৯ মাত্রার ভূমিকম্পে দেবে যেতে পারে বাংলাদেশ !!!
ঘণবসতিপূর্ণ হওয়ায় ভূগর্ভের মাটির স্তরে যে
বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে তাতে ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত হতে পারে বাংলাদেশ। এ
ভূকম্পন ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ মাত্রার কিংবা তার চেয়েও বেশি মাত্রায় হতে পারে
বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানিদের এক গবেষণা প্রতিবেদনে।
ভূমিকম্প বিপর্যয়ে দেশটির প্রায় ১৪ কোটি মানুষের
জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে বলে
জানিয়েছেন গবেষকরা। ন্যাচার জিওসায়েন্স সাময়িকীতে ভূমিকম্প নিয়ে প্রকাশিত
গবেষণা প্রতিবেদনে এ আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে।
দেশটির বুক চিরে প্রবাহিত বড় দুই নদী গঙ্গা
এবং ব্রহ্মপুত্রের দুই পাড়ের ২০ কি.মি পর্যন্ত বর্ষায় আসা বালি এবং কাঁদা
মাটিতে ভরাট হয়ে গেছে। বিপুল পলিতে দুই নদীর প্রবাহ সংকুচিত হয়ে পানির আধার
বিলীন হয়ে পড়েছে, যা ভূমিকম্পের একটি আগাম লক্ষণ। গবেষকরা বলছেন, ২০০৪
সালে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রায় ইতিহাসের ভয়াবহ যে সুনামি আঘাত হানে তা
বাংলাদেশের একই ফল্ট লাইনে অবস্থিত। সুমাত্রার ওই সুনামিতে প্রাণ হারায় ২
লাখ ৩০,০০০ মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের
ভূপদার্থবিদ মাইকেল স্টেকলার ভুমিকম্প নিয়ে ন্যাচার জিওনায়েন্সে প্রকাশিত
প্রতিবেদনের মূখ্য গবেষক। প্রতিবেদনে এ গবেষক বলেছেন, ‘সুমাত্রার মতো ক্রটি
বাংলাদেশের বড় দুই নদী গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় বিদ্যমান।’ গবেষণায়
ক্রটিপূর্ণ এ অবস্থার বিষয়টি দৃশ্যমান হয়েছে উল্লেখ করে এ ভূপদার্থবিদ
জানান, ওই এলাকার ভূগর্ভে কি মাত্রায় চাপ তৈরি হচ্ছে সেটা যাচাই-বাছাইয়ে
পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যায়নি।প্রতিবেদনে অধ্যাপক মাইকেল স্টেকলার বলেন,
২০০৪ সাল থেকে তারা যে তথ্য সংগ্রহ করেছেন তাতে দেখা যায় ওই অঞ্চলে
ভূগর্ভের প্রধান টেকটনিক প্লেটগুলো বন্ধ এবং সেগুলোর উপর অব্যাহতভাবে চাপ
বাড়ছে। চাপের এ মাত্রা অব্যাহত থাকলে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে পারে ওই অঞ্চলের
বিদ্যমান ভূমির আকৃতিতে। এমনকি ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ মাত্রার ভুমিকম্প আঘাত
হানতে পারে ওই অঞ্চলে।
যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের
এ অধ্যাপক তার গবেষণা প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে ফেয়ারফ্যাক্স মিডিয়াকে বলেন,
গবেষকরা ভূগর্ভের মাটির লেয়ারে চাপ বাড়ার অবস্থা বুঝতে পারেন, ভূগর্ভে
টেকটনিক প্লেটের অবস্থা দেখতে পান কিন্তু এসবের প্রভাবে কখন ভূমিকম্পের মতো
ভয়াবহ কিছু ঘটবে তা নির্ণয় করা কঠিন। ভূগর্ভের মাটির লেয়ারের এ গঠন
প্রক্রিয়া গত ৪’শ থেকে ২’হাজার ধরে চলে আসছে বলেও উল্লেখ করেন অধ্যাপক
মাইকেল স্টেকলার।
বাংলাদেশের গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদী
অববাহিকায় যে ভূমিকম্প হবে সেটি হবে বিশ্বের ভূমিকম্পের ইতিহাসে ভয়াবহ,
জানান অধ্যাপক মাইকেল স্টেকলার। তিনি আরো বলেন, ‘আমার ধারণা এ ভূমিকম্পটি
হবে ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ মাত্রার। তবে এ মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে কি না, গেলে তা কত
বেশি মাত্রার হবে তা বলা মুশকিল।’ ভূমিকম্পের এ সতর্কতা শুধুমাত্র
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা নয়, এ ধ্বংসযজ্ঞের বিস্তৃতি ঘটবে ভারতের মিজোরাম
পর্যন্ত। এ পরিস্থিতে বাড়ি-ঘর, সম্পদের পাশাপাশি ব্যাপক ভূমিধ্বস দেখা
দেবে, যা ব্যাপক জীবনহানি ঘটাবে বলেও সতর্ক করে দনে মার্কিন এ অধ্যাপক ও
গবেষক।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক রজার বিল হাস তার গবেষণায় বলেন, হিমালয়ের পাদদেশে
মেইন বাউন্ডারি ট্রাস্ট রয়েছে, যা বাংলাদেশ থেকে ৪০০ কিলোমিটার উত্তরে।
এখানে ইউরোশিয়া প্লেটের নিচে ভারতের যে টেকটনিক প্লেটটি রয়েছে তা দিনকে দিন
সরে যাচ্ছে। বর্তমানে সেটি লক হয়ে আছে। কিন্তু যেকোন মুহুর্তে তা খুলে
যাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করেন তিনি। আর তা খুলে গেলেই বড় ধরনের
ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে বাংলাদেশ ও তদসংলগ্ন অঞ্চলে।
বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, যদি বড় মাত্রার কোন
ভূমিকম্প হয় তাহলে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। কারণ
হিসেবে তারা বলছেন, অবকাঠামো ভূমিকম্প সহনীয় নয়। অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ
এবং বাসিন্দাদের অসতর্কতা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভূমিকম্পে দালান-কোঠা নিজ
থেকে ভেঙ্গে পড়ে না। ভূগর্ভস্থ মাটি সংকুচিত হলে দালান ধ্বসে পড়ে। আর তাই
বিল্ডিং কোড মেনে বাড়ি বানানোর নির্দেশ দিয়েছেন তারা সেই সঙ্গে শহরের
প্রচুর পরিমাণে খোলা জায়গার ব্যবস্থা করা। আর এতে করে ক্ষয়ক্ষতি কিছুটা হলে
লাঘব হরে বলে ধারণা করছেন তারা।
এদিকে রাজধানী ঢাকা একটি অপরিকল্পিত জনবহুল
নগরী। বড় ধরণের ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে ঢাকার অবস্থান ভূমিকম্পের উৎসস্থল থেকে
৪০০ কিলোমিটার দুরত্বের মধ্যে হলে ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক হতে পারে বলে মনে করেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সৈয়দ
হুমায়ুন আখতার। তিনি বলেন, এতে যে শুধু দালান-কোঠা ক্ষতিগ্রস্থ হবে তা
কিন্তু নয়, সেই সঙ্গে বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্র, বিদ্যুৎ উৎপাদন স্থাপনাও
ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আর এধরণের ক্ষয়ক্ষতি ঠেকাতে সরকারকে এখনই পদক্ষেপ
নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলামেইল২৪ডটকম/এসএস/এইচএমসি
0 comments:
Post a Comment