মায়ের
আদর কিংবা বাবার চুমু খেয়ে ঘুমুতে যাওয়া শিশুটি পরদিন ভোরে জেগে ওঠার
সুযোগ নাও পেতে পারে। কে জানে, হয়তো এটাই বাবা-মার সঙ্গে তার শেষ দেখা!
পাখি ডাকা যে প্রত্যুষে তার ছুটে বেড়ানোর কথা বাড়িময়, ভোরেই তার নিথর
রক্তাক্ত দেহ চাপা পড়ে থাকতে পারে ভাঙা বাড়ির ধ্বংসস্তূপে কিংবা একটুখানি
নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় আইলান কুর্দির মত নিঃশব্দে ডুবে যেতে পারে সাগরের
লোনা জলে। অতঃপর সৈকতে নিথর দেহ। কে দিতে পারে তাদের জীবনের একটুখানি
নিশ্চয়তা?
সিরিয়া কিংবা ইরাকের আকাশে এখন আর কোনো পাখি উড়তে দেখা যায় না। সুনীল আকাশটা মার্কিন, রাশিয়া, ইরান ও সিরিয়ার সরকার বাহিনীর বোমারু বিমানের দখলে। ভারি মেশিনগান কিংবা রকেট লাঞ্চারের শব্দে অনেক আগেই মোহনীয় সংগীত শোনার ইচ্ছে মরে গেছে নগরবাসীর। কোনো ফুলের সৌরভ নয়, বারুদের গন্ধে বুঁদ হয়ে থাকে চারপাশের বাতাস। উত্সবের আতশবাজি নয়, গভীর রাতে ঘুম ভাঙে প্রাণঘাতী বোমার শব্দে। চারদিকে কেবল আতঙ্ক আর আতঙ্ক। এসব আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তার জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী জঙ্গী গোষ্ঠীর মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা। তারাও দায়ী যারা গর্তের সাপকে টেনে বের করেছে রাজনৈতিক স্বার্থে।
দু’হাজার বছরের পুরনো যে পালমিরা শহরে বছরে দেড় লাখ পর্যটক ঘুরতে আসতো সেটা এখন অনেকটাই ইটের ধ্বংসস্তূপ। আলেপ্পোর মনোরম বাড়িগুলোও বোমার আঘাতে নিশ্চিহ্নপ্রায়। সুখী মানুষগুলো ঘর ছাড়া, অন্যদেশে কষ্টের উদ্বাস্তু জীবন, আহ! কি করুণ পরিণতি! ইতিহাসজয়ী বিখ্যাত ব্যাবিলনীয় সভ্যতার ইরাকের অবস্থাও এরচেয়ে ভালো নয়। সরকারি বাহিনী আর ইসলামিক জঙ্গি গোষ্ঠীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছে কত-শত নিরীহ নারী-পুরুষ-শিশু তার কোনো হিসেব নেই! আইএস-আল-কায়েদা ধ্বংস করে দিচ্ছে হাজার হাজার বছরের পুরনো বিশ্বসভ্যতার অমূল্য সম্পদ।
বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে আমেরিকা কিংবা ইউরোপের উন্নত দেশগুলো যে খুব ভালো আছে এমনটা বলার সুযোগ কই? হঠাত্ সন্ত্রাসী আক্রমণের ঘটনা ঘটছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টিত আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে। অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা স্কুল, কলেজ কিংবা ক্লাবে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়ে নির্বিচারে হত্যা করছে শত শত নিরপরাধ মানুষ। দিন দিন এসব ঘটনার পরিমাণ বাড়ছে। মাস কয়েক আগে ইউরোপের ফ্রান্স, বেলজিয়ামে স্মরণকালে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। গত কয়দিন আগে জার্মানের একটি স্কুলে ঢুকে কয়েকজন ছাত্রকে হত্যা করছে বন্দুকধারী দুর্বৃত্ত। আফগানিস্তান-পাকিস্তান অনেক আগে থেকেই আত্মঘাতি হামলায় নাজেহাল। সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কায় পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা বন্ধ রয়েছে বেশ কয়েক বছর যাবত্। কারা দায়ী এর জন্য ?
বর্তমান বিশ্বে শান্তি বিনষ্টকারীর অপর নাম সন্ত্রাসবাদ। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকার বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্রে হামলার পর সন্ত্রাসবাদ তথা ‘টেরোরিজম’ শব্দটি আলোচনায় আসে। সেই হামলার জন্য আমেরিকা আল-কায়েদাকে দায়ী করে, আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে ২০১১ সালে পাকিস্তানের এবোটাবাদে পাকড়াও করে হামলার প্রতিশোধ নিয়েছে। এরপর আল-কায়েদার নেতৃত্বে পালাবদল ঘটলেও তেমন সুবিধে করতে পারেনি। ঘটনা এখানেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু না, নতুন করে বিশ্বে শান্তি বিনষ্টকারীদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটস তথা আইএস-এর নাম। এই আইএস সৃষ্টির পেছনে আমেরিকার হাত রয়েছে এমন অভিযোগ প্রায় শোনা যায়।
সিরিয়া ও ইরাকের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে প্রায়ই আইএস-এর সশস্ত্র যুদ্ধের সংবাদ পাওয়া যায়। খবর পাওয়া যায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহর দখল নেওয়ার। আইএস-এর আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোতে চোরাগুপ্তা হামলা চালিয়ে নিরীহ মানুুষ মারার সংবাদ আমরা প্রায়ই মিডিয়াতে দেখতে পাই। সর্বশেষ আমেরিকার সমকামীদের ‘পালস’ ক্লাবে হামলা, এর আগে বেলজিয়াম, তারও আগে ফ্রান্সে একটি ক্লাবে হামলা চালিয়ে দুই শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছে আইএস। তাদের এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। ইউরোপের দেশগুলো আইএস আক্রমণের আতঙ্কে রয়েছে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায়। আমেরিকাবাসীর আতঙ্ক খুব শিগগিরই কাটছে না। অথচ আইএস আল-কায়েদার উত্থানের পেছনে আমেরিকার প্রত্যক্ষ মদদ রয়েছে বলে অনেকেই অভিযোগ করে থাকেন।
সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সারাবিশ্ব যখন অস্থিতিশীল ঠিক তখনই বঙ্গবন্ধু কন্যা, দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্রুতগতিতে উন্নত বিশ্বের অভিমুখে এগিয়ে যাচ্ছে। যে বাংলাদেশ ছিল একসময় তলাবিহীন ঝুড়ি, সেই বাংলাদেশের জিডিপি এখন ঈর্ষণীয় গতিতে বাড়ছে। বৈদেশিক রিজার্ভ ৩০ বিলিয়নের বেশি। একসময়ে বছরের একটা সময় দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষ মঙ্গার কবলে পড়ত এখন আর কাউকে খাবার কষ্ট করতে হয় না বরং প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর বিপদের সময় আমরা সাহায্যের হাত বাড়াতে পারছি। গতবছর নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্পে আক্রান্ত মানুষের সাহায্যের লক্ষ্যে ১০ হাজার মেট্রিক টন চাল ছাড় দেওয়া হয়। পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, যানজট নিরসনে ফ্লাইওভার, দুর্ঘটনা কমাতে ৪ লেন মহাসড়ক, যাতায়াত সুবিধা বাড়াতে নতুন ট্রেন, ব্রিজ, কালভার্ট, দুর্নীতিতে ও সন্ত্রাসবাদে জিরো টলারেন্স, প্রযুক্তিখাতে ব্যাপক উন্নয়নে আইটি পার্ক, সমুদ্র বিজয়, ছিট মহল বিনিময়, শিক্ষাখাতে বাজেটের সর্বোচ্চ বরাদ্দ, বিদ্যুত্ খাতে সর্বোচ্চ উত্পাদন, রপ্তানিমুখী শিল্প বিকাশে সহযোগিতা, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, চিকিত্সা ব্যবস্থার উন্নয়ন, সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধি, নিজস্ব স্যাটেলাইট উেক্ষপণ পরিকল্পনা, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ প্রায় সবক্ষেত্রেই অবিস্মরণীয় অবদান রেখে চলেছে গণতন্ত্রের মানসকন্যা, উন্নয়ন নেত্রী, মুজিব তনয়া দক্ষিণ এশিয়ার সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। বর্তমান বিশ্বেও এক বিস্ময়ের নাম শেখ হাসিনা।
আলোর বিপরীতে যেমন অন্ধকার, তেমনি সরকারের অভূতপূর্ব সাফল্য অনেকের কাছে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে একটি মহল রাজনৈতিক হিংসার বশবর্তী হয়ে সরকারকে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে ব্যর্থ প্রমাণ করার জন্য গুপ্তহত্যা তথা জঙ্গিবাদিতা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব হত্যাকাণ্ড ঘটানোর মূল উদ্দেশ্য বাংলাদেশকে সারাবিশ্বের কাছে সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করা। আওয়ামী লীগ সরকাকে হেয় করা। আমরা জানি বঙ্গবন্ধু কন্যা এসব সমস্যা ঠিকই সামলে নিবেন। কারণ, অসাম্প্রদায়িকতা মিশে আছে আমাদের রক্তে, অস্থিতে। এ বাংলা হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খি্রষ্ টান
সবার। তাই তো মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী ১৯৭২ সালে স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমান ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের মর্যাদা দিয়ে একটি চমত্কার সংবিধান
দেশবাসীকে উপহার দিয়েছিলেন।
জঙ্গিবাদের কথা যদি বলা হয় তাহলে আমাদের মনে পড়ে যায় ২০০১-০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দুঃশাসনের কথা। বাংলা ভাই, শায়খ আব্দুর রহমান, আতাউল হক সানি, মুফতি হান্নানরা যেভাবে সমগ্র বাংলাদেশে বোমাবাজি করেছে, স্বাধীনতার ৪৫ বছরে এমন দুঃসময় বাংলার ইতিহাসে আর একবারও আসেনি। বিএনপি-জামায়াতের সমর্থন ছিল বলেই তত্কালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে একাধিকবার আক্রমণ চালানো হয়েছে। সে সব কথা মানুষ ভুলে যায়নি। প্রতিনিয়ত তারা আরেকটি ১৫ আগস্ট সৃষ্টি করতে ব্যস্ত থাকে।
বাংলাদেশে যখনই কোন হত্যাকাণ্ড ঘটে তখনই পশ্চিমা বিশ্ব দাবি করে এগুলো ইসলামিক জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস-এর দায় স্বীকার করেছে। তবে এখন পর্যন্ত তারা নিশ্চিত কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। বাংলাদেশে আইএস-এর উপস্থিতির দাবি করা সম্পূর্ণ যুুক্তিহীন। যেদেশে জামায়াতে ইসলামীর মত যুদ্ধাপরাধী সংগঠন রয়েছে সেখানে আবার নতুন করে আইএস-এর দরকার আছে কি? সন্দেহাতীতভাবে জামায়াতে ইসলামীর ক্যাডারগুলো বিভিন্ন নাম নিয়ে সারাদেশে গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে। সাম্প্রতিককালে কয়েকজন হামলা ও হত্যাকারী এর বড় প্রমাণ। মূলত সরকারকে বিব্রত করতে ঠাণ্ডা মাথায় সাধারণ নিরীহ মানুষ হত্যায় মেতেছে বিএনপির ইন্ধনে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা।
একটি বিষয় বিবেচনা করলেই উপমহাদেশে আইএস-এর উপস্থিতি কতটা যৌক্তিক তা বোঝা যাবে। বছর তিনেক আগে আমরা বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে মিয়ানমারে মুসলিম রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সংঘর্ষের খবর পাই। সেখানে হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সে সময় মৃত্যুভয়ে কাতর আশ্রয়হীন অনেক মুসলিম রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে ট্রলারে চেপে সাগর পাড়ি দিয়ে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় খুঁজেছে। অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশেও আশ্রয় নিতে ছুটে আসে। বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন ২০১৩ সালের জুলাই মাসে এসমব ঘটনায় ‘দ্যা ফেস অব বুদ্ধিস্ট টেররিস্ট’ নামে একটি কাভার স্টোরি করেন। মিয়ানমারের সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি অং সাং সুচি পর্যন্ত এ নির্যাতনের বিরুদ্ধে মুখ খোলেননি।
এবছরের শুরু দিকে মিয়ানমারে যে ঐতিহাসিক নির্বাচন হয়েছে সেখানে মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোকে নির্বাচনের বাইরে রাখা হয়। সেইদিক বিবেচনা করলে মিয়ানমারে মুসলমানরা অস্তিত্ব সংকটে আছেন সবচেয়ে বেশি। অথচ এতকিছুর পর হামলা তো দূরের কথা, মিয়ানমারে আইএস-এর একটা পটকা ফাটানোর খবরও আমরা পাইনি।
বাঙালি জাতির ইতিহাস রচনা করতে গেলে ছাত্র সমাজের ভূমিকাকে বিচ্ছিন্ন করে পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনা করা সম্ভব নয়। এ জাতির ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে রয়েছে ছাত্রসমাজের প্রত্যক্ষ অবদানের গৌরবগাঁথা। ১৯৪৭ সালের দেশ-ভাগের পর থেকে এখন পর্যন্ত এদেশে সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে যতগুলো আন্দোলন সংগ্রাম সংঘটিত হয়েছে প্রায় সবগুলোরই অগ্রজ সৈনিকের ভূমিকা পালন করেছে বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ। ’৫২’র ভাষা আন্দোলন, ’৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬’র ৬ দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুথান আন্দোলনগুলোর মূল চালিকাশক্তি ছিল ছাত্রসমাজ। ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে আক্রমণ করে সবার আগে, কারণ তাদের কাছে তথ্য ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর থেকে সশস্ত্র যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। তাই এসব শিক্ষার্থীকে নিধন করা জরুরি হয়ে পড়েছিল।
মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী ১৯৯০ সালের স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী, ২০০৭ সালের সেনাসমর্থিত অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকার হটাতে রাজপথে রক্ত দিয়েছে অগণিত ছাত্রবন্ধু। ইতিহাস সাক্ষী, ভবিষ্যতেও যদি বাংলাদেশের উপর কোনো আঘাত আসে, রাজপথে বুক পেতে সবার আগে দাঁড়াবে আমাদের এই ছাত্রসমাজ, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে যে গুপ্তহত্যাগুলো সংঘটিত হয়েছে সেগুলো খুবই দুঃখজনক। আমাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে স্বাধীনতা-বিরোধীরা বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে এমন হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
দেশে গুপ্তহত্যা ও জঙ্গিবাদ রুখতে সচেতন ছাত্রসমাজেরও কিছু ভূমিকা রয়েছে। জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা যে দেশের উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় সেটার কুফল সবার সামনে তুলে ধরতে হবে। গণসচেতনতা তৈরি করতে হবে, গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। যতই আত্মগোপনে থাকুক না কেন জনপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলে তারা কোণঠাসা হয়ে ধরা পড়তে বাধ্য। সর্বোপরি সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। তবেই জঙ্গিবাদ রুখে দেয়া সম্ভব হবে, সম্ভব হবে গুপ্তহত্যা বন্ধ করা। যে তরুণ-তরুণীটি কখনো বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শোনেনি সে জঙ্গি হতে বাধ্য, সে শিবির হতে বাধ্য, তাকে ভুল পথে ধাবিত করা সহজ। যে তরুণ-তরুণীটি এখনো বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়ার সুযোগ পায়নি সে আন্দোলন-সংগ্রামের প্রকৃত ইতিহাস থেকে দূরে থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। যে তরুণ-তরুণীটি আমাদের ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস পাঠ করেনি তাকে ভিন্ন পথে ও মতে দীক্ষা দেয়া সহজ। কাজেই আমাদের উচিত তাদের কাছে দেশের জন্য বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগের কথা পৌঁছে দেওয়া, ইতিহাসের গতিপথে হাঁটতে শেখানো। আদর্শ আর বিশ্বাসের কথা পৌঁছে দেওয়া।
সিরিয়া কিংবা ইরাকের আকাশে এখন আর কোনো পাখি উড়তে দেখা যায় না। সুনীল আকাশটা মার্কিন, রাশিয়া, ইরান ও সিরিয়ার সরকার বাহিনীর বোমারু বিমানের দখলে। ভারি মেশিনগান কিংবা রকেট লাঞ্চারের শব্দে অনেক আগেই মোহনীয় সংগীত শোনার ইচ্ছে মরে গেছে নগরবাসীর। কোনো ফুলের সৌরভ নয়, বারুদের গন্ধে বুঁদ হয়ে থাকে চারপাশের বাতাস। উত্সবের আতশবাজি নয়, গভীর রাতে ঘুম ভাঙে প্রাণঘাতী বোমার শব্দে। চারদিকে কেবল আতঙ্ক আর আতঙ্ক। এসব আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তার জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী জঙ্গী গোষ্ঠীর মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা। তারাও দায়ী যারা গর্তের সাপকে টেনে বের করেছে রাজনৈতিক স্বার্থে।
দু’হাজার বছরের পুরনো যে পালমিরা শহরে বছরে দেড় লাখ পর্যটক ঘুরতে আসতো সেটা এখন অনেকটাই ইটের ধ্বংসস্তূপ। আলেপ্পোর মনোরম বাড়িগুলোও বোমার আঘাতে নিশ্চিহ্নপ্রায়। সুখী মানুষগুলো ঘর ছাড়া, অন্যদেশে কষ্টের উদ্বাস্তু জীবন, আহ! কি করুণ পরিণতি! ইতিহাসজয়ী বিখ্যাত ব্যাবিলনীয় সভ্যতার ইরাকের অবস্থাও এরচেয়ে ভালো নয়। সরকারি বাহিনী আর ইসলামিক জঙ্গি গোষ্ঠীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছে কত-শত নিরীহ নারী-পুরুষ-শিশু তার কোনো হিসেব নেই! আইএস-আল-কায়েদা ধ্বংস করে দিচ্ছে হাজার হাজার বছরের পুরনো বিশ্বসভ্যতার অমূল্য সম্পদ।
বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে আমেরিকা কিংবা ইউরোপের উন্নত দেশগুলো যে খুব ভালো আছে এমনটা বলার সুযোগ কই? হঠাত্ সন্ত্রাসী আক্রমণের ঘটনা ঘটছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টিত আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে। অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা স্কুল, কলেজ কিংবা ক্লাবে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়ে নির্বিচারে হত্যা করছে শত শত নিরপরাধ মানুষ। দিন দিন এসব ঘটনার পরিমাণ বাড়ছে। মাস কয়েক আগে ইউরোপের ফ্রান্স, বেলজিয়ামে স্মরণকালে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। গত কয়দিন আগে জার্মানের একটি স্কুলে ঢুকে কয়েকজন ছাত্রকে হত্যা করছে বন্দুকধারী দুর্বৃত্ত। আফগানিস্তান-পাকিস্তান অনেক আগে থেকেই আত্মঘাতি হামলায় নাজেহাল। সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কায় পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা বন্ধ রয়েছে বেশ কয়েক বছর যাবত্। কারা দায়ী এর জন্য ?
বর্তমান বিশ্বে শান্তি বিনষ্টকারীর অপর নাম সন্ত্রাসবাদ। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকার বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্রে হামলার পর সন্ত্রাসবাদ তথা ‘টেরোরিজম’ শব্দটি আলোচনায় আসে। সেই হামলার জন্য আমেরিকা আল-কায়েদাকে দায়ী করে, আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে ২০১১ সালে পাকিস্তানের এবোটাবাদে পাকড়াও করে হামলার প্রতিশোধ নিয়েছে। এরপর আল-কায়েদার নেতৃত্বে পালাবদল ঘটলেও তেমন সুবিধে করতে পারেনি। ঘটনা এখানেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু না, নতুন করে বিশ্বে শান্তি বিনষ্টকারীদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটস তথা আইএস-এর নাম। এই আইএস সৃষ্টির পেছনে আমেরিকার হাত রয়েছে এমন অভিযোগ প্রায় শোনা যায়।
সিরিয়া ও ইরাকের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে প্রায়ই আইএস-এর সশস্ত্র যুদ্ধের সংবাদ পাওয়া যায়। খবর পাওয়া যায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহর দখল নেওয়ার। আইএস-এর আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোতে চোরাগুপ্তা হামলা চালিয়ে নিরীহ মানুুষ মারার সংবাদ আমরা প্রায়ই মিডিয়াতে দেখতে পাই। সর্বশেষ আমেরিকার সমকামীদের ‘পালস’ ক্লাবে হামলা, এর আগে বেলজিয়াম, তারও আগে ফ্রান্সে একটি ক্লাবে হামলা চালিয়ে দুই শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছে আইএস। তাদের এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। ইউরোপের দেশগুলো আইএস আক্রমণের আতঙ্কে রয়েছে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায়। আমেরিকাবাসীর আতঙ্ক খুব শিগগিরই কাটছে না। অথচ আইএস আল-কায়েদার উত্থানের পেছনে আমেরিকার প্রত্যক্ষ মদদ রয়েছে বলে অনেকেই অভিযোগ করে থাকেন।
সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সারাবিশ্ব যখন অস্থিতিশীল ঠিক তখনই বঙ্গবন্ধু কন্যা, দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্রুতগতিতে উন্নত বিশ্বের অভিমুখে এগিয়ে যাচ্ছে। যে বাংলাদেশ ছিল একসময় তলাবিহীন ঝুড়ি, সেই বাংলাদেশের জিডিপি এখন ঈর্ষণীয় গতিতে বাড়ছে। বৈদেশিক রিজার্ভ ৩০ বিলিয়নের বেশি। একসময়ে বছরের একটা সময় দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষ মঙ্গার কবলে পড়ত এখন আর কাউকে খাবার কষ্ট করতে হয় না বরং প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর বিপদের সময় আমরা সাহায্যের হাত বাড়াতে পারছি। গতবছর নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্পে আক্রান্ত মানুষের সাহায্যের লক্ষ্যে ১০ হাজার মেট্রিক টন চাল ছাড় দেওয়া হয়। পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, যানজট নিরসনে ফ্লাইওভার, দুর্ঘটনা কমাতে ৪ লেন মহাসড়ক, যাতায়াত সুবিধা বাড়াতে নতুন ট্রেন, ব্রিজ, কালভার্ট, দুর্নীতিতে ও সন্ত্রাসবাদে জিরো টলারেন্স, প্রযুক্তিখাতে ব্যাপক উন্নয়নে আইটি পার্ক, সমুদ্র বিজয়, ছিট মহল বিনিময়, শিক্ষাখাতে বাজেটের সর্বোচ্চ বরাদ্দ, বিদ্যুত্ খাতে সর্বোচ্চ উত্পাদন, রপ্তানিমুখী শিল্প বিকাশে সহযোগিতা, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, চিকিত্সা ব্যবস্থার উন্নয়ন, সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধি, নিজস্ব স্যাটেলাইট উেক্ষপণ পরিকল্পনা, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ প্রায় সবক্ষেত্রেই অবিস্মরণীয় অবদান রেখে চলেছে গণতন্ত্রের মানসকন্যা, উন্নয়ন নেত্রী, মুজিব তনয়া দক্ষিণ এশিয়ার সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। বর্তমান বিশ্বেও এক বিস্ময়ের নাম শেখ হাসিনা।
আলোর বিপরীতে যেমন অন্ধকার, তেমনি সরকারের অভূতপূর্ব সাফল্য অনেকের কাছে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে একটি মহল রাজনৈতিক হিংসার বশবর্তী হয়ে সরকারকে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে ব্যর্থ প্রমাণ করার জন্য গুপ্তহত্যা তথা জঙ্গিবাদিতা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব হত্যাকাণ্ড ঘটানোর মূল উদ্দেশ্য বাংলাদেশকে সারাবিশ্বের কাছে সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করা। আওয়ামী লীগ সরকাকে হেয় করা। আমরা জানি বঙ্গবন্ধু কন্যা এসব সমস্যা ঠিকই সামলে নিবেন। কারণ, অসাম্প্রদায়িকতা মিশে আছে আমাদের রক্তে, অস্থিতে। এ বাংলা হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খি্রষ্
জঙ্গিবাদের কথা যদি বলা হয় তাহলে আমাদের মনে পড়ে যায় ২০০১-০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দুঃশাসনের কথা। বাংলা ভাই, শায়খ আব্দুর রহমান, আতাউল হক সানি, মুফতি হান্নানরা যেভাবে সমগ্র বাংলাদেশে বোমাবাজি করেছে, স্বাধীনতার ৪৫ বছরে এমন দুঃসময় বাংলার ইতিহাসে আর একবারও আসেনি। বিএনপি-জামায়াতের সমর্থন ছিল বলেই তত্কালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে একাধিকবার আক্রমণ চালানো হয়েছে। সে সব কথা মানুষ ভুলে যায়নি। প্রতিনিয়ত তারা আরেকটি ১৫ আগস্ট সৃষ্টি করতে ব্যস্ত থাকে।
বাংলাদেশে যখনই কোন হত্যাকাণ্ড ঘটে তখনই পশ্চিমা বিশ্ব দাবি করে এগুলো ইসলামিক জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস-এর দায় স্বীকার করেছে। তবে এখন পর্যন্ত তারা নিশ্চিত কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। বাংলাদেশে আইএস-এর উপস্থিতির দাবি করা সম্পূর্ণ যুুক্তিহীন। যেদেশে জামায়াতে ইসলামীর মত যুদ্ধাপরাধী সংগঠন রয়েছে সেখানে আবার নতুন করে আইএস-এর দরকার আছে কি? সন্দেহাতীতভাবে জামায়াতে ইসলামীর ক্যাডারগুলো বিভিন্ন নাম নিয়ে সারাদেশে গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে। সাম্প্রতিককালে কয়েকজন হামলা ও হত্যাকারী এর বড় প্রমাণ। মূলত সরকারকে বিব্রত করতে ঠাণ্ডা মাথায় সাধারণ নিরীহ মানুষ হত্যায় মেতেছে বিএনপির ইন্ধনে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা।
একটি বিষয় বিবেচনা করলেই উপমহাদেশে আইএস-এর উপস্থিতি কতটা যৌক্তিক তা বোঝা যাবে। বছর তিনেক আগে আমরা বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে মিয়ানমারে মুসলিম রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সংঘর্ষের খবর পাই। সেখানে হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সে সময় মৃত্যুভয়ে কাতর আশ্রয়হীন অনেক মুসলিম রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে ট্রলারে চেপে সাগর পাড়ি দিয়ে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় খুঁজেছে। অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশেও আশ্রয় নিতে ছুটে আসে। বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন ২০১৩ সালের জুলাই মাসে এসমব ঘটনায় ‘দ্যা ফেস অব বুদ্ধিস্ট টেররিস্ট’ নামে একটি কাভার স্টোরি করেন। মিয়ানমারের সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি অং সাং সুচি পর্যন্ত এ নির্যাতনের বিরুদ্ধে মুখ খোলেননি।
এবছরের শুরু দিকে মিয়ানমারে যে ঐতিহাসিক নির্বাচন হয়েছে সেখানে মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোকে নির্বাচনের বাইরে রাখা হয়। সেইদিক বিবেচনা করলে মিয়ানমারে মুসলমানরা অস্তিত্ব সংকটে আছেন সবচেয়ে বেশি। অথচ এতকিছুর পর হামলা তো দূরের কথা, মিয়ানমারে আইএস-এর একটা পটকা ফাটানোর খবরও আমরা পাইনি।
বাঙালি জাতির ইতিহাস রচনা করতে গেলে ছাত্র সমাজের ভূমিকাকে বিচ্ছিন্ন করে পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনা করা সম্ভব নয়। এ জাতির ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে রয়েছে ছাত্রসমাজের প্রত্যক্ষ অবদানের গৌরবগাঁথা। ১৯৪৭ সালের দেশ-ভাগের পর থেকে এখন পর্যন্ত এদেশে সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে যতগুলো আন্দোলন সংগ্রাম সংঘটিত হয়েছে প্রায় সবগুলোরই অগ্রজ সৈনিকের ভূমিকা পালন করেছে বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ। ’৫২’র ভাষা আন্দোলন, ’৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬’র ৬ দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুথান আন্দোলনগুলোর মূল চালিকাশক্তি ছিল ছাত্রসমাজ। ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে আক্রমণ করে সবার আগে, কারণ তাদের কাছে তথ্য ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর থেকে সশস্ত্র যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। তাই এসব শিক্ষার্থীকে নিধন করা জরুরি হয়ে পড়েছিল।
মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী ১৯৯০ সালের স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী, ২০০৭ সালের সেনাসমর্থিত অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকার হটাতে রাজপথে রক্ত দিয়েছে অগণিত ছাত্রবন্ধু। ইতিহাস সাক্ষী, ভবিষ্যতেও যদি বাংলাদেশের উপর কোনো আঘাত আসে, রাজপথে বুক পেতে সবার আগে দাঁড়াবে আমাদের এই ছাত্রসমাজ, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে যে গুপ্তহত্যাগুলো সংঘটিত হয়েছে সেগুলো খুবই দুঃখজনক। আমাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে স্বাধীনতা-বিরোধীরা বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে এমন হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
দেশে গুপ্তহত্যা ও জঙ্গিবাদ রুখতে সচেতন ছাত্রসমাজেরও কিছু ভূমিকা রয়েছে। জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা যে দেশের উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় সেটার কুফল সবার সামনে তুলে ধরতে হবে। গণসচেতনতা তৈরি করতে হবে, গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। যতই আত্মগোপনে থাকুক না কেন জনপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলে তারা কোণঠাসা হয়ে ধরা পড়তে বাধ্য। সর্বোপরি সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। তবেই জঙ্গিবাদ রুখে দেয়া সম্ভব হবে, সম্ভব হবে গুপ্তহত্যা বন্ধ করা। যে তরুণ-তরুণীটি কখনো বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শোনেনি সে জঙ্গি হতে বাধ্য, সে শিবির হতে বাধ্য, তাকে ভুল পথে ধাবিত করা সহজ। যে তরুণ-তরুণীটি এখনো বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়ার সুযোগ পায়নি সে আন্দোলন-সংগ্রামের প্রকৃত ইতিহাস থেকে দূরে থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। যে তরুণ-তরুণীটি আমাদের ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস পাঠ করেনি তাকে ভিন্ন পথে ও মতে দীক্ষা দেয়া সহজ। কাজেই আমাদের উচিত তাদের কাছে দেশের জন্য বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগের কথা পৌঁছে দেওয়া, ইতিহাসের গতিপথে হাঁটতে শেখানো। আদর্শ আর বিশ্বাসের কথা পৌঁছে দেওয়া।
0 comments:
Post a Comment