advertisement

adverisement

your javascript ads here

Wednesday, 6 July 2016

এশিয়ার সবথেকে পরিচ্ছন্ন গ্রাম ???

এশিয়ার সবথেকে পরিচ্ছন্ন গ্রাম ???

 প্লাস্টিকের যে কোনো সামগ্রী এখানে নিষিদ্ধ। রাস্তাঘাট ঝকঝকে তকতকে, ময়লা-আবর্জনার দেখা পাওয়া মুশকিল। চারপাশে ফুলের বাগান। গ্রামটিকে বলা হয় এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম। ভারতের একেবারে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ছোট্ট এই গ্রামটির নাম মাওলিনং।ভারতের মেঘালয় রাজ্যের প্রত্যন্ত গ্রামটিতে ২০০৩ সালের আগে পর্যটকদের পদচ্ছাপ পড়তো
না। মেঘালয়ে ছিল না কোনো সড়ক। যেতে হতো শুধুমাত্র পায়ে হেঁটে। মাওলিনং-এ খাসি উপজাতিদের বসবাস। বিরল মাতৃতান্ত্রিক সমাজের জন্য খ্যাত এ গ্রাম। এই খাসি সমাজে ধন-সম্পদের মালিক হন মেয়েরা। মায়ের সম্পদের একমাত্র উত্তরাধিকারী হন সবচেয়ে ছোট মেয়েটি। মায়ের নামের পদবি গ্রহণ করে সন্তানরা।
 
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভিন্ন কারণে এ গ্রামটি বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। সেটি হলো, গ্রামের ব্যতিক্রমধর্মী পরিচ্ছন্নতা। ভারতের বড় বড় শহরের ধুলাবালি আর কোলাহল থেকে অনেক আলাদা এ গ্রাম। গ্রামের কোনায় কোনায় দেখা মিলবে বাঁশের তৈরি ডাস্টবিন। স্বেচ্ছাসেবীরা নিয়মিত বিরতির পরপর সড়ক ঝাড়ু দেয়।
 
প্লাস্টিকের ব্যাগ ফেলে দিতে দর্শণার্থীদের প্রতি কড়া নির্দেশমূলক সংকেত চোখে পড়বে প্রায়ই। আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা একেবারেই নিষিদ্ধ। নিজের ছোট কিন্তু উজ্জ্বল পারিবারিক বাড়িটির সামনে বসে আছে বনিয়ার মাওরোহ। মাওরোহর ভাষ্য, আমরা প্রতিদিন পরিষ্কার করি। কারণ, আমাদের দাদা-দাদি ও পূর্ব-পুরুষরা আমদের শিখিয়েছে কীভাবে গ্রাম ও আশপাশের এলাকা পরিষ্কার রাখতে হয়। কারণ, পরিচ্ছন্ন থাকা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
 
১২ বছর আগে এ গ্রামে প্রথম সড়ক নির্মিত হয়। তারপর ডিসকোভার ইন্ডিয়া নামে একটি ট্রাভেল ম্যাগাজিনের এক সাংবাদিক ঘুরে যান গ্রামটি। তারপরই তার লেখা একটি নিবন্ধে গ্রামটিকে এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। এরপরই যেন দর্শণার্থীদের ভিড় বাড়তে থাকে গ্রামটিকে ঘিরে। ভরা মৌসুমে প্রতিদিন ২৫০ পর্যটক এ গ্রামে বেড়াতে যান। গ্রামের জনসংখ্যা বেড়ে গেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। ক্রমেই, খ্যাতির বিড়ম্বনার মুখোমুখি হয় মাওলিনং। গ্রামের একটি অতিথিশালার মালিক ৫১ বছর বয়সী রিশোত খোংথোহরেম।
 
তিনি বলেন, এখানে এখন শব্দ দূষণ চলে। আমি গ্রাম পরিষদের সঙ্গে কথা বলেছি। পরিষদ কর্তৃপক্ষ গ্রাম থেকে আরও দূরে নতুন একটি গাড়ি পার্ক করার স্থান নির্মাণে সরকারের কাছে চিঠি লিখেছে। মেঘালয় ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট ফোরামের সাবেক কর্মকর্তা দীপক লালু এ গ্রামের পর্যটন সম্ভাবনা নিয়ে একেবারে প্রথম দিকে গ্রাম পরিষদকে পরামর্শ দিয়েছেন। তিনিও এখন অতিরিক্ত পর্যটকের চাপ নিয়ে চিন্তিত।
 
তিনি বলেন, এখন কোথাও কোনো ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নেই। এক নারী হয়তো গোসল করছে। তার ছবি তুলে ফেলা হচ্ছে। যে সামাজিক বন্ধন গ্রামটিকে এক করে রেখেছে, তা নষ্ট হচ্ছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে মাওলিনং গ্রামে এতটা উদ্বেগ সৃষ্টি হয় ১৩০ বছর আগের একটি কলেরা মহামারি থেকে। তখন গ্রামে ছিল না কোনো স্বাস্থ্য সুবিধা। এ কারণেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকেই কলেরা প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হিসেবে বিবেচনা করা হতে থাকে।
 
খোংথোহরেম বলেন, খ্রিষ্টান মিশনারিজ আমাদের পূর্বসূরিদের বলেছিল, তোমরা কলেরা থেকে সুরক্ষিত থাকতে পারবে, যদি ভালোভাবে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে পারো। ঘরে-বাইরে, জমিতে, গ্রামে, নিজের দেহে কিংবা খাবার গ্রহণের বেলায় – সবসময়ই পরিচ্ছন্নতা মেনে চলতে হবে। এরপর থেকে মাওলিনং গ্রামে এ খুঁতখুঁতে অভ্যেস প্রতিষ্ঠা পায়। ফলে গ্রামটির ভিন্ন অর্জনও বেড়েছে।
 
প্রকাশ্যে মলমূত্র ত্যাগ যেখানে প্রত্যন্ত ভারতে স্বাভাবিক বিষয়, সেখানে এ গ্রামের ৯৫টি বাড়ির সব কটিতে টয়লেট রয়েছে। এ গ্রামের প্রশংসা করেছেন খোদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মহাসড়কে ও স্মৃতিস্তম্ভের আশেপাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য কুখ্যাতি আছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র মানুষদের। এ দুর্নাম দূর করতে মোদি শুরু করেন ক্লিন ইন্ডিয়া প্রচারাভিযান। আর এর অংশ হিসেবে এক রেডিও ভাষণে মোদি এ গ্রামের প্রশংসা করেন।
 
মোদি বলেছিলেন, আমি জেনে চমৎকৃত হয়েছি, উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয়ে এমন একটি প্রত্যন্ত গ্রাম আছে, যেটি বছরের পর বছর ধরে পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে আসছে। এমন অর্জন নিয়ে মাওলিনং গ্রাম নিশ্চয়ই গর্বিত। অনেকে তবে মনে করেন, বাসিন্দাদের মঙ্গলের জন্য এ গ্রামে পর্যটকদের সংখ্যা সীমিত করতে হবে। পর্যটক বিশেষজ্ঞ লালু বলেন, তাদের অবশ্যই পর্যটক সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে জানতে হবে। একটা পর্যায়ের পর ‘না’ বলতে পারতে হবে।
 

0 comments:

Post a Comment