ্গিদের ভাড়া দেওয়া বাড়ির মালিক নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী উপাচার্য অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহসানসহ গ্রেফতার হয়েছেন তিনজন। শেওড়াপাড়ায় জঙ্গিদের মেসবাড়ির মালিক নূরুল ইসলামও গ্রেফতার হয়েছেন। ঝিনাইদহে জঙ্গিদের মেস মালিকসহ পাঁচজন এখনও 'নিখোঁজ'। ব্যাচেলরদের ভাড়া দিয়ে বিপদে পড়ায় মালিকরাও আর মেস ভাড়া দিতে আগ্রহী নন। মিরপুরের বেনারসিপল্লী এলাকার বাড়ির মালিক অনিম ইসলাম বলেন, 'ভাড়াটিয়ার কারণে কে শুধু শুধু বিপদে পড়তে চায়? মেস ভাড়া দিলে বেশি টাকা পাওয়া যায়, এটা সত্যি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে কেউ ফ্যামিলি ছাড়া ভাড়া দিতে চান না।'

'বাড়ির মালিকদের সতর্ক হওয়া সঙ্গত। কিন্তু ব্যাচেলররা কোথায় যাবেন?' এমন প্রশ্ন মিরপুর বাঙলা কলেজের আবীর নামের এক শিক্ষার্থীর। তিনি জানান, কলেজসংলগ্ন এক বাড়ির নিচতলার দুটি কক্ষে আট হাজার টাকা ভাড়ায় তারা চার বন্ধু থাকেন। আগস্টে বাড়ি ছেড়ে দিতে মালিক নোটিশ দিয়েছেন। আবীর বলেন, 'ফ্যামিলি ভাড়া দিলে ওই দুই রুমে পাঁচ হাজার টাকা ভাড়াতেও ভাড়াটিয়া পাওয়া যাবে না। বেশি ভাড়া দিয়েও আমরা থাকতে পারছি না। কলেজের আশপাশে বাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না। দূরে থাকলে পড়াশোনায় ক্ষতি হয়, টিউশনিও পাওয়া যায় না।'

মেসবাড়ি উচ্ছেদের কারণে ব্যাচেলরদের সমস্যা হবে-  স্থানীয় ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহও তা মানলেন। কিন্তু তার দাবি, মিরপুরকে জঙ্গিমুক্ত রাখতে আর কোনো উপায় নেই। সবার নিরাপত্তার স্বার্থেই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি সমকালকে বলেন, 'শেওড়াপাড়ার যে বাসায় জঙ্গিদের আস্তানা ছিল, তাতে বাঙলা কলেজের ছাত্ররাই থাকত।' মিরপুরের হাজার হাজার ছাত্র ও চাকরিজীবী ব্যাচেলররা কোথায় যাবেন? এমন প্রশ্নে এমপি বলেন, 'তাদের ফ্যামিলি নিয়ে থাকতে হবে। না হলে মিরপুরে তাদের পরিচিত কোনো ফ্যামিলি থাকলে তাদের সঙ্গে থাকতে হবে।' যাদের পরিচিত বা আত্মীয়স্বজন নেই, তাদের কী হবে? তারা মিরপুর থাকতে পারবেন না? সেই পথও বলে দিয়েছেন এমপি। তিনি বলেন, 'যার পরিচিত কেউ নেই, সে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে আমার কাছে আসবে। ভালো মনে করলে থাকতে পারবে। আমাকে না পেলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর কিংবা স্থানীয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কাছে যাবে। যদি তারা খোঁজ-খবর করার পর দেখেন কোনো সমস্যা নেই, তাহলেই মেস দেওয়া হবে।' গতকাল রোববার সরেজমিন রাজধানীর জিগাতলা, কাঁঠালবাগান, এলিফ্যান্ট রোড এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাস্তায় অনেক 'টু-লেট' ঝুললেও ব্যাচেলরদের জন্য তা প্রযোজ্য নয়। জিগাতলার শেখ নাজিমুদ্দিন লেনের ঋষিপাড়ার ৮৬/এ নম্বর বাসায় গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে মেস ভাড়া রয়েছে। কিন্তু আগামী মাস থেকে ফ্যামিলি ভাড়া দেওয়া হবে। বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক জানান, মেসে অনেক সমস্যা। তাই এখন থেকে ফ্যামিলি ভাড়া দেওয়া হবে। ওই বাড়ির মেস সদস্যরা জানান, জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার পরও মালিক তাদের রাখতে রাজি নন।

তবে সবচেয়ে বিপাকে আছে উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্ররা। তাদের অধিকাংশের বয়স এখনও ১৮ হয়নি। তাই জাতীয় পরিচয় নেই। সে কারণে তারা বাড়ি ভাড়া পাচ্ছে না। তাদেরই একজন প্রীতম। চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় ময়মনসিংহের একটি বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে। ঢাকা কলেজে এইচএসসি পড়ছে। ১২ জুলাই ক্লাস শুরু হয়েছে। এলিফ্যান্ট রোডের একটি মেসে সে এলাকার পরিচিতদের সঙ্গে উঠেছে। বাড়ির মালিক জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি চেয়েছেন। তা না থাকায় কলেজের পরিচয় দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাড়িওয়ালা তা নেয়নি। প্রীতম জানান, কেয়ারটেকার রোজ জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য তাগিদ দিচ্ছে। নয়তো বাসা ছাড়তে হবে।

শুধু নতুন করে মেস ভাড়ার ক্ষেত্রেই নয়, যারা আগে থেকে মেসে আছেন, তাদের জন্যও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। কাঁঠালবাগানের ফ্রি স্কুলের ২৫/২ নম্বর বাসায় প্রায় পাঁচ বছর ধরে মেস করে বাস করছেন শাকিল মো. খায়রুল আলম ও তার কয়েকজন বন্ধু। বেসরকারি একটি টেলিভিশনের এই কর্মকর্তা জানান, গত সপ্তাহে মালিক ভাড়াটিয়া তথ্য ফরম পাঠিয়েছেন। জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবিও দিতে হয়েছে। আগে এগুলো ছিল না। থানা থেকে শুধু মেসবাড়ির তথ্যই নেওয়া হচ্ছে। কোনো ফ্যামিলি বাসায় ফরম পাঠানো হয়নি। তার প্রশ্ন, শুধু মেসকেই কেন সন্দেহের চোখে দেখা হবে। বাড়ির মালিক সিদ্দিকুর রহমান জানান, থানা থেকে মেস ও মেস সদস্যের তথ্য চাওয়া হয়েছে।

যারা সপরিবারে বসবাস করেন, তাদের তথ্যও নেওয়া হচ্ছে কি-না তা জানতে কলাবাগান থানায় যোগাযোগ করা হলেও দায়িত্বশীল কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) মাসুদুর রহমান সমকালকে বলেন, 'শুধু মেস নয়, সব ভাড়াটিয়ার তথ্যই পুলিশ সংগ্রহ করছে। সবাইকে তথ্য দিতে হবে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। কেউ মিথ্যা তথ্য দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মেস ভাড়া দিতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু ভাড়াটিয়াদের তথ্য নিতে হবে।' জানা যায়, ডিএমপি এরই মধ্যে ২২ লাখ ভাড়াটিয়ার তথ্য সংগ্রহ করছে। তাদের মধ্যে কতজন মেসের ভাড়াটিয়া, তা এখনও জানা যায়নি।

'মেস সংঘ' নামে মেসবাসীর একটি সংগঠন রয়েছে। সংগঠনটির দাবি, তারা গোটা ঢাকার সব মেসবাসীর প্রতিনিধি। এর মহাসচিব আয়াতুল্লাহ আকতার সমকালকে বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে মেসের সদস্যের কেন, সবারই তথ্য পুলিশের কাছে থাকা উচিত। গুটিকয় জঙ্গির অপরাধের দায় লাখ লাখ মেস সদস্যের ওপর দেওয়া উচিত নয়। কারণ, জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে আমলা, পুলিশ তারাও একদিন মেসে থেকেই পড়াশোনা করেছেন। মেস উচ্ছেদ করা হলে তা হবে অমানবিক।

Related Posts:

0 comments:

Post a Comment