""মেঘবতীর অপেক্ষায়""
ফ্রেমের সাথে স-জোড়ে ধাক্কা
খাচ্ছে বার বার। আমি বিছানায়
শুয়েছিলাম, ঘুমানোর প্রচন্ড রকমের
চেষ্টা করছিলাম। বিছানা থেকে
ওঠে পাশের টেবিল থেকে চশমাটা
পড়ে জানলাটা লাগানোর উদ্দেশ্যে
হাত বাড়ালাম। কিন্তু সেই মূহুর্তে
আমার চোখে কি যেন একটা ভেসে
উঠল ।
..
জানালার ফাক দিয়ে তা স্পষ্ট বুঝা
যাচ্ছিল না। চোখের কালো ফ্রেমের
চশমাটা শরিরের টি -শার্ট এর সাথে
মুছে তা আবার চোখে দিলাম। একটা
মেয়ে বৃষ্টির তালে তালে তার হাত-
পা দুলাচ্ছে, আর আপন মনে ভিজছে। এই
যেন কোন সাধারণ মেয়ে নয়, এই যেন
এক মেঘ রাজ্যের মেঘবতী।
..
বাইরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির পানির
টুপ-টাপ শব্দটা ইয়ার ফোনের মত কানে
এসে বাজছে। এই শব্দের সাথে তাল
মিলিয়ে মেঘবতী নৃত্য দিচ্ছে। আবার
তার কাধে পরিহিত সাদা বর্নের
ওরনাটা কিছুক্ষণ পর পর কোমরের সাথে
গিট দিচ্ছে যাতে এটা না ছুটে যায়
আর তার নাচেও যেন কোন রকম বিঘ্ন
না ঘটে।
..
চোখে একটা পাতলা ফ্রেমের চশমাও
আছে, তা একটু পর পর ঘোলা হয়ে যাচ্ছে
আবার পরিষ্কার করছে, আবার ঘোলা
হচ্ছে আবার পরিষ্কার করছে। পায়ে
একজুড়া নূপুর। তার পায়ের নৃত্য দেওয়ার
সাথে সাথে নূপুর জুড়াও এক অদ্ভুত শব্দে
নেচে ওঠছে । আমি চুপটি মেরে দেখে
যাচ্ছি আর মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি।
..
আবার চারপাশে আড়চোখে এদিকওদিক
কি যেন দেখছে। কি যানি কি
দেখছে আমার জানা নাই । কিন্তু আমি
যে তাকে দেখছি মেঘবতী মনে হয় তা
দেখেনি। গন্ধরাজ ফুলের গন্ধে আর
মেঘবতী অপরূপ নৃত্য এই যেন সর্গের এক
কোণে বসে আছি আমি। মাঝে মাঝে
তার কপালের চুল গুলে চোখের সামনে
পরছে তা আলতো করে সরিয়ে নিচ্ছে।
..
হঠাৎ মেঘবতীর চোখ জোড়া আমার
চোখের শেষ প্রান্তে এসে ধাক্কা
খায়। না এবার মনে হয় মেঘবতী
আমাকে দেখে ফেলেছে। মেঘবতী
বুঝে ফেলল আড়াল থেকে তার
গতিবিধি কেউ একজন দেখছে। আস্তে
আস্তে বৃষ্টি কমে গেল, মেঘবতীকেআর
কোথাও দেখা গেল না , কোথায় যেন
উধাও হয়ে গেল। কিন্তু গন্ধরাজ ফুল
গেছের নিচে তার পায়ের ছাপ স্পষ্ট
দেখতে পাচ্ছি।
..
শুনেছি মেঘবতী নাকি মেঘের দেশে
থাকে। কিন্তু এই মেয়ে বাস্তবে
মেঘবতী না হলেও আমার কাছে সে
মেঘবতী লাগে। না আবার সত্যি সত্যি
মেঘবতী হতে পারে কারন বৃষ্টি কমার
সাথে সাথে কোথায় যে উধাও হয়ে
গেল।
যাই থাকুক না কেন ভালোই লাগছিল
তাকে।
তার নূপুর এর শব্দ এখনো আমার কানে
বাজছে।
..
ধ্যাত কি ভাবছি আমি এইসব ( নিজেই
নিজেকে প্রশ্ন করলাম) । জানলাটা
লাগিয়ে দিলাম। এভাবেই প্রায়
অনেক দিন কেটে গেল। বৃষ্টি ও হয় না,
আর মেঘবতী সত্যি সত্যি আছে কিনা
তাও জানা হল না। তবে তার পায়ের
নূপুরের টুংটাং শব্দ এখনো আমার
কানে বাজে। হঠাৎ একদিন ঘুম থেকে
ওঠে দেখি আকাশের চারপাশটা
মেঘাচ্ছন্ন।
..
বুঝতে পারলাম আজ মনে হয় বৃষ্টি
নামবে। ভাবতেই আনন্দ লাগছে। আমি
আগেভাগেই সেই স্থানে গিয়ে একটা
বড় কাঠাল গাছের আড়ালে দাড়িয়ে
রইলাম। যেন মেঘবতীকে খুব কাছ থেকে
দেখা যায়।
..
চারদিক একেবারেই অন্ধকার হয়ে
গেছে। বৃষ্টির খুব বড় বড় ফোটা কাঠাল
গাছ ভেদ করে আমার শরিরে এসে
ছিটকে পরছে। আমার চশমাটা বার-
বারই ঘোলা হয়ে যাচ্ছে, বার বার
মুচছি, আবার ঘোলা হয় আবার মুছি।
হঠাৎই নূপুরধ্বনি মত শুনতে পেলাম।
..
বুঝতে পারছি মেঘবতীর এইখানে
উপস্থিত খুবই সন্নিকটে । সে বুঝি এই
এসে পড়ল। বৃষ্টি আস্তে আস্তে খুব
বাড়তে থাকল, সাথে বৃষ্টির শব্দও।
মেঘবতী এসেই গন্ধরাজ ফুলের গাছ
থেকে একটা ফুল ছিরে তার কানে
গুজে দিল। আমি একটু একটু ভয় পাচ্ছি ।
কিন্তু তার কান্ড কারখানা দেখতে খুব
ভালো লাগছে ।
..
কিন্তু মেঘবতী বুঝতে পারল আমি
তাকে দেখছি । মেঘবতী আমাকে
ডাক দিয়ে বলল।
-- আপনি দাড়িয়ে দাড়িয়ে কি
দেখছেন? (মেঘবতী)
-- আপনাকে। ( আমি)
-- কেন??
-- দেখতে ভালো লাগে তাই।
..
তারপর অনেকক্ষন নীরবতা। নীরবতা
কাটিয়ে আমিই তাকে বললাম।
..
-- আচ্ছা আপনি কি মেঘের রাজ্যে
থাকেন?
-- হি, হি, হি। না তো কেন?
--না মানে,আপনাকে শুধু বৃষ্টিরর দিন
দেখি তো তাই।
-- না আমি কোন মেঘবতী না। আমি
অহনা পাশের ফ্লেটে থাকি।
-- কিন্তু আমার কাছে মেঘবতী
মেঘবতী লাগে আপনাকে।
-- হা হা , তুমার যা ইচ্ছা। আচ্ছা আজ
যায়।
-- বৃষ্টি তো এখনো কমেনি।
--এখনি কমে যাবে।
-- এই যে শুনুন? ( আমি)
-- কি (মেঘবতী)
-- আবার কবে মেঘবতীকে দেখতে
পাব?
-- কোন এক মেঘের দিনে।
..
..
হঠাৎ বৃষ্টি কমে গেল। মেঘবতী হাটতে
হাটতে চলে গেল। আমি একা একা
দাড়িয়ে রইলাম। যে যাই বলুক আমার
কাছে মেয়েটা মেঘবতীই । এর পরে
আর কোন দিন বৃষ্টি হয় নি। এভাবেই
দেখতে দেখতে বর্ষাকাল চলে গেল।
..
মেঘবতীকে আর দেখা যায় নি সেই
গন্ধরাজ ফুলের গাছে নিচে। সে
আসলে হয়তো সেই গন্ধরাজ ফুলের
জায়গাটা আবার সর্গ হয়ে ওঠবে।
এভাবেই দিন কাটছে সেই অচেনা
মেঘবতীর অপেক্ষায় ।
..
..
লিখেছেন-joy saha(অসংঙ্গায়িত জয়)
..
[বি:দ্র:- গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। ভুল-
ত্রুটি মার্জনীয়। ]
জানলাটা বাতাসের তিব্র বেগে
0 comments:
Post a Comment