বগুড়া প্রতিনিধিঃ জেলার গাবতলীতে গোসলের
জন্য নতুন লুঙ্গী দিতে দেরি হওয়ায় রুবি বেগম (২৫) বেগম নামের এক গৃহবধূকে
বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে মাদকাসক্ত স্বামী। আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার
দক্ষিণপাড়া ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গ্রামাবাসী ঘাতক স্বামী
ফুল মিয়াকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে।
জানা যায়, গত ৮বছর পূর্বে গোয়ালপাড়ার
আব্দুর রশিদ প্রামানিকের কন্যা রুবি ঋাতুনের সঙ্গে একই গ্রামের জালাল
উদ্দিনের পুত্র ফুল মিয়ার সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই তাদের মধ্যে
সাংসারিক কলহ বিবাদ চলতে থাকে। বিয়ের পর থেকেই ফুল মিয়া যৌতুকের দাবিসহ
নানা কারণে মাঝে মধ্যেই স্ত্রীকে মারপিট করতো। এছাড়া ইতিমধ্যে ফুল মিয়া
জুয়া খেলে বেশকিছুু জমি বিক্রি করেছে।
এই জমির দলিল করাকে কেন্দ্র করে
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তর্কবির্তক চলতে থাকে। এক পর্যায়ে আজ সোমবার সকালে
গোসলের জন্য লুঙ্গি দিতে দেরী হওয়ায় ফুল মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে ঘরের ভিতরে থাকা
ধারালো বটি দিয়ে স্ত্রী রুবি খাতুনের পিঠে ও মাথায় কোপ দেয়। এসময় রুবি
মাটিতে লুটে পড়লে তখন লাঠি দিয়ে পিটাতে থাকে ফুল মিয়া। এতে ঘটনাস্থলেই
মৃত্যু হয় রুবির।
এ ঘটনায় রুবির ৭ বছর বয়সী একমাত্র পুত্র
রুহুল আমীনের চিৎকারে গ্রামবাসী ছুটে এসে ঘাতক ফুল মিয়াকে পালানোর সময় আটক
করে। খবর পেয়ে র্যাব ও থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ঘাতক ফুল মিয়াকে আটক করে ও
পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছে।
এ ঘটনায় এসআই লাল মিয়া জানান, রুবিকে
ধারালো বটি ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তবুও ঘটনাটি খতিয়ে দেখছি।
গ্রামবাসী জানায়, ঘাতক ফুল মিয়া একজন জুয়াড়ু এবং মাদকাসক্ত ব্যক্তি।
গাবতলী মডেল থানার ওসি সাহিদ মাহমুদ খান
জানান, আটক ফুল মিয়াকে থানা হাজতে রাখা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর প্রয়োজনীয়
ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার
প্রসঙ্গ আলোচনায় আসার পর দেশের সবগুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ
কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
আগামী ১৭ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর
কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে ইংরেজি মাধ্যমের
স্কুলগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন
কামাল সোমবার (১১ জুলাই) বিকেলে সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম
নাহিদের দফতরে এসে তাকে সভার বিষয়ে অবহিত করেন। এ সময় ঢাকা মহানগর পুলিশ
কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া তার সঙ্গে ছিলেন।
শিক্ষামন্ত্রী পরে সাংবাদিকদের জানান,
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় যৌথভাবে বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে সভা করবে।
ওই বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও
শিক্ষামন্ত্রী, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক,
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
গত পহেলা জুলাই গুলশানের হলি আর্টিসান
বেকারিতে জঙ্গি হামলা এবং ঈদের দিন কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার
ঘটনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ও ইংরেজি মাধ্যমের
স্কুল স্কলাসটিকার প্রাক্তণ শিক্ষার্থীর নাম আসায় এ বৈঠকের উদ্যোগ।
দেশে বর্তমানে ৯৫টি অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৮০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের জঙ্গি কর্মকাণ্ডে
জড়িয়ে পড়ার ঘটনায় শিক্ষামন্ত্রী মঙ্গলবার সচিবালয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি
কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভা করবেন।
পর্যায়ক্রমে সবগুলো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়েও সভা করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
- See more at:
http://www.dainikshiksha.com/%e0%a6%ac%e0%a7%87%e0%a6%b8%e0%a6%b0%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%bf-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a7%9f-36/47167#sthash.HnS5rdIH.dpuf
বগুড়া প্রতিনিধিঃ জেলার গাবতলীতে গোসলের
জন্য নতুন লুঙ্গী দিতে দেরি হওয়ায় রুবি বেগম (২৫) বেগম নামের এক গৃহবধূকে
বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে মাদকাসক্ত স্বামী।
আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার
দক্ষিণপাড়া ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গ্রামাবাসী ঘাতক স্বামী
ফুল মিয়াকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে।
জানা যায়, গত ৮বছর পূর্বে গোয়ালপাড়ার
আব্দুর রশিদ প্রামানিকের কন্যা রুবি ঋাতুনের সঙ্গে একই গ্রামের জালাল
উদ্দিনের পুত্র ফুল মিয়ার সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই তাদের মধ্যে
সাংসারিক কলহ বিবাদ চলতে থাকে। বিয়ের পর থেকেই ফুল মিয়া যৌতুকের দাবিসহ
নানা কারণে মাঝে মধ্যেই স্ত্রীকে মারপিট করতো। এছাড়া ইতিমধ্যে ফুল মিয়া
জুয়া খেলে বেশকিছুু জমি বিক্রি করেছে।
এই জমির দলিল করাকে কেন্দ্র করে
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তর্কবির্তক চলতে থাকে। এক পর্যায়ে আজ সোমবার সকালে
গোসলের জন্য লুঙ্গি দিতে দেরী হওয়ায় ফুল মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে ঘরের ভিতরে থাকা
ধারালো বটি দিয়ে স্ত্রী রুবি খাতুনের পিঠে ও মাথায় কোপ দেয়। এসময় রুবি
মাটিতে লুটে পড়লে তখন লাঠি দিয়ে পিটাতে থাকে ফুল মিয়া। এতে ঘটনাস্থলেই
মৃত্যু হয় রুবির।
এ ঘটনায় রুবির ৭ বছর বয়সী একমাত্র পুত্র
রুহুল আমীনের চিৎকারে গ্রামবাসী ছুটে এসে ঘাতক ফুল মিয়াকে পালানোর সময় আটক
করে। খবর পেয়ে র্যাব ও থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ঘাতক ফুল মিয়াকে আটক করে ও
পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছে।
এ ঘটনায় এসআই লাল মিয়া জানান, রুবিকে
ধারালো বটি ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তবুও ঘটনাটি খতিয়ে দেখছি।
গ্রামবাসী জানায়, ঘাতক ফুল মিয়া একজন জুয়াড়ু এবং মাদকাসক্ত ব্যক্তি।
গাবতলী মডেল থানার ওসি সাহিদ মাহমুদ খান
জানান, আটক ফুল মিয়াকে থানা হাজতে রাখা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর প্রয়োজনীয়
ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার
প্রসঙ্গ আলোচনায় আসার পর দেশের সবগুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ
কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
আগামী ১৭ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর
কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে ইংরেজি মাধ্যমের
স্কুলগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন
কামাল সোমবার (১১ জুলাই) বিকেলে সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম
নাহিদের দফতরে এসে তাকে সভার বিষয়ে অবহিত করেন। এ সময় ঢাকা মহানগর পুলিশ
কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া তার সঙ্গে ছিলেন।
শিক্ষামন্ত্রী পরে সাংবাদিকদের জানান,
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় যৌথভাবে বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে সভা করবে।
ওই বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও
শিক্ষামন্ত্রী, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক,
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
গত পহেলা জুলাই গুলশানের হলি আর্টিসান
বেকারিতে জঙ্গি হামলা এবং ঈদের দিন কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার
ঘটনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ও ইংরেজি মাধ্যমের
স্কুল স্কলাসটিকার প্রাক্তণ শিক্ষার্থীর নাম আসায় এ বৈঠকের উদ্যোগ।
দেশে বর্তমানে ৯৫টি অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৮০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের জঙ্গি কর্মকাণ্ডে
জড়িয়ে পড়ার ঘটনায় শিক্ষামন্ত্রী মঙ্গলবার সচিবালয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি
কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভা করবেন।
পর্যায়ক্রমে সবগুলো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়েও সভা করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
- See more at:
http://www.dainikshiksha.com/%e0%a6%ac%e0%a7%87%e0%a6%b8%e0%a6%b0%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%bf-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a7%9f-36/47167#sthash.HnS5rdIH.dpuf
বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার
প্রসঙ্গ আলোচনায় আসার পর দেশের সবগুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ
কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
আগামী ১৭ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর
কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে ইংরেজি মাধ্যমের
স্কুলগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন
কামাল সোমবার (১১ জুলাই) বিকেলে সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম
নাহিদের দফতরে এসে তাকে সভার বিষয়ে অবহিত করেন। এ সময় ঢাকা মহানগর পুলিশ
কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া তার সঙ্গে ছিলেন।
শিক্ষামন্ত্রী পরে সাংবাদিকদের জানান,
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় যৌথভাবে বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে সভা করবে।
ওই বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও
শিক্ষামন্ত্রী, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক,
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
গত পহেলা জুলাই গুলশানের হলি আর্টিসান
বেকারিতে জঙ্গি হামলা এবং ঈদের দিন কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার
ঘটনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ও ইংরেজি মাধ্যমের
স্কুল স্কলাসটিকার প্রাক্তণ শিক্ষার্থীর নাম আসায় এ বৈঠকের উদ্যোগ।
দেশে বর্তমানে ৯৫টি অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৮০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের জঙ্গি কর্মকাণ্ডে
জড়িয়ে পড়ার ঘটনায় শিক্ষামন্ত্রী মঙ্গলবার সচিবালয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি
কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভা করবেন।
পর্যায়ক্রমে সবগুলো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়েও সভা করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
- See more at:
http://www.dainikshiksha.com/%e0%a6%ac%e0%a7%87%e0%a6%b8%e0%a6%b0%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%bf-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a7%9f-36/47167#sthash.HnS5rdIH.dpuf
বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার
প্রসঙ্গ আলোচনায় আসার পর দেশের সবগুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ
কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
আগামী ১৭ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর
কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে ইংরেজি মাধ্যমের
স্কুলগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন
কামাল সোমবার (১১ জুলাই) বিকেলে সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম
নাহিদের দফতরে এসে তাকে সভার বিষয়ে অবহিত করেন। এ সময় ঢাকা মহানগর পুলিশ
কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া তার সঙ্গে ছিলেন।
শিক্ষামন্ত্রী পরে সাংবাদিকদের জানান,
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় যৌথভাবে বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে সভা করবে।
ওই বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও
শিক্ষামন্ত্রী, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক,
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
গত পহেলা জুলাই গুলশানের হলি আর্টিসান
বেকারিতে জঙ্গি হামলা এবং ঈদের দিন কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার
ঘটনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ও ইংরেজি মাধ্যমের
স্কুল স্কলাসটিকার প্রাক্তণ শিক্ষার্থীর নাম আসায় এ বৈঠকের উদ্যোগ।
দেশে বর্তমানে ৯৫টি অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৮০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের জঙ্গি কর্মকাণ্ডে
জড়িয়ে পড়ার ঘটনায় শিক্ষামন্ত্রী মঙ্গলবার সচিবালয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি
কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভা করবেন।
পর্যায়ক্রমে সবগুলো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়েও সভা করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
- See more at:
http://www.dainikshiksha.com/%e0%a6%ac%e0%a7%87%e0%a6%b8%e0%a6%b0%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%bf-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a7%9f-36/47167#sthash.HnS5rdIH.dpuf
বাঙালির
ইতিহাসে এবারের ঈদে আগমন ঘটেছে আতঙ্ক ও শোকের বার্তা নিয়ে। তবুও ব্যথিত মন
নিয়েই বাঙালি জাতি ঈদের আনন্দ উপভোগ করেছে। ইসলাম ধর্মের অন্যতম ধর্মীয়
উৎসব ঈদ। এ উৎসবে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন ধনি-দরিদ্র সকল ভেদাভেদ ভুলে
ঈদের নামাজ এক কাতারে পালন করে। পরস্পরে কোলাকুলির মাধ্যমে সকল ভেদাভেদ
ভুলে যায়।
ইসলাম শান্তির ধর্ম। কোন রকম অশান্তি
ইসলাম সমর্থন করে না। কোন প্রকার খুন বা অন্য ধর্মের ওপর অত্যাচার ইসলাম বা
অন্যকোন ধর্মে স্বীকৃত নয়। এ অপকর্ম সকল ধর্মেই মহাপাপ হিসেবে চিহ্নিত।
কোন বিবেকবান মানুষ সন্ত্রাস বা মানুষ খুনের মত অপকর্ম করতে পারে না।
একমাত্র বিবেক বর্জিত মানুষই এসব অপকর্ম করে থাকে।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা যুদ্ধের
সময় দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধ
হয়েছিল। আজকের দিনে পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায়, গ্রামে-গঞ্জে, জঙ্গি
নির্মূলের জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। প্রাথমিক, উচ্চ
বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষক দেশের তৃণমূল পর্যায় থেকে গ্রাম-গঞ্জ ও
শহরে সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। তারা জঙ্গিবাদবিরোধী কাজে জনগণকে সচেতন করাসহ
জঙ্গি দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আশা করি শিক্ষক সমাজ আজ
দেশের ক্রান্তিলগ্নে এগিয়ে আসবে।
একটি বিশেষ মহলের আন্তরিকতার অভাবে
দেশের কতিপয় শিক্ষালয়ে জঙ্গির আস্তানা হিসেবে গড়ে উঠেছে। স্বাধীনতার দীর্ঘ
সময়ের পরেও শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে দেশের সুনাগরিক গড়ে তোলা
সম্ভব হয়নি। সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান। কোন কোন প্রতিষ্ঠানে স্বাধীনতাবিরোধী তথা জঙ্গি তৈরির কারখানা
হিসেবে পরিণত হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর
সরকারি নিয়ন্ত্রণ বা নজরদারী আজকের দিনে জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের
শিক্ষা তথা শিক্ষকদের সমস্যা নিরসণে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা আজ
প্রশ্নবিদ্ধ। দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষাবিদসহ সচেতন জনসাধারণ শিক্ষার বাজেটে
যথাযথ বরাদ্দের জন্য চিৎকার করে আসছেন। এ চিৎকার অনেকটা ‘কামারের দোকানে
কোরআন পড়া’ প্রবাদের মতো। এ চিৎকার যেন অর্থ মন্ত্রণালয় তথা সংশ্লিষ্টদের
কাছে করুণা ভিক্ষা প্রত্যাশা।
শিক্ষায় নানা অব্যবস্থাপনার অবকাঠামোগত
কিছুটা উন্নয়ন, বিনামূল্যে বই বিতরণের সাহসী পদক্ষেপের সফলতা অনেকটা ম্লান
হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষক স্বল্পতা, নোট গাইডের ব্যাপক সফলতা, কোচিং নির্ভর
শিক্ষা দিন দিন বেড়েই চলছে। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষক জাতি গড়ার
কারিগর। এ বাস্তবতা উপলব্ধি করার জ্ঞান সংশ্লিষ্টদের মাঝ থেকে যেন হারিয়ে
যাচ্ছে। তারা বিষয়টিকে এড়িয়ে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও নানা অনৈতিক কাজে ঠেলে
দিচ্ছে জাতির ভবিষ্যত নাগরিক শিশু-কিশোরদের। শিক্ষকদের প্রতি অমানবিক
কর্মকাণ্ড সংশ্লিষ্ট হৃদয়ে পাথর সমস্থান পেয়েছে। কেন এ পাথর সরাবার বা
নিশ্চিহ্ন করার উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়।
স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষকেরা
মানবেতর জীবন যাপন করছে। আর এক শ্রেণির লুটেরা সরকারি সম্পদ, ব্যাংকের অর্থ
লুট-আত্মসাৎ করে সম্পদের পাহাড় বানাচ্ছে এ দৃশ্য মেনে নেয়া কষ্টকর
ব্যাপার। ননএমপিও ভুক্ত স্কুল-কলেজ, আইসিটি ও প্রাথমিকের পুল শিক্ষক অর্থের
অভাবে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। তাঁরা ঈদের আনন্দের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত
হচ্ছে। বিপুল সংখ্যক ননএমপিও ভুক্ত স্কুল-কলেজসহ আইসিটি শিক্ষক ও
প্রাথমিকের পুল শিক্ষকদের স্থায়ী পদে নিয়োগসহ এমপিওভুক্তকরণের টাকা বিশাল
বাজেটে স্থান পায় নাই। স্থান পেয়েছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে
তৃণমূল পর্যায়ে কর্মকর্তা, কর্মচারীর বেতন দুই গুণ বৃদ্ধি করার টাকা।
২০১১ সালের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক
বিশেষ পরিপত্র মোতাবেক ১২৪৪ জন আইসিটি শিক্ষকের এমপিও বন্ধ। প্রতিষ্ঠান
থেকে প্রাপ্ত ২-৩ হাজার টাকাই তাঁদের একমাত্র ভরসা। মানবেতর জীবন-যাপন করা
ছাড়া তাদের কিছুই করার নেই। অর্থমন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রী, এমনকি
প্রধানমন্ত্রী সমীপে এমপিওভুক্তির দাবি করা যেন অরেণ্য রোদন। ঈদের আনন্দ
ব্যতিরেকে দুঃখ-বেদনা নিয়ে বেঁচে থাকা যেন অদৃষ্টের করুণ পরিহাস। মাননীয়
প্রধানমন্ত্রী যেখানে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে অঙ্গীকারাবদ্ধ। ৬ষ্ঠ শ্রেণি
থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়কে আবশ্যিক
হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে সেখানে উক্ত বিষয়ের শিক্ষকগণ সংশ্লিষ্টদের কাছে
অনাবশ্যিক।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইসিটি শিক্ষক ছাড়া
মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের কার্যক্রম অচল। শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি করার আন্দোলনে
প্রায়ই শিক্ষার্থীর শ্রেণির কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে কিছুটা হলেও
বিঘিœত হচ্ছে বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন। আইসিটি শিক্ষকেরা
কি এ সমাজ ও দেশের বোঝা? তাঁদের কি পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাচ্ছন্দে বেঁচে
থাকার ও ঈদের অনাবিল আনন্দ উপভোগের অধিকার নেই? আইসিটি শিক্ষকগণ ডিজিটাল
বাংলাদেশ গঠনের অন্যতম কারিগর। তাঁদের অবহেলিত রাখলে দেশের ভবিষ্যত
প্রজন্মের স্বপ্ন বাস্তবায়নে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ মহাসত্যটি সংশ্লিষ্টদের
কবে উপলব্ধি আসবে? আইসিটি শিক্ষকগণ অন্যান্য শিক্ষকদের মতো সমাজে
স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকবে সুন্দর ও স্বাভাবিকভাবে। বেঁচে থাকার দাবি কারো
করুণা নয়। এটা তার অধিকার।
আরেক মানবেতর জীবন-যাপন করে আসছেন
প্রাথমিকের ১৫ হাজারের অধিক পুল শিক্ষক। দীর্ঘ প্রায় ১ যুগ পূর্বে
পিইডিপি-২ প্রকল্পে শিক্ষক স্বল্পতা দূরীকরণে পুল শিক্ষক নিয়োগের প্রস্তাব
করা হয়। এজন্য উক্ত প্রকল্পে দুশো কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়।
উক্ত প্রকল্পে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের
অগ্রাধিকার দিয়ে ১ যুগ পূর্বে দৈনিক দুশো টাকা করে ভাতা প্রদানের প্রস্তাব
দেওয়া হয়। অথচ দীর্ঘ ১ যুগ পরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মত সমযোগ্যতা
চেয়ে নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই বাছাই করে পুল শিক্ষক নিয়োগ দান করা
হয়। অথচ ভাতা রাখা হয়, এক যুগ পূর্বের দুশো টাকা, তরুণ মেধাবীদের অন্যান্য
শিক্ষকদের মতো সকল সুবিধা বঞ্চিত করে দৈনিক ভিত্তিতে মাত্র দুশো টাকা ভাতা
প্রদান করা এ যেন, পুল শিক্ষকদের ওপর সরকারের নির্মম পরিহাস। আমাদের দেশের
মাঠে-ঘাটে ৮টা থেকে ২টা পর্যন্ত কর্মরত শ্রমিকের দৈনিক মজুরী কমপক্ষে ৫০০
টাকা।
প্রাথমিকের পুল শিক্ষকগণ মহামান্য
সুপ্রীম কোর্টে দেশের সকল প্রাথমিক শিক্ষকের মতো নিয়োগদানের জন্য রিট আবেদন
করেন। মহামান্য আদালত শিক্ষকদের আবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রায়
প্রদান করেন। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের সময়ক্ষেপণ মোটেই কাম্য
নয়। নন এমপিও, আইসিটি ও পুল শিক্ষকদের দুঃখ-কষ্ট বেদনার কথা লিখতে গিয়ে
লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর রচিত পাদটিকা গল্পের পণ্ডিত মহাশয়ের স্মৃতি আজ ভেসে
উঠলো। পণ্ডিত মহাশয় ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বললেন ‘বলতো দেখি লাট সাহেবের
কুকুরের পেছনে মাসে পঁচাত্তর টাকা খরচ হয়, আর সে কুকুরের যদি তিনটি ঠ্যাং
থাকে তবে প্রতি ঠ্যাংয়ের জন্য কত টাকা খরচ হয়?’ ছাত্ররা উত্তরে বললো ২৫
টাকা। তারপর পণ্ডিত মহাশয় বললেন, উত্তম উত্তর। অপিচ, আমি, ব্রাক্ষ্মণী,
বৃদ্ধমাতা, তিন কন্যা, বিধবা, পিসি, দাসী একুনে আটজন। আমাদের সকলের জীবন
ধারণের জন্য আমি মাসে পাই পঁচিশ টাকা। ছাত্রদের উদ্দেশ্যে তিনি বললেন, এই
ব্রাক্ষ্মণ পরিবার লাট সাহেবের কুকুরের কয়টা ঠ্যাং এর সমান? পুরো শ্রেণির
ছাত্ররা মাথা নিঁচু করে বসে রইল। সমস্ত ক্লাস নিস্তব্ধ। পণ্ডিত মহাশয়ের মুখ
লজ্জা, তিক্ততা ও ঘৃণায় বিকৃত হয়ে গিয়েছে। ক্লাসের সব ছাত্র বুঝতে পেরেছে,
কেউ বাদ যায়নি। পণ্ডিত মহাশয়ের আত্মঅবমাননার কী নির্মম পরিহাস সর্বাঙ্গে
মেখেছেন আমাদের স্বাক্ষী রেখে।
পণ্ডিত মহাশয় যেন উত্তরের প্রতীক্ষায়
বসেই আছেন। এই নিস্তব্ধতার স্মৃতি আমাদের মন থেকে মুছে যায়নি। পণ্ডিত মহাশয়
যদি বেঁচে থাকতেন ননএমপিও, আইসিটি ও পুল শিক্ষকদের নিয়ে সরকারের
দৃষ্টিভঙ্গি ও মানবেতর ভাবে বেঁচে থাকার যন্ত্রণা কিভাবে বর্ণনা করতেন জানি
না? সংশ্লিষ্টরা তথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের সুধি সমাজ শিক্ষকদের
মানবেতর জীবন যাপনের যন্ত্রণা কতটুকু নিজেদের অঙ্গে মাখবেন। পণ্ডিত মহাশয়ের
মত শিক্ষক সমাজও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
আজকের দিনে প্রাথমিকে সহকারিদের মর্যাদা
ও বেতন স্কেল থার্ড ক্লাস। জাতির বিবেক আজ নিশ্চুপ। বিশ্বের সকল দেশের
শিক্ষকদের মর্যাদা ১ম শ্রেণির। স্বাধীন দেশের শিক্ষক সমাজ আজ অবহেলিত।
শিক্ষক সমাজকে মর্যাদা ও আর্থিক কষ্টে রেখে দেশের কাঙ্খিত উন্নয়ন বিঘ্নিত
হবে। জাতি গড়ার কারিগরদের মর্যাদা নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন-যাপন করুক ও
ঈদের অনাবিল আনন্দ তাঁদের মাঝে বিরাজ করুক। এ শুভ কামনায়।
লেখক : মোঃ সিদ্দিকুর রহমান, পরামর্শক, দৈনিকশিক্ষাডটকম ও আহ্বায়ক, প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম
- See more at:
http://www.dainikshiksha.com/%E0%A6%88%E0%A6%A6-%E0%A6%86%E0%A6%A8%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6-%E0%A6%AC%E0%A6%9E%E0%A7%8D%E0%A6%9A%E0%A6%BF%E0%A6%A4-%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%B2-%E0%A6%93-%E0%A6%86%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%BF/47086#sthash.kf6rDpzB.GVbkTPAi.dpuf
বাঙালির
ইতিহাসে এবারের ঈদে আগমন ঘটেছে আতঙ্ক ও শোকের বার্তা নিয়ে। তবুও ব্যথিত মন
নিয়েই বাঙালি জাতি ঈদের আনন্দ উপভোগ করেছে। ইসলাম ধর্মের অন্যতম ধর্মীয়
উৎসব ঈদ। এ উৎসবে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন ধনি-দরিদ্র সকল ভেদাভেদ ভুলে
ঈদের নামাজ এক কাতারে পালন করে। পরস্পরে কোলাকুলির মাধ্যমে সকল ভেদাভেদ
ভুলে যায়।
ইসলাম শান্তির ধর্ম। কোন রকম অশান্তি
ইসলাম সমর্থন করে না। কোন প্রকার খুন বা অন্য ধর্মের ওপর অত্যাচার ইসলাম বা
অন্যকোন ধর্মে স্বীকৃত নয়। এ অপকর্ম সকল ধর্মেই মহাপাপ হিসেবে চিহ্নিত।
কোন বিবেকবান মানুষ সন্ত্রাস বা মানুষ খুনের মত অপকর্ম করতে পারে না।
একমাত্র বিবেক বর্জিত মানুষই এসব অপকর্ম করে থাকে।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা যুদ্ধের
সময় দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধ
হয়েছিল। আজকের দিনে পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায়, গ্রামে-গঞ্জে, জঙ্গি
নির্মূলের জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। প্রাথমিক, উচ্চ
বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষক দেশের তৃণমূল পর্যায় থেকে গ্রাম-গঞ্জ ও
শহরে সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। তারা জঙ্গিবাদবিরোধী কাজে জনগণকে সচেতন করাসহ
জঙ্গি দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আশা করি শিক্ষক সমাজ আজ
দেশের ক্রান্তিলগ্নে এগিয়ে আসবে।
একটি বিশেষ মহলের আন্তরিকতার অভাবে
দেশের কতিপয় শিক্ষালয়ে জঙ্গির আস্তানা হিসেবে গড়ে উঠেছে। স্বাধীনতার দীর্ঘ
সময়ের পরেও শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে দেশের সুনাগরিক গড়ে তোলা
সম্ভব হয়নি। সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান। কোন কোন প্রতিষ্ঠানে স্বাধীনতাবিরোধী তথা জঙ্গি তৈরির কারখানা
হিসেবে পরিণত হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর
সরকারি নিয়ন্ত্রণ বা নজরদারী আজকের দিনে জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের
শিক্ষা তথা শিক্ষকদের সমস্যা নিরসণে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা আজ
প্রশ্নবিদ্ধ। দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষাবিদসহ সচেতন জনসাধারণ শিক্ষার বাজেটে
যথাযথ বরাদ্দের জন্য চিৎকার করে আসছেন। এ চিৎকার অনেকটা ‘কামারের দোকানে
কোরআন পড়া’ প্রবাদের মতো। এ চিৎকার যেন অর্থ মন্ত্রণালয় তথা সংশ্লিষ্টদের
কাছে করুণা ভিক্ষা প্রত্যাশা।
শিক্ষায় নানা অব্যবস্থাপনার অবকাঠামোগত
কিছুটা উন্নয়ন, বিনামূল্যে বই বিতরণের সাহসী পদক্ষেপের সফলতা অনেকটা ম্লান
হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষক স্বল্পতা, নোট গাইডের ব্যাপক সফলতা, কোচিং নির্ভর
শিক্ষা দিন দিন বেড়েই চলছে। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষক জাতি গড়ার
কারিগর। এ বাস্তবতা উপলব্ধি করার জ্ঞান সংশ্লিষ্টদের মাঝ থেকে যেন হারিয়ে
যাচ্ছে। তারা বিষয়টিকে এড়িয়ে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও নানা অনৈতিক কাজে ঠেলে
দিচ্ছে জাতির ভবিষ্যত নাগরিক শিশু-কিশোরদের। শিক্ষকদের প্রতি অমানবিক
কর্মকাণ্ড সংশ্লিষ্ট হৃদয়ে পাথর সমস্থান পেয়েছে। কেন এ পাথর সরাবার বা
নিশ্চিহ্ন করার উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়।
স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষকেরা
মানবেতর জীবন যাপন করছে। আর এক শ্রেণির লুটেরা সরকারি সম্পদ, ব্যাংকের অর্থ
লুট-আত্মসাৎ করে সম্পদের পাহাড় বানাচ্ছে এ দৃশ্য মেনে নেয়া কষ্টকর
ব্যাপার। ননএমপিও ভুক্ত স্কুল-কলেজ, আইসিটি ও প্রাথমিকের পুল শিক্ষক অর্থের
অভাবে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। তাঁরা ঈদের আনন্দের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত
হচ্ছে। বিপুল সংখ্যক ননএমপিও ভুক্ত স্কুল-কলেজসহ আইসিটি শিক্ষক ও
প্রাথমিকের পুল শিক্ষকদের স্থায়ী পদে নিয়োগসহ এমপিওভুক্তকরণের টাকা বিশাল
বাজেটে স্থান পায় নাই। স্থান পেয়েছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে
তৃণমূল পর্যায়ে কর্মকর্তা, কর্মচারীর বেতন দুই গুণ বৃদ্ধি করার টাকা।
২০১১ সালের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক
বিশেষ পরিপত্র মোতাবেক ১২৪৪ জন আইসিটি শিক্ষকের এমপিও বন্ধ। প্রতিষ্ঠান
থেকে প্রাপ্ত ২-৩ হাজার টাকাই তাঁদের একমাত্র ভরসা। মানবেতর জীবন-যাপন করা
ছাড়া তাদের কিছুই করার নেই। অর্থমন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রী, এমনকি
প্রধানমন্ত্রী সমীপে এমপিওভুক্তির দাবি করা যেন অরেণ্য রোদন। ঈদের আনন্দ
ব্যতিরেকে দুঃখ-বেদনা নিয়ে বেঁচে থাকা যেন অদৃষ্টের করুণ পরিহাস। মাননীয়
প্রধানমন্ত্রী যেখানে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে অঙ্গীকারাবদ্ধ। ৬ষ্ঠ শ্রেণি
থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়কে আবশ্যিক
হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে সেখানে উক্ত বিষয়ের শিক্ষকগণ সংশ্লিষ্টদের কাছে
অনাবশ্যিক।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইসিটি শিক্ষক ছাড়া
মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের কার্যক্রম অচল। শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি করার আন্দোলনে
প্রায়ই শিক্ষার্থীর শ্রেণির কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে কিছুটা হলেও
বিঘিœত হচ্ছে বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন। আইসিটি শিক্ষকেরা
কি এ সমাজ ও দেশের বোঝা? তাঁদের কি পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাচ্ছন্দে বেঁচে
থাকার ও ঈদের অনাবিল আনন্দ উপভোগের অধিকার নেই? আইসিটি শিক্ষকগণ ডিজিটাল
বাংলাদেশ গঠনের অন্যতম কারিগর। তাঁদের অবহেলিত রাখলে দেশের ভবিষ্যত
প্রজন্মের স্বপ্ন বাস্তবায়নে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ মহাসত্যটি সংশ্লিষ্টদের
কবে উপলব্ধি আসবে? আইসিটি শিক্ষকগণ অন্যান্য শিক্ষকদের মতো সমাজে
স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকবে সুন্দর ও স্বাভাবিকভাবে। বেঁচে থাকার দাবি কারো
করুণা নয়। এটা তার অধিকার।
আরেক মানবেতর জীবন-যাপন করে আসছেন
প্রাথমিকের ১৫ হাজারের অধিক পুল শিক্ষক। দীর্ঘ প্রায় ১ যুগ পূর্বে
পিইডিপি-২ প্রকল্পে শিক্ষক স্বল্পতা দূরীকরণে পুল শিক্ষক নিয়োগের প্রস্তাব
করা হয়। এজন্য উক্ত প্রকল্পে দুশো কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়।
উক্ত প্রকল্পে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের
অগ্রাধিকার দিয়ে ১ যুগ পূর্বে দৈনিক দুশো টাকা করে ভাতা প্রদানের প্রস্তাব
দেওয়া হয়। অথচ দীর্ঘ ১ যুগ পরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মত সমযোগ্যতা
চেয়ে নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই বাছাই করে পুল শিক্ষক নিয়োগ দান করা
হয়। অথচ ভাতা রাখা হয়, এক যুগ পূর্বের দুশো টাকা, তরুণ মেধাবীদের অন্যান্য
শিক্ষকদের মতো সকল সুবিধা বঞ্চিত করে দৈনিক ভিত্তিতে মাত্র দুশো টাকা ভাতা
প্রদান করা এ যেন, পুল শিক্ষকদের ওপর সরকারের নির্মম পরিহাস। আমাদের দেশের
মাঠে-ঘাটে ৮টা থেকে ২টা পর্যন্ত কর্মরত শ্রমিকের দৈনিক মজুরী কমপক্ষে ৫০০
টাকা।
প্রাথমিকের পুল শিক্ষকগণ মহামান্য
সুপ্রীম কোর্টে দেশের সকল প্রাথমিক শিক্ষকের মতো নিয়োগদানের জন্য রিট আবেদন
করেন। মহামান্য আদালত শিক্ষকদের আবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রায়
প্রদান করেন। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের সময়ক্ষেপণ মোটেই কাম্য
নয়। নন এমপিও, আইসিটি ও পুল শিক্ষকদের দুঃখ-কষ্ট বেদনার কথা লিখতে গিয়ে
লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর রচিত পাদটিকা গল্পের পণ্ডিত মহাশয়ের স্মৃতি আজ ভেসে
উঠলো। পণ্ডিত মহাশয় ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বললেন ‘বলতো দেখি লাট সাহেবের
কুকুরের পেছনে মাসে পঁচাত্তর টাকা খরচ হয়, আর সে কুকুরের যদি তিনটি ঠ্যাং
থাকে তবে প্রতি ঠ্যাংয়ের জন্য কত টাকা খরচ হয়?’ ছাত্ররা উত্তরে বললো ২৫
টাকা। তারপর পণ্ডিত মহাশয় বললেন, উত্তম উত্তর। অপিচ, আমি, ব্রাক্ষ্মণী,
বৃদ্ধমাতা, তিন কন্যা, বিধবা, পিসি, দাসী একুনে আটজন। আমাদের সকলের জীবন
ধারণের জন্য আমি মাসে পাই পঁচিশ টাকা। ছাত্রদের উদ্দেশ্যে তিনি বললেন, এই
ব্রাক্ষ্মণ পরিবার লাট সাহেবের কুকুরের কয়টা ঠ্যাং এর সমান? পুরো শ্রেণির
ছাত্ররা মাথা নিঁচু করে বসে রইল। সমস্ত ক্লাস নিস্তব্ধ। পণ্ডিত মহাশয়ের মুখ
লজ্জা, তিক্ততা ও ঘৃণায় বিকৃত হয়ে গিয়েছে। ক্লাসের সব ছাত্র বুঝতে পেরেছে,
কেউ বাদ যায়নি। পণ্ডিত মহাশয়ের আত্মঅবমাননার কী নির্মম পরিহাস সর্বাঙ্গে
মেখেছেন আমাদের স্বাক্ষী রেখে।
পণ্ডিত মহাশয় যেন উত্তরের প্রতীক্ষায়
বসেই আছেন। এই নিস্তব্ধতার স্মৃতি আমাদের মন থেকে মুছে যায়নি। পণ্ডিত মহাশয়
যদি বেঁচে থাকতেন ননএমপিও, আইসিটি ও পুল শিক্ষকদের নিয়ে সরকারের
দৃষ্টিভঙ্গি ও মানবেতর ভাবে বেঁচে থাকার যন্ত্রণা কিভাবে বর্ণনা করতেন জানি
না? সংশ্লিষ্টরা তথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের সুধি সমাজ শিক্ষকদের
মানবেতর জীবন যাপনের যন্ত্রণা কতটুকু নিজেদের অঙ্গে মাখবেন। পণ্ডিত মহাশয়ের
মত শিক্ষক সমাজও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
আজকের দিনে প্রাথমিকে সহকারিদের মর্যাদা
ও বেতন স্কেল থার্ড ক্লাস। জাতির বিবেক আজ নিশ্চুপ। বিশ্বের সকল দেশের
শিক্ষকদের মর্যাদা ১ম শ্রেণির। স্বাধীন দেশের শিক্ষক সমাজ আজ অবহেলিত।
শিক্ষক সমাজকে মর্যাদা ও আর্থিক কষ্টে রেখে দেশের কাঙ্খিত উন্নয়ন বিঘ্নিত
হবে। জাতি গড়ার কারিগরদের মর্যাদা নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন-যাপন করুক ও
ঈদের অনাবিল আনন্দ তাঁদের মাঝে বিরাজ করুক। এ শুভ কামনায়।
লেখক : মোঃ সিদ্দিকুর রহমান, পরামর্শক, দৈনিকশিক্ষাডটকম ও আহ্বায়ক, প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম
- See more at:
http://www.dainikshiksha.com/%E0%A6%88%E0%A6%A6-%E0%A6%86%E0%A6%A8%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6-%E0%A6%AC%E0%A6%9E%E0%A7%8D%E0%A6%9A%E0%A6%BF%E0%A6%A4-%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%B2-%E0%A6%93-%E0%A6%86%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%BF/47086#sthash.kf6rDpzB.GVbkTPAi.dpuf
বাঙালির
ইতিহাসে এবারের ঈদে আগমন ঘটেছে আতঙ্ক ও শোকের বার্তা নিয়ে। তবুও ব্যথিত মন
নিয়েই বাঙালি জাতি ঈদের আনন্দ উপভোগ করেছে। ইসলাম ধর্মের অন্যতম ধর্মীয়
উৎসব ঈদ। এ উৎসবে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন ধনি-দরিদ্র সকল ভেদাভেদ ভুলে
ঈদের নামাজ এক কাতারে পালন করে। পরস্পরে কোলাকুলির মাধ্যমে সকল ভেদাভেদ
ভুলে যায়।
ইসলাম শান্তির ধর্ম। কোন রকম অশান্তি
ইসলাম সমর্থন করে না। কোন প্রকার খুন বা অন্য ধর্মের ওপর অত্যাচার ইসলাম বা
অন্যকোন ধর্মে স্বীকৃত নয়। এ অপকর্ম সকল ধর্মেই মহাপাপ হিসেবে চিহ্নিত।
কোন বিবেকবান মানুষ সন্ত্রাস বা মানুষ খুনের মত অপকর্ম করতে পারে না।
একমাত্র বিবেক বর্জিত মানুষই এসব অপকর্ম করে থাকে।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা যুদ্ধের
সময় দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধ
হয়েছিল। আজকের দিনে পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায়, গ্রামে-গঞ্জে, জঙ্গি
নির্মূলের জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। প্রাথমিক, উচ্চ
বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষক দেশের তৃণমূল পর্যায় থেকে গ্রাম-গঞ্জ ও
শহরে সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। তারা জঙ্গিবাদবিরোধী কাজে জনগণকে সচেতন করাসহ
জঙ্গি দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আশা করি শিক্ষক সমাজ আজ
দেশের ক্রান্তিলগ্নে এগিয়ে আসবে।
একটি বিশেষ মহলের আন্তরিকতার অভাবে
দেশের কতিপয় শিক্ষালয়ে জঙ্গির আস্তানা হিসেবে গড়ে উঠেছে। স্বাধীনতার দীর্ঘ
সময়ের পরেও শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে দেশের সুনাগরিক গড়ে তোলা
সম্ভব হয়নি। সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান। কোন কোন প্রতিষ্ঠানে স্বাধীনতাবিরোধী তথা জঙ্গি তৈরির কারখানা
হিসেবে পরিণত হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর
সরকারি নিয়ন্ত্রণ বা নজরদারী আজকের দিনে জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের
শিক্ষা তথা শিক্ষকদের সমস্যা নিরসণে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা আজ
প্রশ্নবিদ্ধ। দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষাবিদসহ সচেতন জনসাধারণ শিক্ষার বাজেটে
যথাযথ বরাদ্দের জন্য চিৎকার করে আসছেন। এ চিৎকার অনেকটা ‘কামারের দোকানে
কোরআন পড়া’ প্রবাদের মতো। এ চিৎকার যেন অর্থ মন্ত্রণালয় তথা সংশ্লিষ্টদের
কাছে করুণা ভিক্ষা প্রত্যাশা।
শিক্ষায় নানা অব্যবস্থাপনার অবকাঠামোগত
কিছুটা উন্নয়ন, বিনামূল্যে বই বিতরণের সাহসী পদক্ষেপের সফলতা অনেকটা ম্লান
হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষক স্বল্পতা, নোট গাইডের ব্যাপক সফলতা, কোচিং নির্ভর
শিক্ষা দিন দিন বেড়েই চলছে। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষক জাতি গড়ার
কারিগর। এ বাস্তবতা উপলব্ধি করার জ্ঞান সংশ্লিষ্টদের মাঝ থেকে যেন হারিয়ে
যাচ্ছে। তারা বিষয়টিকে এড়িয়ে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও নানা অনৈতিক কাজে ঠেলে
দিচ্ছে জাতির ভবিষ্যত নাগরিক শিশু-কিশোরদের। শিক্ষকদের প্রতি অমানবিক
কর্মকাণ্ড সংশ্লিষ্ট হৃদয়ে পাথর সমস্থান পেয়েছে। কেন এ পাথর সরাবার বা
নিশ্চিহ্ন করার উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়।
স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষকেরা
মানবেতর জীবন যাপন করছে। আর এক শ্রেণির লুটেরা সরকারি সম্পদ, ব্যাংকের অর্থ
লুট-আত্মসাৎ করে সম্পদের পাহাড় বানাচ্ছে এ দৃশ্য মেনে নেয়া কষ্টকর
ব্যাপার। ননএমপিও ভুক্ত স্কুল-কলেজ, আইসিটি ও প্রাথমিকের পুল শিক্ষক অর্থের
অভাবে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। তাঁরা ঈদের আনন্দের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত
হচ্ছে। বিপুল সংখ্যক ননএমপিও ভুক্ত স্কুল-কলেজসহ আইসিটি শিক্ষক ও
প্রাথমিকের পুল শিক্ষকদের স্থায়ী পদে নিয়োগসহ এমপিওভুক্তকরণের টাকা বিশাল
বাজেটে স্থান পায় নাই। স্থান পেয়েছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে
তৃণমূল পর্যায়ে কর্মকর্তা, কর্মচারীর বেতন দুই গুণ বৃদ্ধি করার টাকা।
২০১১ সালের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক
বিশেষ পরিপত্র মোতাবেক ১২৪৪ জন আইসিটি শিক্ষকের এমপিও বন্ধ। প্রতিষ্ঠান
থেকে প্রাপ্ত ২-৩ হাজার টাকাই তাঁদের একমাত্র ভরসা। মানবেতর জীবন-যাপন করা
ছাড়া তাদের কিছুই করার নেই। অর্থমন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রী, এমনকি
প্রধানমন্ত্রী সমীপে এমপিওভুক্তির দাবি করা যেন অরেণ্য রোদন। ঈদের আনন্দ
ব্যতিরেকে দুঃখ-বেদনা নিয়ে বেঁচে থাকা যেন অদৃষ্টের করুণ পরিহাস। মাননীয়
প্রধানমন্ত্রী যেখানে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে অঙ্গীকারাবদ্ধ। ৬ষ্ঠ শ্রেণি
থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়কে আবশ্যিক
হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে সেখানে উক্ত বিষয়ের শিক্ষকগণ সংশ্লিষ্টদের কাছে
অনাবশ্যিক।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইসিটি শিক্ষক ছাড়া
মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের কার্যক্রম অচল। শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি করার আন্দোলনে
প্রায়ই শিক্ষার্থীর শ্রেণির কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে কিছুটা হলেও
বিঘিœত হচ্ছে বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন। আইসিটি শিক্ষকেরা
কি এ সমাজ ও দেশের বোঝা? তাঁদের কি পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাচ্ছন্দে বেঁচে
থাকার ও ঈদের অনাবিল আনন্দ উপভোগের অধিকার নেই? আইসিটি শিক্ষকগণ ডিজিটাল
বাংলাদেশ গঠনের অন্যতম কারিগর। তাঁদের অবহেলিত রাখলে দেশের ভবিষ্যত
প্রজন্মের স্বপ্ন বাস্তবায়নে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ মহাসত্যটি সংশ্লিষ্টদের
কবে উপলব্ধি আসবে? আইসিটি শিক্ষকগণ অন্যান্য শিক্ষকদের মতো সমাজে
স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকবে সুন্দর ও স্বাভাবিকভাবে। বেঁচে থাকার দাবি কারো
করুণা নয়। এটা তার অধিকার।
আরেক মানবেতর জীবন-যাপন করে আসছেন
প্রাথমিকের ১৫ হাজারের অধিক পুল শিক্ষক। দীর্ঘ প্রায় ১ যুগ পূর্বে
পিইডিপি-২ প্রকল্পে শিক্ষক স্বল্পতা দূরীকরণে পুল শিক্ষক নিয়োগের প্রস্তাব
করা হয়। এজন্য উক্ত প্রকল্পে দুশো কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়।
উক্ত প্রকল্পে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের
অগ্রাধিকার দিয়ে ১ যুগ পূর্বে দৈনিক দুশো টাকা করে ভাতা প্রদানের প্রস্তাব
দেওয়া হয়। অথচ দীর্ঘ ১ যুগ পরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মত সমযোগ্যতা
চেয়ে নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই বাছাই করে পুল শিক্ষক নিয়োগ দান করা
হয়। অথচ ভাতা রাখা হয়, এক যুগ পূর্বের দুশো টাকা, তরুণ মেধাবীদের অন্যান্য
শিক্ষকদের মতো সকল সুবিধা বঞ্চিত করে দৈনিক ভিত্তিতে মাত্র দুশো টাকা ভাতা
প্রদান করা এ যেন, পুল শিক্ষকদের ওপর সরকারের নির্মম পরিহাস। আমাদের দেশের
মাঠে-ঘাটে ৮টা থেকে ২টা পর্যন্ত কর্মরত শ্রমিকের দৈনিক মজুরী কমপক্ষে ৫০০
টাকা।
প্রাথমিকের পুল শিক্ষকগণ মহামান্য
সুপ্রীম কোর্টে দেশের সকল প্রাথমিক শিক্ষকের মতো নিয়োগদানের জন্য রিট আবেদন
করেন। মহামান্য আদালত শিক্ষকদের আবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রায়
প্রদান করেন। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের সময়ক্ষেপণ মোটেই কাম্য
নয়। নন এমপিও, আইসিটি ও পুল শিক্ষকদের দুঃখ-কষ্ট বেদনার কথা লিখতে গিয়ে
লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর রচিত পাদটিকা গল্পের পণ্ডিত মহাশয়ের স্মৃতি আজ ভেসে
উঠলো। পণ্ডিত মহাশয় ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বললেন ‘বলতো দেখি লাট সাহেবের
কুকুরের পেছনে মাসে পঁচাত্তর টাকা খরচ হয়, আর সে কুকুরের যদি তিনটি ঠ্যাং
থাকে তবে প্রতি ঠ্যাংয়ের জন্য কত টাকা খরচ হয়?’ ছাত্ররা উত্তরে বললো ২৫
টাকা। তারপর পণ্ডিত মহাশয় বললেন, উত্তম উত্তর। অপিচ, আমি, ব্রাক্ষ্মণী,
বৃদ্ধমাতা, তিন কন্যা, বিধবা, পিসি, দাসী একুনে আটজন। আমাদের সকলের জীবন
ধারণের জন্য আমি মাসে পাই পঁচিশ টাকা। ছাত্রদের উদ্দেশ্যে তিনি বললেন, এই
ব্রাক্ষ্মণ পরিবার লাট সাহেবের কুকুরের কয়টা ঠ্যাং এর সমান? পুরো শ্রেণির
ছাত্ররা মাথা নিঁচু করে বসে রইল। সমস্ত ক্লাস নিস্তব্ধ। পণ্ডিত মহাশয়ের মুখ
লজ্জা, তিক্ততা ও ঘৃণায় বিকৃত হয়ে গিয়েছে। ক্লাসের সব ছাত্র বুঝতে পেরেছে,
কেউ বাদ যায়নি। পণ্ডিত মহাশয়ের আত্মঅবমাননার কী নির্মম পরিহাস সর্বাঙ্গে
মেখেছেন আমাদের স্বাক্ষী রেখে।
পণ্ডিত মহাশয় যেন উত্তরের প্রতীক্ষায়
বসেই আছেন। এই নিস্তব্ধতার স্মৃতি আমাদের মন থেকে মুছে যায়নি। পণ্ডিত মহাশয়
যদি বেঁচে থাকতেন ননএমপিও, আইসিটি ও পুল শিক্ষকদের নিয়ে সরকারের
দৃষ্টিভঙ্গি ও মানবেতর ভাবে বেঁচে থাকার যন্ত্রণা কিভাবে বর্ণনা করতেন জানি
না? সংশ্লিষ্টরা তথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের সুধি সমাজ শিক্ষকদের
মানবেতর জীবন যাপনের যন্ত্রণা কতটুকু নিজেদের অঙ্গে মাখবেন। পণ্ডিত মহাশয়ের
মত শিক্ষক সমাজও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
আজকের দিনে প্রাথমিকে সহকারিদের মর্যাদা
ও বেতন স্কেল থার্ড ক্লাস। জাতির বিবেক আজ নিশ্চুপ। বিশ্বের সকল দেশের
শিক্ষকদের মর্যাদা ১ম শ্রেণির। স্বাধীন দেশের শিক্ষক সমাজ আজ অবহেলিত।
শিক্ষক সমাজকে মর্যাদা ও আর্থিক কষ্টে রেখে দেশের কাঙ্খিত উন্নয়ন বিঘ্নিত
হবে। জাতি গড়ার কারিগরদের মর্যাদা নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন-যাপন করুক ও
ঈদের অনাবিল আনন্দ তাঁদের মাঝে বিরাজ করুক। এ শুভ কামনায়।
লেখক : মোঃ সিদ্দিকুর রহমান, পরামর্শক, দৈনিকশিক্ষাডটকম ও আহ্বায়ক, প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম
- See more at:
http://www.dainikshiksha.com/%E0%A6%88%E0%A6%A6-%E0%A6%86%E0%A6%A8%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6-%E0%A6%AC%E0%A6%9E%E0%A7%8D%E0%A6%9A%E0%A6%BF%E0%A6%A4-%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%B2-%E0%A6%93-%E0%A6%86%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%BF/47086#sthash.kf6rDpzB.GVbkTPAi.dpuf
বাঙালির
ইতিহাসে এবারের ঈদে আগমন ঘটেছে আতঙ্ক ও শোকের বার্তা নিয়ে। তবুও ব্যথিত মন
নিয়েই বাঙালি জাতি ঈদের আনন্দ উপভোগ করেছে। ইসলাম ধর্মের অন্যতম ধর্মীয়
উৎসব ঈদ। এ উৎসবে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন ধনি-দরিদ্র সকল ভেদাভেদ ভুলে
ঈদের নামাজ এক কাতারে পালন করে। পরস্পরে কোলাকুলির মাধ্যমে সকল ভেদাভেদ
ভুলে যায়।
ইসলাম শান্তির ধর্ম। কোন রকম অশান্তি
ইসলাম সমর্থন করে না। কোন প্রকার খুন বা অন্য ধর্মের ওপর অত্যাচার ইসলাম বা
অন্যকোন ধর্মে স্বীকৃত নয়। এ অপকর্ম সকল ধর্মেই মহাপাপ হিসেবে চিহ্নিত।
কোন বিবেকবান মানুষ সন্ত্রাস বা মানুষ খুনের মত অপকর্ম করতে পারে না।
একমাত্র বিবেক বর্জিত মানুষই এসব অপকর্ম করে থাকে।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা যুদ্ধের
সময় দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধ
হয়েছিল। আজকের দিনে পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায়, গ্রামে-গঞ্জে, জঙ্গি
নির্মূলের জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। প্রাথমিক, উচ্চ
বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষক দেশের তৃণমূল পর্যায় থেকে গ্রাম-গঞ্জ ও
শহরে সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। তারা জঙ্গিবাদবিরোধী কাজে জনগণকে সচেতন করাসহ
জঙ্গি দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আশা করি শিক্ষক সমাজ আজ
দেশের ক্রান্তিলগ্নে এগিয়ে আসবে।
একটি বিশেষ মহলের আন্তরিকতার অভাবে
দেশের কতিপয় শিক্ষালয়ে জঙ্গির আস্তানা হিসেবে গড়ে উঠেছে। স্বাধীনতার দীর্ঘ
সময়ের পরেও শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে দেশের সুনাগরিক গড়ে তোলা
সম্ভব হয়নি। সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান। কোন কোন প্রতিষ্ঠানে স্বাধীনতাবিরোধী তথা জঙ্গি তৈরির কারখানা
হিসেবে পরিণত হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর
সরকারি নিয়ন্ত্রণ বা নজরদারী আজকের দিনে জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের
শিক্ষা তথা শিক্ষকদের সমস্যা নিরসণে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা আজ
প্রশ্নবিদ্ধ। দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষাবিদসহ সচেতন জনসাধারণ শিক্ষার বাজেটে
যথাযথ বরাদ্দের জন্য চিৎকার করে আসছেন। এ চিৎকার অনেকটা ‘কামারের দোকানে
কোরআন পড়া’ প্রবাদের মতো। এ চিৎকার যেন অর্থ মন্ত্রণালয় তথা সংশ্লিষ্টদের
কাছে করুণা ভিক্ষা প্রত্যাশা।
শিক্ষায় নানা অব্যবস্থাপনার অবকাঠামোগত
কিছুটা উন্নয়ন, বিনামূল্যে বই বিতরণের সাহসী পদক্ষেপের সফলতা অনেকটা ম্লান
হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষক স্বল্পতা, নোট গাইডের ব্যাপক সফলতা, কোচিং নির্ভর
শিক্ষা দিন দিন বেড়েই চলছে। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষক জাতি গড়ার
কারিগর। এ বাস্তবতা উপলব্ধি করার জ্ঞান সংশ্লিষ্টদের মাঝ থেকে যেন হারিয়ে
যাচ্ছে। তারা বিষয়টিকে এড়িয়ে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও নানা অনৈতিক কাজে ঠেলে
দিচ্ছে জাতির ভবিষ্যত নাগরিক শিশু-কিশোরদের। শিক্ষকদের প্রতি অমানবিক
কর্মকাণ্ড সংশ্লিষ্ট হৃদয়ে পাথর সমস্থান পেয়েছে। কেন এ পাথর সরাবার বা
নিশ্চিহ্ন করার উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়।
স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষকেরা
মানবেতর জীবন যাপন করছে। আর এক শ্রেণির লুটেরা সরকারি সম্পদ, ব্যাংকের অর্থ
লুট-আত্মসাৎ করে সম্পদের পাহাড় বানাচ্ছে এ দৃশ্য মেনে নেয়া কষ্টকর
ব্যাপার। ননএমপিও ভুক্ত স্কুল-কলেজ, আইসিটি ও প্রাথমিকের পুল শিক্ষক অর্থের
অভাবে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। তাঁরা ঈদের আনন্দের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত
হচ্ছে। বিপুল সংখ্যক ননএমপিও ভুক্ত স্কুল-কলেজসহ আইসিটি শিক্ষক ও
প্রাথমিকের পুল শিক্ষকদের স্থায়ী পদে নিয়োগসহ এমপিওভুক্তকরণের টাকা বিশাল
বাজেটে স্থান পায় নাই। স্থান পেয়েছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে
তৃণমূল পর্যায়ে কর্মকর্তা, কর্মচারীর বেতন দুই গুণ বৃদ্ধি করার টাকা।
২০১১ সালের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক
বিশেষ পরিপত্র মোতাবেক ১২৪৪ জন আইসিটি শিক্ষকের এমপিও বন্ধ। প্রতিষ্ঠান
থেকে প্রাপ্ত ২-৩ হাজার টাকাই তাঁদের একমাত্র ভরসা। মানবেতর জীবন-যাপন করা
ছাড়া তাদের কিছুই করার নেই। অর্থমন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রী, এমনকি
প্রধানমন্ত্রী সমীপে এমপিওভুক্তির দাবি করা যেন অরেণ্য রোদন। ঈদের আনন্দ
ব্যতিরেকে দুঃখ-বেদনা নিয়ে বেঁচে থাকা যেন অদৃষ্টের করুণ পরিহাস। মাননীয়
প্রধানমন্ত্রী যেখানে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে অঙ্গীকারাবদ্ধ। ৬ষ্ঠ শ্রেণি
থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়কে আবশ্যিক
হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে সেখানে উক্ত বিষয়ের শিক্ষকগণ সংশ্লিষ্টদের কাছে
অনাবশ্যিক।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইসিটি শিক্ষক ছাড়া
মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের কার্যক্রম অচল। শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি করার আন্দোলনে
প্রায়ই শিক্ষার্থীর শ্রেণির কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে কিছুটা হলেও
বিঘিœত হচ্ছে বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন। আইসিটি শিক্ষকেরা
কি এ সমাজ ও দেশের বোঝা? তাঁদের কি পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাচ্ছন্দে বেঁচে
থাকার ও ঈদের অনাবিল আনন্দ উপভোগের অধিকার নেই? আইসিটি শিক্ষকগণ ডিজিটাল
বাংলাদেশ গঠনের অন্যতম কারিগর। তাঁদের অবহেলিত রাখলে দেশের ভবিষ্যত
প্রজন্মের স্বপ্ন বাস্তবায়নে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ মহাসত্যটি সংশ্লিষ্টদের
কবে উপলব্ধি আসবে? আইসিটি শিক্ষকগণ অন্যান্য শিক্ষকদের মতো সমাজে
স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকবে সুন্দর ও স্বাভাবিকভাবে। বেঁচে থাকার দাবি কারো
করুণা নয়। এটা তার অধিকার।
আরেক মানবেতর জীবন-যাপন করে আসছেন
প্রাথমিকের ১৫ হাজারের অধিক পুল শিক্ষক। দীর্ঘ প্রায় ১ যুগ পূর্বে
পিইডিপি-২ প্রকল্পে শিক্ষক স্বল্পতা দূরীকরণে পুল শিক্ষক নিয়োগের প্রস্তাব
করা হয়। এজন্য উক্ত প্রকল্পে দুশো কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়।
উক্ত প্রকল্পে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের
অগ্রাধিকার দিয়ে ১ যুগ পূর্বে দৈনিক দুশো টাকা করে ভাতা প্রদানের প্রস্তাব
দেওয়া হয়। অথচ দীর্ঘ ১ যুগ পরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মত সমযোগ্যতা
চেয়ে নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই বাছাই করে পুল শিক্ষক নিয়োগ দান করা
হয়। অথচ ভাতা রাখা হয়, এক যুগ পূর্বের দুশো টাকা, তরুণ মেধাবীদের অন্যান্য
শিক্ষকদের মতো সকল সুবিধা বঞ্চিত করে দৈনিক ভিত্তিতে মাত্র দুশো টাকা ভাতা
প্রদান করা এ যেন, পুল শিক্ষকদের ওপর সরকারের নির্মম পরিহাস। আমাদের দেশের
মাঠে-ঘাটে ৮টা থেকে ২টা পর্যন্ত কর্মরত শ্রমিকের দৈনিক মজুরী কমপক্ষে ৫০০
টাকা।
প্রাথমিকের পুল শিক্ষকগণ মহামান্য
সুপ্রীম কোর্টে দেশের সকল প্রাথমিক শিক্ষকের মতো নিয়োগদানের জন্য রিট আবেদন
করেন। মহামান্য আদালত শিক্ষকদের আবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রায়
প্রদান করেন। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের সময়ক্ষেপণ মোটেই কাম্য
নয়। নন এমপিও, আইসিটি ও পুল শিক্ষকদের দুঃখ-কষ্ট বেদনার কথা লিখতে গিয়ে
লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর রচিত পাদটিকা গল্পের পণ্ডিত মহাশয়ের স্মৃতি আজ ভেসে
উঠলো। পণ্ডিত মহাশয় ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বললেন ‘বলতো দেখি লাট সাহেবের
কুকুরের পেছনে মাসে পঁচাত্তর টাকা খরচ হয়, আর সে কুকুরের যদি তিনটি ঠ্যাং
থাকে তবে প্রতি ঠ্যাংয়ের জন্য কত টাকা খরচ হয়?’ ছাত্ররা উত্তরে বললো ২৫
টাকা। তারপর পণ্ডিত মহাশয় বললেন, উত্তম উত্তর। অপিচ, আমি, ব্রাক্ষ্মণী,
বৃদ্ধমাতা, তিন কন্যা, বিধবা, পিসি, দাসী একুনে আটজন। আমাদের সকলের জীবন
ধারণের জন্য আমি মাসে পাই পঁচিশ টাকা। ছাত্রদের উদ্দেশ্যে তিনি বললেন, এই
ব্রাক্ষ্মণ পরিবার লাট সাহেবের কুকুরের কয়টা ঠ্যাং এর সমান? পুরো শ্রেণির
ছাত্ররা মাথা নিঁচু করে বসে রইল। সমস্ত ক্লাস নিস্তব্ধ। পণ্ডিত মহাশয়ের মুখ
লজ্জা, তিক্ততা ও ঘৃণায় বিকৃত হয়ে গিয়েছে। ক্লাসের সব ছাত্র বুঝতে পেরেছে,
কেউ বাদ যায়নি। পণ্ডিত মহাশয়ের আত্মঅবমাননার কী নির্মম পরিহাস সর্বাঙ্গে
মেখেছেন আমাদের স্বাক্ষী রেখে।
পণ্ডিত মহাশয় যেন উত্তরের প্রতীক্ষায়
বসেই আছেন। এই নিস্তব্ধতার স্মৃতি আমাদের মন থেকে মুছে যায়নি। পণ্ডিত মহাশয়
যদি বেঁচে থাকতেন ননএমপিও, আইসিটি ও পুল শিক্ষকদের নিয়ে সরকারের
দৃষ্টিভঙ্গি ও মানবেতর ভাবে বেঁচে থাকার যন্ত্রণা কিভাবে বর্ণনা করতেন জানি
না? সংশ্লিষ্টরা তথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের সুধি সমাজ শিক্ষকদের
মানবেতর জীবন যাপনের যন্ত্রণা কতটুকু নিজেদের অঙ্গে মাখবেন। পণ্ডিত মহাশয়ের
মত শিক্ষক সমাজও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
আজকের দিনে প্রাথমিকে সহকারিদের মর্যাদা
ও বেতন স্কেল থার্ড ক্লাস। জাতির বিবেক আজ নিশ্চুপ। বিশ্বের সকল দেশের
শিক্ষকদের মর্যাদা ১ম শ্রেণির। স্বাধীন দেশের শিক্ষক সমাজ আজ অবহেলিত।
শিক্ষক সমাজকে মর্যাদা ও আর্থিক কষ্টে রেখে দেশের কাঙ্খিত উন্নয়ন বিঘ্নিত
হবে। জাতি গড়ার কারিগরদের মর্যাদা নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন-যাপন করুক ও
ঈদের অনাবিল আনন্দ তাঁদের মাঝে বিরাজ করুক। এ শুভ কামনায়।
লেখক : মোঃ সিদ্দিকুর রহমান, পরামর্শক, দৈনিকশিক্ষাডটকম ও আহ্বায়ক, প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম
- See more at:
http://www.dainikshiksha.com/%E0%A6%88%E0%A6%A6-%E0%A6%86%E0%A6%A8%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6-%E0%A6%AC%E0%A6%9E%E0%A7%8D%E0%A6%9A%E0%A6%BF%E0%A6%A4-%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%B2-%E0%A6%93-%E0%A6%86%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%BF/47086#sthash.kf6rDpzB.GVbkTPAi.dpuf
বাঙালির
ইতিহাসে এবারের ঈদে আগমন ঘটেছে আতঙ্ক ও শোকের বার্তা নিয়ে। তবুও ব্যথিত মন
নিয়েই বাঙালি জাতি ঈদের আনন্দ উপভোগ করেছে। ইসলাম ধর্মের অন্যতম ধর্মীয়
উৎসব ঈদ। এ উৎসবে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন ধনি-দরিদ্র সকল ভেদাভেদ ভুলে
ঈদের নামাজ এক কাতারে পালন করে। পরস্পরে কোলাকুলির মাধ্যমে সকল ভেদাভেদ
ভুলে যায়।
ইসলাম শান্তির ধর্ম। কোন রকম অশান্তি
ইসলাম সমর্থন করে না। কোন প্রকার খুন বা অন্য ধর্মের ওপর অত্যাচার ইসলাম বা
অন্যকোন ধর্মে স্বীকৃত নয়। এ অপকর্ম সকল ধর্মেই মহাপাপ হিসেবে চিহ্নিত।
কোন বিবেকবান মানুষ সন্ত্রাস বা মানুষ খুনের মত অপকর্ম করতে পারে না।
একমাত্র বিবেক বর্জিত মানুষই এসব অপকর্ম করে থাকে।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা যুদ্ধের
সময় দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধ
হয়েছিল। আজকের দিনে পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায়, গ্রামে-গঞ্জে, জঙ্গি
নির্মূলের জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। প্রাথমিক, উচ্চ
বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষক দেশের তৃণমূল পর্যায় থেকে গ্রাম-গঞ্জ ও
শহরে সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। তারা জঙ্গিবাদবিরোধী কাজে জনগণকে সচেতন করাসহ
জঙ্গি দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আশা করি শিক্ষক সমাজ আজ
দেশের ক্রান্তিলগ্নে এগিয়ে আসবে।
একটি বিশেষ মহলের আন্তরিকতার অভাবে
দেশের কতিপয় শিক্ষালয়ে জঙ্গির আস্তানা হিসেবে গড়ে উঠেছে। স্বাধীনতার দীর্ঘ
সময়ের পরেও শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে দেশের সুনাগরিক গড়ে তোলা
সম্ভব হয়নি। সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান। কোন কোন প্রতিষ্ঠানে স্বাধীনতাবিরোধী তথা জঙ্গি তৈরির কারখানা
হিসেবে পরিণত হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর
সরকারি নিয়ন্ত্রণ বা নজরদারী আজকের দিনে জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের
শিক্ষা তথা শিক্ষকদের সমস্যা নিরসণে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা আজ
প্রশ্নবিদ্ধ। দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষাবিদসহ সচেতন জনসাধারণ শিক্ষার বাজেটে
যথাযথ বরাদ্দের জন্য চিৎকার করে আসছেন। এ চিৎকার অনেকটা ‘কামারের দোকানে
কোরআন পড়া’ প্রবাদের মতো। এ চিৎকার যেন অর্থ মন্ত্রণালয় তথা সংশ্লিষ্টদের
কাছে করুণা ভিক্ষা প্রত্যাশা।
শিক্ষায় নানা অব্যবস্থাপনার অবকাঠামোগত
কিছুটা উন্নয়ন, বিনামূল্যে বই বিতরণের সাহসী পদক্ষেপের সফলতা অনেকটা ম্লান
হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষক স্বল্পতা, নোট গাইডের ব্যাপক সফলতা, কোচিং নির্ভর
শিক্ষা দিন দিন বেড়েই চলছে। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষক জাতি গড়ার
কারিগর। এ বাস্তবতা উপলব্ধি করার জ্ঞান সংশ্লিষ্টদের মাঝ থেকে যেন হারিয়ে
যাচ্ছে। তারা বিষয়টিকে এড়িয়ে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও নানা অনৈতিক কাজে ঠেলে
দিচ্ছে জাতির ভবিষ্যত নাগরিক শিশু-কিশোরদের। শিক্ষকদের প্রতি অমানবিক
কর্মকাণ্ড সংশ্লিষ্ট হৃদয়ে পাথর সমস্থান পেয়েছে। কেন এ পাথর সরাবার বা
নিশ্চিহ্ন করার উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়।
স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষকেরা
মানবেতর জীবন যাপন করছে। আর এক শ্রেণির লুটেরা সরকারি সম্পদ, ব্যাংকের অর্থ
লুট-আত্মসাৎ করে সম্পদের পাহাড় বানাচ্ছে এ দৃশ্য মেনে নেয়া কষ্টকর
ব্যাপার। ননএমপিও ভুক্ত স্কুল-কলেজ, আইসিটি ও প্রাথমিকের পুল শিক্ষক অর্থের
অভাবে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। তাঁরা ঈদের আনন্দের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত
হচ্ছে। বিপুল সংখ্যক ননএমপিও ভুক্ত স্কুল-কলেজসহ আইসিটি শিক্ষক ও
প্রাথমিকের পুল শিক্ষকদের স্থায়ী পদে নিয়োগসহ এমপিওভুক্তকরণের টাকা বিশাল
বাজেটে স্থান পায় নাই। স্থান পেয়েছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে
তৃণমূল পর্যায়ে কর্মকর্তা, কর্মচারীর বেতন দুই গুণ বৃদ্ধি করার টাকা।
২০১১ সালের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক
বিশেষ পরিপত্র মোতাবেক ১২৪৪ জন আইসিটি শিক্ষকের এমপিও বন্ধ। প্রতিষ্ঠান
থেকে প্রাপ্ত ২-৩ হাজার টাকাই তাঁদের একমাত্র ভরসা। মানবেতর জীবন-যাপন করা
ছাড়া তাদের কিছুই করার নেই। অর্থমন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রী, এমনকি
প্রধানমন্ত্রী সমীপে এমপিওভুক্তির দাবি করা যেন অরেণ্য রোদন। ঈদের আনন্দ
ব্যতিরেকে দুঃখ-বেদনা নিয়ে বেঁচে থাকা যেন অদৃষ্টের করুণ পরিহাস। মাননীয়
প্রধানমন্ত্রী যেখানে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে অঙ্গীকারাবদ্ধ। ৬ষ্ঠ শ্রেণি
থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়কে আবশ্যিক
হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে সেখানে উক্ত বিষয়ের শিক্ষকগণ সংশ্লিষ্টদের কাছে
অনাবশ্যিক।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইসিটি শিক্ষক ছাড়া
মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের কার্যক্রম অচল। শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি করার আন্দোলনে
প্রায়ই শিক্ষার্থীর শ্রেণির কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে কিছুটা হলেও
বিঘিœত হচ্ছে বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন। আইসিটি শিক্ষকেরা
কি এ সমাজ ও দেশের বোঝা? তাঁদের কি পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাচ্ছন্দে বেঁচে
থাকার ও ঈদের অনাবিল আনন্দ উপভোগের অধিকার নেই? আইসিটি শিক্ষকগণ ডিজিটাল
বাংলাদেশ গঠনের অন্যতম কারিগর। তাঁদের অবহেলিত রাখলে দেশের ভবিষ্যত
প্রজন্মের স্বপ্ন বাস্তবায়নে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ মহাসত্যটি সংশ্লিষ্টদের
কবে উপলব্ধি আসবে? আইসিটি শিক্ষকগণ অন্যান্য শিক্ষকদের মতো সমাজে
স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকবে সুন্দর ও স্বাভাবিকভাবে। বেঁচে থাকার দাবি কারো
করুণা নয়। এটা তার অধিকার।
আরেক মানবেতর জীবন-যাপন করে আসছেন
প্রাথমিকের ১৫ হাজারের অধিক পুল শিক্ষক। দীর্ঘ প্রায় ১ যুগ পূর্বে
পিইডিপি-২ প্রকল্পে শিক্ষক স্বল্পতা দূরীকরণে পুল শিক্ষক নিয়োগের প্রস্তাব
করা হয়। এজন্য উক্ত প্রকল্পে দুশো কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়।
উক্ত প্রকল্পে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের
অগ্রাধিকার দিয়ে ১ যুগ পূর্বে দৈনিক দুশো টাকা করে ভাতা প্রদানের প্রস্তাব
দেওয়া হয়। অথচ দীর্ঘ ১ যুগ পরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মত সমযোগ্যতা
চেয়ে নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই বাছাই করে পুল শিক্ষক নিয়োগ দান করা
হয়। অথচ ভাতা রাখা হয়, এক যুগ পূর্বের দুশো টাকা, তরুণ মেধাবীদের অন্যান্য
শিক্ষকদের মতো সকল সুবিধা বঞ্চিত করে দৈনিক ভিত্তিতে মাত্র দুশো টাকা ভাতা
প্রদান করা এ যেন, পুল শিক্ষকদের ওপর সরকারের নির্মম পরিহাস। আমাদের দেশের
মাঠে-ঘাটে ৮টা থেকে ২টা পর্যন্ত কর্মরত শ্রমিকের দৈনিক মজুরী কমপক্ষে ৫০০
টাকা।
প্রাথমিকের পুল শিক্ষকগণ মহামান্য
সুপ্রীম কোর্টে দেশের সকল প্রাথমিক শিক্ষকের মতো নিয়োগদানের জন্য রিট আবেদন
করেন। মহামান্য আদালত শিক্ষকদের আবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রায়
প্রদান করেন। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের সময়ক্ষেপণ মোটেই কাম্য
নয়। নন এমপিও, আইসিটি ও পুল শিক্ষকদের দুঃখ-কষ্ট বেদনার কথা লিখতে গিয়ে
লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর রচিত পাদটিকা গল্পের পণ্ডিত মহাশয়ের স্মৃতি আজ ভেসে
উঠলো। পণ্ডিত মহাশয় ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বললেন ‘বলতো দেখি লাট সাহেবের
কুকুরের পেছনে মাসে পঁচাত্তর টাকা খরচ হয়, আর সে কুকুরের যদি তিনটি ঠ্যাং
থাকে তবে প্রতি ঠ্যাংয়ের জন্য কত টাকা খরচ হয়?’ ছাত্ররা উত্তরে বললো ২৫
টাকা। তারপর পণ্ডিত মহাশয় বললেন, উত্তম উত্তর। অপিচ, আমি, ব্রাক্ষ্মণী,
বৃদ্ধমাতা, তিন কন্যা, বিধবা, পিসি, দাসী একুনে আটজন। আমাদের সকলের জীবন
ধারণের জন্য আমি মাসে পাই পঁচিশ টাকা। ছাত্রদের উদ্দেশ্যে তিনি বললেন, এই
ব্রাক্ষ্মণ পরিবার লাট সাহেবের কুকুরের কয়টা ঠ্যাং এর সমান? পুরো শ্রেণির
ছাত্ররা মাথা নিঁচু করে বসে রইল। সমস্ত ক্লাস নিস্তব্ধ। পণ্ডিত মহাশয়ের মুখ
লজ্জা, তিক্ততা ও ঘৃণায় বিকৃত হয়ে গিয়েছে। ক্লাসের সব ছাত্র বুঝতে পেরেছে,
কেউ বাদ যায়নি। পণ্ডিত মহাশয়ের আত্মঅবমাননার কী নির্মম পরিহাস সর্বাঙ্গে
মেখেছেন আমাদের স্বাক্ষী রেখে।
পণ্ডিত মহাশয় যেন উত্তরের প্রতীক্ষায়
বসেই আছেন। এই নিস্তব্ধতার স্মৃতি আমাদের মন থেকে মুছে যায়নি। পণ্ডিত মহাশয়
যদি বেঁচে থাকতেন ননএমপিও, আইসিটি ও পুল শিক্ষকদের নিয়ে সরকারের
দৃষ্টিভঙ্গি ও মানবেতর ভাবে বেঁচে থাকার যন্ত্রণা কিভাবে বর্ণনা করতেন জানি
না? সংশ্লিষ্টরা তথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের সুধি সমাজ শিক্ষকদের
মানবেতর জীবন যাপনের যন্ত্রণা কতটুকু নিজেদের অঙ্গে মাখবেন। পণ্ডিত মহাশয়ের
মত শিক্ষক সমাজও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
আজকের দিনে প্রাথমিকে সহকারিদের মর্যাদা
ও বেতন স্কেল থার্ড ক্লাস। জাতির বিবেক আজ নিশ্চুপ। বিশ্বের সকল দেশের
শিক্ষকদের মর্যাদা ১ম শ্রেণির। স্বাধীন দেশের শিক্ষক সমাজ আজ অবহেলিত।
শিক্ষক সমাজকে মর্যাদা ও আর্থিক কষ্টে রেখে দেশের কাঙ্খিত উন্নয়ন বিঘ্নিত
হবে। জাতি গড়ার কারিগরদের মর্যাদা নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন-যাপন করুক ও
ঈদের অনাবিল আনন্দ তাঁদের মাঝে বিরাজ করুক। এ শুভ কামনায়।
লেখক : মোঃ সিদ্দিকুর রহমান, পরামর্শক, দৈনিকশিক্ষাডটকম ও আহ্বায়ক, প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম
- See more at:
http://www.dainikshiksha.com/%E0%A6%88%E0%A6%A6-%E0%A6%86%E0%A6%A8%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6-%E0%A6%AC%E0%A6%9E%E0%A7%8D%E0%A6%9A%E0%A6%BF%E0%A6%A4-%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%B2-%E0%A6%93-%E0%A6%86%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%BF/47086#sthash.kf6rDpzB.GVbkTPAi.dpuf
বাঙালির
ইতিহাসে এবারের ঈদে আগমন ঘটেছে আতঙ্ক ও শোকের বার্তা নিয়ে। তবুও ব্যথিত মন
নিয়েই বাঙালি জাতি ঈদের আনন্দ উপভোগ করেছে। ইসলাম ধর্মের অন্যতম ধর্মীয়
উৎসব ঈদ। এ উৎসবে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন ধনি-দরিদ্র সকল ভেদাভেদ ভুলে
ঈদের নামাজ এক কাতারে পালন করে। পরস্পরে কোলাকুলির মাধ্যমে সকল ভেদাভেদ
ভুলে যায়।
ইসলাম শান্তির ধর্ম। কোন রকম অশান্তি
ইসলাম সমর্থন করে না। কোন প্রকার খুন বা অন্য ধর্মের ওপর অত্যাচার ইসলাম বা
অন্যকোন ধর্মে স্বীকৃত নয়। এ অপকর্ম সকল ধর্মেই মহাপাপ হিসেবে চিহ্নিত।
কোন বিবেকবান মানুষ সন্ত্রাস বা মানুষ খুনের মত অপকর্ম করতে পারে না।
একমাত্র বিবেক বর্জিত মানুষই এসব অপকর্ম করে থাকে।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা যুদ্ধের
সময় দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধ
হয়েছিল। আজকের দিনে পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায়, গ্রামে-গঞ্জে, জঙ্গি
নির্মূলের জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। প্রাথমিক, উচ্চ
বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষক দেশের তৃণমূল পর্যায় থেকে গ্রাম-গঞ্জ ও
শহরে সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। তারা জঙ্গিবাদবিরোধী কাজে জনগণকে সচেতন করাসহ
জঙ্গি দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আশা করি শিক্ষক সমাজ আজ
দেশের ক্রান্তিলগ্নে এগিয়ে আসবে।
একটি বিশেষ মহলের আন্তরিকতার অভাবে
দেশের কতিপয় শিক্ষালয়ে জঙ্গির আস্তানা হিসেবে গড়ে উঠেছে। স্বাধীনতার দীর্ঘ
সময়ের পরেও শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে দেশের সুনাগরিক গড়ে তোলা
সম্ভব হয়নি। সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান। কোন কোন প্রতিষ্ঠানে স্বাধীনতাবিরোধী তথা জঙ্গি তৈরির কারখানা
হিসেবে পরিণত হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর
সরকারি নিয়ন্ত্রণ বা নজরদারী আজকের দিনে জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের
শিক্ষা তথা শিক্ষকদের সমস্যা নিরসণে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা আজ
প্রশ্নবিদ্ধ। দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষাবিদসহ সচেতন জনসাধারণ শিক্ষার বাজেটে
যথাযথ বরাদ্দের জন্য চিৎকার করে আসছেন। এ চিৎকার অনেকটা ‘কামারের দোকানে
কোরআন পড়া’ প্রবাদের মতো। এ চিৎকার যেন অর্থ মন্ত্রণালয় তথা সংশ্লিষ্টদের
কাছে করুণা ভিক্ষা প্রত্যাশা।
শিক্ষায় নানা অব্যবস্থাপনার অবকাঠামোগত
কিছুটা উন্নয়ন, বিনামূল্যে বই বিতরণের সাহসী পদক্ষেপের সফলতা অনেকটা ম্লান
হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষক স্বল্পতা, নোট গাইডের ব্যাপক সফলতা, কোচিং নির্ভর
শিক্ষা দিন দিন বেড়েই চলছে। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষক জাতি গড়ার
কারিগর। এ বাস্তবতা উপলব্ধি করার জ্ঞান সংশ্লিষ্টদের মাঝ থেকে যেন হারিয়ে
যাচ্ছে। তারা বিষয়টিকে এড়িয়ে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও নানা অনৈতিক কাজে ঠেলে
দিচ্ছে জাতির ভবিষ্যত নাগরিক শিশু-কিশোরদের। শিক্ষকদের প্রতি অমানবিক
কর্মকাণ্ড সংশ্লিষ্ট হৃদয়ে পাথর সমস্থান পেয়েছে। কেন এ পাথর সরাবার বা
নিশ্চিহ্ন করার উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়।
স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষকেরা
মানবেতর জীবন যাপন করছে। আর এক শ্রেণির লুটেরা সরকারি সম্পদ, ব্যাংকের অর্থ
লুট-আত্মসাৎ করে সম্পদের পাহাড় বানাচ্ছে এ দৃশ্য মেনে নেয়া কষ্টকর
ব্যাপার। ননএমপিও ভুক্ত স্কুল-কলেজ, আইসিটি ও প্রাথমিকের পুল শিক্ষক অর্থের
অভাবে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। তাঁরা ঈদের আনন্দের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত
হচ্ছে। বিপুল সংখ্যক ননএমপিও ভুক্ত স্কুল-কলেজসহ আইসিটি শিক্ষক ও
প্রাথমিকের পুল শিক্ষকদের স্থায়ী পদে নিয়োগসহ এমপিওভুক্তকরণের টাকা বিশাল
বাজেটে স্থান পায় নাই। স্থান পেয়েছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে
তৃণমূল পর্যায়ে কর্মকর্তা, কর্মচারীর বেতন দুই গুণ বৃদ্ধি করার টাকা।
২০১১ সালের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক
বিশেষ পরিপত্র মোতাবেক ১২৪৪ জন আইসিটি শিক্ষকের এমপিও বন্ধ। প্রতিষ্ঠান
থেকে প্রাপ্ত ২-৩ হাজার টাকাই তাঁদের একমাত্র ভরসা। মানবেতর জীবন-যাপন করা
ছাড়া তাদের কিছুই করার নেই। অর্থমন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রী, এমনকি
প্রধানমন্ত্রী সমীপে এমপিওভুক্তির দাবি করা যেন অরেণ্য রোদন। ঈদের আনন্দ
ব্যতিরেকে দুঃখ-বেদনা নিয়ে বেঁচে থাকা যেন অদৃষ্টের করুণ পরিহাস। মাননীয়
প্রধানমন্ত্রী যেখানে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে অঙ্গীকারাবদ্ধ। ৬ষ্ঠ শ্রেণি
থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়কে আবশ্যিক
হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে সেখানে উক্ত বিষয়ের শিক্ষকগণ সংশ্লিষ্টদের কাছে
অনাবশ্যিক।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইসিটি শিক্ষক ছাড়া
মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের কার্যক্রম অচল। শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি করার আন্দোলনে
প্রায়ই শিক্ষার্থীর শ্রেণির কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে কিছুটা হলেও
বিঘিœত হচ্ছে বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন। আইসিটি শিক্ষকেরা
কি এ সমাজ ও দেশের বোঝা? তাঁদের কি পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাচ্ছন্দে বেঁচে
থাকার ও ঈদের অনাবিল আনন্দ উপভোগের অধিকার নেই? আইসিটি শিক্ষকগণ ডিজিটাল
বাংলাদেশ গঠনের অন্যতম কারিগর। তাঁদের অবহেলিত রাখলে দেশের ভবিষ্যত
প্রজন্মের স্বপ্ন বাস্তবায়নে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ মহাসত্যটি সংশ্লিষ্টদের
কবে উপলব্ধি আসবে? আইসিটি শিক্ষকগণ অন্যান্য শিক্ষকদের মতো সমাজে
স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকবে সুন্দর ও স্বাভাবিকভাবে। বেঁচে থাকার দাবি কারো
করুণা নয়। এটা তার অধিকার।
আরেক মানবেতর জীবন-যাপন করে আসছেন
প্রাথমিকের ১৫ হাজারের অধিক পুল শিক্ষক। দীর্ঘ প্রায় ১ যুগ পূর্বে
পিইডিপি-২ প্রকল্পে শিক্ষক স্বল্পতা দূরীকরণে পুল শিক্ষক নিয়োগের প্রস্তাব
করা হয়। এজন্য উক্ত প্রকল্পে দুশো কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়।
উক্ত প্রকল্পে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের
অগ্রাধিকার দিয়ে ১ যুগ পূর্বে দৈনিক দুশো টাকা করে ভাতা প্রদানের প্রস্তাব
দেওয়া হয়। অথচ দীর্ঘ ১ যুগ পরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মত সমযোগ্যতা
চেয়ে নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই বাছাই করে পুল শিক্ষক নিয়োগ দান করা
হয়। অথচ ভাতা রাখা হয়, এক যুগ পূর্বের দুশো টাকা, তরুণ মেধাবীদের অন্যান্য
শিক্ষকদের মতো সকল সুবিধা বঞ্চিত করে দৈনিক ভিত্তিতে মাত্র দুশো টাকা ভাতা
প্রদান করা এ যেন, পুল শিক্ষকদের ওপর সরকারের নির্মম পরিহাস। আমাদের দেশের
মাঠে-ঘাটে ৮টা থেকে ২টা পর্যন্ত কর্মরত শ্রমিকের দৈনিক মজুরী কমপক্ষে ৫০০
টাকা।
প্রাথমিকের পুল শিক্ষকগণ মহামান্য
সুপ্রীম কোর্টে দেশের সকল প্রাথমিক শিক্ষকের মতো নিয়োগদানের জন্য রিট আবেদন
করেন। মহামান্য আদালত শিক্ষকদের আবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রায়
প্রদান করেন। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের সময়ক্ষেপণ মোটেই কাম্য
নয়। নন এমপিও, আইসিটি ও পুল শিক্ষকদের দুঃখ-কষ্ট বেদনার কথা লিখতে গিয়ে
লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর রচিত পাদটিকা গল্পের পণ্ডিত মহাশয়ের স্মৃতি আজ ভেসে
উঠলো। পণ্ডিত মহাশয় ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বললেন ‘বলতো দেখি লাট সাহেবের
কুকুরের পেছনে মাসে পঁচাত্তর টাকা খরচ হয়, আর সে কুকুরের যদি তিনটি ঠ্যাং
থাকে তবে প্রতি ঠ্যাংয়ের জন্য কত টাকা খরচ হয়?’ ছাত্ররা উত্তরে বললো ২৫
টাকা। তারপর পণ্ডিত মহাশয় বললেন, উত্তম উত্তর। অপিচ, আমি, ব্রাক্ষ্মণী,
বৃদ্ধমাতা, তিন কন্যা, বিধবা, পিসি, দাসী একুনে আটজন। আমাদের সকলের জীবন
ধারণের জন্য আমি মাসে পাই পঁচিশ টাকা। ছাত্রদের উদ্দেশ্যে তিনি বললেন, এই
ব্রাক্ষ্মণ পরিবার লাট সাহেবের কুকুরের কয়টা ঠ্যাং এর সমান? পুরো শ্রেণির
ছাত্ররা মাথা নিঁচু করে বসে রইল। সমস্ত ক্লাস নিস্তব্ধ। পণ্ডিত মহাশয়ের মুখ
লজ্জা, তিক্ততা ও ঘৃণায় বিকৃত হয়ে গিয়েছে। ক্লাসের সব ছাত্র বুঝতে পেরেছে,
কেউ বাদ যায়নি। পণ্ডিত মহাশয়ের আত্মঅবমাননার কী নির্মম পরিহাস সর্বাঙ্গে
মেখেছেন আমাদের স্বাক্ষী রেখে।
পণ্ডিত মহাশয় যেন উত্তরের প্রতীক্ষায়
বসেই আছেন। এই নিস্তব্ধতার স্মৃতি আমাদের মন থেকে মুছে যায়নি। পণ্ডিত মহাশয়
যদি বেঁচে থাকতেন ননএমপিও, আইসিটি ও পুল শিক্ষকদের নিয়ে সরকারের
দৃষ্টিভঙ্গি ও মানবেতর ভাবে বেঁচে থাকার যন্ত্রণা কিভাবে বর্ণনা করতেন জানি
না? সংশ্লিষ্টরা তথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের সুধি সমাজ শিক্ষকদের
মানবেতর জীবন যাপনের যন্ত্রণা কতটুকু নিজেদের অঙ্গে মাখবেন। পণ্ডিত মহাশয়ের
মত শিক্ষক সমাজও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
আজকের দিনে প্রাথমিকে সহকারিদের মর্যাদা
ও বেতন স্কেল থার্ড ক্লাস। জাতির বিবেক আজ নিশ্চুপ। বিশ্বের সকল দেশের
শিক্ষকদের মর্যাদা ১ম শ্রেণির। স্বাধীন দেশের শিক্ষক সমাজ আজ অবহেলিত।
শিক্ষক সমাজকে মর্যাদা ও আর্থিক কষ্টে রেখে দেশের কাঙ্খিত উন্নয়ন বিঘ্নিত
হবে। জাতি গড়ার কারিগরদের মর্যাদা নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন-যাপন করুক ও
ঈদের অনাবিল আনন্দ তাঁদের মাঝে বিরাজ করুক। এ শুভ কামনায়।
লেখক : মোঃ সিদ্দিকুর রহমান, পরামর্শক, দৈনিকশিক্ষাডটকম ও আহ্বায়ক, প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম
- See more at:
http://www.dainikshiksha.com/%E0%A6%88%E0%A6%A6-%E0%A6%86%E0%A6%A8%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6-%E0%A6%AC%E0%A6%9E%E0%A7%8D%E0%A6%9A%E0%A6%BF%E0%A6%A4-%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%B2-%E0%A6%93-%E0%A6%86%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%BF/47086#sthash.kf6rDpzB.GVbkTPAi.dpuf
বাঙালির
ইতিহাসে এবারের ঈদে আগমন ঘটেছে আতঙ্ক ও শোকের বার্তা নিয়ে। তবুও ব্যথিত মন
নিয়েই বাঙালি জাতি ঈদের আনন্দ উপভোগ করেছে। ইসলাম ধর্মের অন্যতম ধর্মীয়
উৎসব ঈদ। এ উৎসবে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন ধনি-দরিদ্র সকল ভেদাভেদ ভুলে
ঈদের নামাজ এক কাতারে পালন করে। পরস্পরে কোলাকুলির মাধ্যমে সকল ভেদাভেদ
ভুলে যায়।
ইসলাম শান্তির ধর্ম। কোন রকম অশান্তি
ইসলাম সমর্থন করে না। কোন প্রকার খুন বা অন্য ধর্মের ওপর অত্যাচার ইসলাম বা
অন্যকোন ধর্মে স্বীকৃত নয়। এ অপকর্ম সকল ধর্মেই মহাপাপ হিসেবে চিহ্নিত।
কোন বিবেকবান মানুষ সন্ত্রাস বা মানুষ খুনের মত অপকর্ম করতে পারে না।
একমাত্র বিবেক বর্জিত মানুষই এসব অপকর্ম করে থাকে।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা যুদ্ধের
সময় দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধ
হয়েছিল। আজকের দিনে পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায়, গ্রামে-গঞ্জে, জঙ্গি
নির্মূলের জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। প্রাথমিক, উচ্চ
বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষক দেশের তৃণমূল পর্যায় থেকে গ্রাম-গঞ্জ ও
শহরে সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। তারা জঙ্গিবাদবিরোধী কাজে জনগণকে সচেতন করাসহ
জঙ্গি দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আশা করি শিক্ষক সমাজ আজ
দেশের ক্রান্তিলগ্নে এগিয়ে আসবে।
একটি বিশেষ মহলের আন্তরিকতার অভাবে
দেশের কতিপয় শিক্ষালয়ে জঙ্গির আস্তানা হিসেবে গড়ে উঠেছে। স্বাধীনতার দীর্ঘ
সময়ের পরেও শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে দেশের সুনাগরিক গড়ে তোলা
সম্ভব হয়নি। সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান। কোন কোন প্রতিষ্ঠানে স্বাধীনতাবিরোধী তথা জঙ্গি তৈরির কারখানা
হিসেবে পরিণত হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর
সরকারি নিয়ন্ত্রণ বা নজরদারী আজকের দিনে জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের
শিক্ষা তথা শিক্ষকদের সমস্যা নিরসণে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা আজ
প্রশ্নবিদ্ধ। দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষাবিদসহ সচেতন জনসাধারণ শিক্ষার বাজেটে
যথাযথ বরাদ্দের জন্য চিৎকার করে আসছেন। এ চিৎকার অনেকটা ‘কামারের দোকানে
কোরআন পড়া’ প্রবাদের মতো। এ চিৎকার যেন অর্থ মন্ত্রণালয় তথা সংশ্লিষ্টদের
কাছে করুণা ভিক্ষা প্রত্যাশা।
শিক্ষায় নানা অব্যবস্থাপনার অবকাঠামোগত
কিছুটা উন্নয়ন, বিনামূল্যে বই বিতরণের সাহসী পদক্ষেপের সফলতা অনেকটা ম্লান
হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষক স্বল্পতা, নোট গাইডের ব্যাপক সফলতা, কোচিং নির্ভর
শিক্ষা দিন দিন বেড়েই চলছে। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষক জাতি গড়ার
কারিগর। এ বাস্তবতা উপলব্ধি করার জ্ঞান সংশ্লিষ্টদের মাঝ থেকে যেন হারিয়ে
যাচ্ছে। তারা বিষয়টিকে এড়িয়ে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও নানা অনৈতিক কাজে ঠেলে
দিচ্ছে জাতির ভবিষ্যত নাগরিক শিশু-কিশোরদের। শিক্ষকদের প্রতি অমানবিক
কর্মকাণ্ড সংশ্লিষ্ট হৃদয়ে পাথর সমস্থান পেয়েছে। কেন এ পাথর সরাবার বা
নিশ্চিহ্ন করার উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়।
স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষকেরা
মানবেতর জীবন যাপন করছে। আর এক শ্রেণির লুটেরা সরকারি সম্পদ, ব্যাংকের অর্থ
লুট-আত্মসাৎ করে সম্পদের পাহাড় বানাচ্ছে এ দৃশ্য মেনে নেয়া কষ্টকর
ব্যাপার। ননএমপিও ভুক্ত স্কুল-কলেজ, আইসিটি ও প্রাথমিকের পুল শিক্ষক অর্থের
অভাবে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। তাঁরা ঈদের আনন্দের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত
হচ্ছে। বিপুল সংখ্যক ননএমপিও ভুক্ত স্কুল-কলেজসহ আইসিটি শিক্ষক ও
প্রাথমিকের পুল শিক্ষকদের স্থায়ী পদে নিয়োগসহ এমপিওভুক্তকরণের টাকা বিশাল
বাজেটে স্থান পায় নাই। স্থান পেয়েছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে
তৃণমূল পর্যায়ে কর্মকর্তা, কর্মচারীর বেতন দুই গুণ বৃদ্ধি করার টাকা।
২০১১ সালের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক
বিশেষ পরিপত্র মোতাবেক ১২৪৪ জন আইসিটি শিক্ষকের এমপিও বন্ধ। প্রতিষ্ঠান
থেকে প্রাপ্ত ২-৩ হাজার টাকাই তাঁদের একমাত্র ভরসা। মানবেতর জীবন-যাপন করা
ছাড়া তাদের কিছুই করার নেই। অর্থমন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রী, এমনকি
প্রধানমন্ত্রী সমীপে এমপিওভুক্তির দাবি করা যেন অরেণ্য রোদন। ঈদের আনন্দ
ব্যতিরেকে দুঃখ-বেদনা নিয়ে বেঁচে থাকা যেন অদৃষ্টের করুণ পরিহাস। মাননীয়
প্রধানমন্ত্রী যেখানে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে অঙ্গীকারাবদ্ধ। ৬ষ্ঠ শ্রেণি
থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়কে আবশ্যিক
হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে সেখানে উক্ত বিষয়ের শিক্ষকগণ সংশ্লিষ্টদের কাছে
অনাবশ্যিক।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইসিটি শিক্ষক ছাড়া
মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের কার্যক্রম অচল। শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি করার আন্দোলনে
প্রায়ই শিক্ষার্থীর শ্রেণির কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে কিছুটা হলেও
বিঘিœত হচ্ছে বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন। আইসিটি শিক্ষকেরা
কি এ সমাজ ও দেশের বোঝা? তাঁদের কি পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাচ্ছন্দে বেঁচে
থাকার ও ঈদের অনাবিল আনন্দ উপভোগের অধিকার নেই? আইসিটি শিক্ষকগণ ডিজিটাল
বাংলাদেশ গঠনের অন্যতম কারিগর। তাঁদের অবহেলিত রাখলে দেশের ভবিষ্যত
প্রজন্মের স্বপ্ন বাস্তবায়নে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ মহাসত্যটি সংশ্লিষ্টদের
কবে উপলব্ধি আসবে? আইসিটি শিক্ষকগণ অন্যান্য শিক্ষকদের মতো সমাজে
স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকবে সুন্দর ও স্বাভাবিকভাবে। বেঁচে থাকার দাবি কারো
করুণা নয়। এটা তার অধিকার।
আরেক মানবেতর জীবন-যাপন করে আসছেন
প্রাথমিকের ১৫ হাজারের অধিক পুল শিক্ষক। দীর্ঘ প্রায় ১ যুগ পূর্বে
পিইডিপি-২ প্রকল্পে শিক্ষক স্বল্পতা দূরীকরণে পুল শিক্ষক নিয়োগের প্রস্তাব
করা হয়। এজন্য উক্ত প্রকল্পে দুশো কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়।
উক্ত প্রকল্পে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের
অগ্রাধিকার দিয়ে ১ যুগ পূর্বে দৈনিক দুশো টাকা করে ভাতা প্রদানের প্রস্তাব
দেওয়া হয়। অথচ দীর্ঘ ১ যুগ পরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মত সমযোগ্যতা
চেয়ে নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই বাছাই করে পুল শিক্ষক নিয়োগ দান করা
হয়। অথচ ভাতা রাখা হয়, এক যুগ পূর্বের দুশো টাকা, তরুণ মেধাবীদের অন্যান্য
শিক্ষকদের মতো সকল সুবিধা বঞ্চিত করে দৈনিক ভিত্তিতে মাত্র দুশো টাকা ভাতা
প্রদান করা এ যেন, পুল শিক্ষকদের ওপর সরকারের নির্মম পরিহাস। আমাদের দেশের
মাঠে-ঘাটে ৮টা থেকে ২টা পর্যন্ত কর্মরত শ্রমিকের দৈনিক মজুরী কমপক্ষে ৫০০
টাকা।
প্রাথমিকের পুল শিক্ষকগণ মহামান্য
সুপ্রীম কোর্টে দেশের সকল প্রাথমিক শিক্ষকের মতো নিয়োগদানের জন্য রিট আবেদন
করেন। মহামান্য আদালত শিক্ষকদের আবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রায়
প্রদান করেন। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের সময়ক্ষেপণ মোটেই কাম্য
নয়। নন এমপিও, আইসিটি ও পুল শিক্ষকদের দুঃখ-কষ্ট বেদনার কথা লিখতে গিয়ে
লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর রচিত পাদটিকা গল্পের পণ্ডিত মহাশয়ের স্মৃতি আজ ভেসে
উঠলো। পণ্ডিত মহাশয় ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বললেন ‘বলতো দেখি লাট সাহেবের
কুকুরের পেছনে মাসে পঁচাত্তর টাকা খরচ হয়, আর সে কুকুরের যদি তিনটি ঠ্যাং
থাকে তবে প্রতি ঠ্যাংয়ের জন্য কত টাকা খরচ হয়?’ ছাত্ররা উত্তরে বললো ২৫
টাকা। তারপর পণ্ডিত মহাশয় বললেন, উত্তম উত্তর। অপিচ, আমি, ব্রাক্ষ্মণী,
বৃদ্ধমাতা, তিন কন্যা, বিধবা, পিসি, দাসী একুনে আটজন। আমাদের সকলের জীবন
ধারণের জন্য আমি মাসে পাই পঁচিশ টাকা। ছাত্রদের উদ্দেশ্যে তিনি বললেন, এই
ব্রাক্ষ্মণ পরিবার লাট সাহেবের কুকুরের কয়টা ঠ্যাং এর সমান? পুরো শ্রেণির
ছাত্ররা মাথা নিঁচু করে বসে রইল। সমস্ত ক্লাস নিস্তব্ধ। পণ্ডিত মহাশয়ের মুখ
লজ্জা, তিক্ততা ও ঘৃণায় বিকৃত হয়ে গিয়েছে। ক্লাসের সব ছাত্র বুঝতে পেরেছে,
কেউ বাদ যায়নি। পণ্ডিত মহাশয়ের আত্মঅবমাননার কী নির্মম পরিহাস সর্বাঙ্গে
মেখেছেন আমাদের স্বাক্ষী রেখে।
পণ্ডিত মহাশয় যেন উত্তরের প্রতীক্ষায়
বসেই আছেন। এই নিস্তব্ধতার স্মৃতি আমাদের মন থেকে মুছে যায়নি। পণ্ডিত মহাশয়
যদি বেঁচে থাকতেন ননএমপিও, আইসিটি ও পুল শিক্ষকদের নিয়ে সরকারের
দৃষ্টিভঙ্গি ও মানবেতর ভাবে বেঁচে থাকার যন্ত্রণা কিভাবে বর্ণনা করতেন জানি
না? সংশ্লিষ্টরা তথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের সুধি সমাজ শিক্ষকদের
মানবেতর জীবন যাপনের যন্ত্রণা কতটুকু নিজেদের অঙ্গে মাখবেন। পণ্ডিত মহাশয়ের
মত শিক্ষক সমাজও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
আজকের দিনে প্রাথমিকে সহকারিদের মর্যাদা
ও বেতন স্কেল থার্ড ক্লাস। জাতির বিবেক আজ নিশ্চুপ। বিশ্বের সকল দেশের
শিক্ষকদের মর্যাদা ১ম শ্রেণির। স্বাধীন দেশের শিক্ষক সমাজ আজ অবহেলিত।
শিক্ষক সমাজকে মর্যাদা ও আর্থিক কষ্টে রেখে দেশের কাঙ্খিত উন্নয়ন বিঘ্নিত
হবে। জাতি গড়ার কারিগরদের মর্যাদা নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন-যাপন করুক ও
ঈদের অনাবিল আনন্দ তাঁদের মাঝে বিরাজ করুক। এ শুভ কামনায়।
লেখক : মোঃ সিদ্দিকুর রহমান, পরামর্শক, দৈনিকশিক্ষাডটকম ও আহ্বায়ক, প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম
- See more at:
http://www.dainikshiksha.com/%E0%A6%88%E0%A6%A6-%E0%A6%86%E0%A6%A8%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6-%E0%A6%AC%E0%A6%9E%E0%A7%8D%E0%A6%9A%E0%A6%BF%E0%A6%A4-%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%B2-%E0%A6%93-%E0%A6%86%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%BF/47086#sthash.kf6rDpzB.GVbkTPAi.dpuf
বাঙালির
ইতিহাসে এবারের ঈদে আগমন ঘটেছে আতঙ্ক ও শোকের বার্তা নিয়ে। তবুও ব্যথিত মন
নিয়েই বাঙালি জাতি ঈদের আনন্দ উপভোগ করেছে। ইসলাম ধর্মের অন্যতম ধর্মীয়
উৎসব ঈদ। এ উৎসবে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন ধনি-দরিদ্র সকল ভেদাভেদ ভুলে
ঈদের নামাজ এক কাতারে পালন করে। পরস্পরে কোলাকুলির মাধ্যমে সকল ভেদাভেদ
ভুলে যায়।
ইসলাম শান্তির ধর্ম। কোন রকম অশান্তি
ইসলাম সমর্থন করে না। কোন প্রকার খুন বা অন্য ধর্মের ওপর অত্যাচার ইসলাম বা
অন্যকোন ধর্মে স্বীকৃত নয়। এ অপকর্ম সকল ধর্মেই মহাপাপ হিসেবে চিহ্নিত।
কোন বিবেকবান মানুষ সন্ত্রাস বা মানুষ খুনের মত অপকর্ম করতে পারে না।
একমাত্র বিবেক বর্জিত মানুষই এসব অপকর্ম করে থাকে।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা যুদ্ধের
সময় দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধ
হয়েছিল। আজকের দিনে পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায়, গ্রামে-গঞ্জে, জঙ্গি
নির্মূলের জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। প্রাথমিক, উচ্চ
বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষক দেশের তৃণমূল পর্যায় থেকে গ্রাম-গঞ্জ ও
শহরে সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। তারা জঙ্গিবাদবিরোধী কাজে জনগণকে সচেতন করাসহ
জঙ্গি দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আশা করি শিক্ষক সমাজ আজ
দেশের ক্রান্তিলগ্নে এগিয়ে আসবে।
একটি বিশেষ মহলের আন্তরিকতার অভাবে
দেশের কতিপয় শিক্ষালয়ে জঙ্গির আস্তানা হিসেবে গড়ে উঠেছে। স্বাধীনতার দীর্ঘ
সময়ের পরেও শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে দেশের সুনাগরিক গড়ে তোলা
সম্ভব হয়নি। সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান। কোন কোন প্রতিষ্ঠানে স্বাধীনতাবিরোধী তথা জঙ্গি তৈরির কারখানা
হিসেবে পরিণত হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর
সরকারি নিয়ন্ত্রণ বা নজরদারী আজকের দিনে জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের
শিক্ষা তথা শিক্ষকদের সমস্যা নিরসণে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা আজ
প্রশ্নবিদ্ধ। দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষাবিদসহ সচেতন জনসাধারণ শিক্ষার বাজেটে
যথাযথ বরাদ্দের জন্য চিৎকার করে আসছেন। এ চিৎকার অনেকটা ‘কামারের দোকানে
কোরআন পড়া’ প্রবাদের মতো। এ চিৎকার যেন অর্থ মন্ত্রণালয় তথা সংশ্লিষ্টদের
কাছে করুণা ভিক্ষা প্রত্যাশা।
শিক্ষায় নানা অব্যবস্থাপনার অবকাঠামোগত
কিছুটা উন্নয়ন, বিনামূল্যে বই বিতরণের সাহসী পদক্ষেপের সফলতা অনেকটা ম্লান
হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষক স্বল্পতা, নোট গাইডের ব্যাপক সফলতা, কোচিং নির্ভর
শিক্ষা দিন দিন বেড়েই চলছে। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষক জাতি গড়ার
কারিগর। এ বাস্তবতা উপলব্ধি করার জ্ঞান সংশ্লিষ্টদের মাঝ থেকে যেন হারিয়ে
যাচ্ছে। তারা বিষয়টিকে এড়িয়ে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও নানা অনৈতিক কাজে ঠেলে
দিচ্ছে জাতির ভবিষ্যত নাগরিক শিশু-কিশোরদের। শিক্ষকদের প্রতি অমানবিক
কর্মকাণ্ড সংশ্লিষ্ট হৃদয়ে পাথর সমস্থান পেয়েছে। কেন এ পাথর সরাবার বা
নিশ্চিহ্ন করার উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়।
স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষকেরা
মানবেতর জীবন যাপন করছে। আর এক শ্রেণির লুটেরা সরকারি সম্পদ, ব্যাংকের অর্থ
লুট-আত্মসাৎ করে সম্পদের পাহাড় বানাচ্ছে এ দৃশ্য মেনে নেয়া কষ্টকর
ব্যাপার। ননএমপিও ভুক্ত স্কুল-কলেজ, আইসিটি ও প্রাথমিকের পুল শিক্ষক অর্থের
অভাবে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। তাঁরা ঈদের আনন্দের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত
হচ্ছে। বিপুল সংখ্যক ননএমপিও ভুক্ত স্কুল-কলেজসহ আইসিটি শিক্ষক ও
প্রাথমিকের পুল শিক্ষকদের স্থায়ী পদে নিয়োগসহ এমপিওভুক্তকরণের টাকা বিশাল
বাজেটে স্থান পায় নাই। স্থান পেয়েছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে
তৃণমূল পর্যায়ে কর্মকর্তা, কর্মচারীর বেতন দুই গুণ বৃদ্ধি করার টাকা।
২০১১ সালের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক
বিশেষ পরিপত্র মোতাবেক ১২৪৪ জন আইসিটি শিক্ষকের এমপিও বন্ধ। প্রতিষ্ঠান
থেকে প্রাপ্ত ২-৩ হাজার টাকাই তাঁদের একমাত্র ভরসা। মানবেতর জীবন-যাপন করা
ছাড়া তাদের কিছুই করার নেই। অর্থমন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রী, এমনকি
প্রধানমন্ত্রী সমীপে এমপিওভুক্তির দাবি করা যেন অরেণ্য রোদন। ঈদের আনন্দ
ব্যতিরেকে দুঃখ-বেদনা নিয়ে বেঁচে থাকা যেন অদৃষ্টের করুণ পরিহাস। মাননীয়
প্রধানমন্ত্রী যেখানে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে অঙ্গীকারাবদ্ধ। ৬ষ্ঠ শ্রেণি
থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়কে আবশ্যিক
হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে সেখানে উক্ত বিষয়ের শিক্ষকগণ সংশ্লিষ্টদের কাছে
অনাবশ্যিক।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইসিটি শিক্ষক ছাড়া
মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের কার্যক্রম অচল। শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি করার আন্দোলনে
প্রায়ই শিক্ষার্থীর শ্রেণির কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে কিছুটা হলেও
বিঘিœত হচ্ছে বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন। আইসিটি শিক্ষকেরা
কি এ সমাজ ও দেশের বোঝা? তাঁদের কি পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাচ্ছন্দে বেঁচে
থাকার ও ঈদের অনাবিল আনন্দ উপভোগের অধিকার নেই? আইসিটি শিক্ষকগণ ডিজিটাল
বাংলাদেশ গঠনের অন্যতম কারিগর। তাঁদের অবহেলিত রাখলে দেশের ভবিষ্যত
প্রজন্মের স্বপ্ন বাস্তবায়নে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ মহাসত্যটি সংশ্লিষ্টদের
কবে উপলব্ধি আসবে? আইসিটি শিক্ষকগণ অন্যান্য শিক্ষকদের মতো সমাজে
স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকবে সুন্দর ও স্বাভাবিকভাবে। বেঁচে থাকার দাবি কারো
করুণা নয়। এটা তার অধিকার।
আরেক মানবেতর জীবন-যাপন করে আসছেন
প্রাথমিকের ১৫ হাজারের অধিক পুল শিক্ষক। দীর্ঘ প্রায় ১ যুগ পূর্বে
পিইডিপি-২ প্রকল্পে শিক্ষক স্বল্পতা দূরীকরণে পুল শিক্ষক নিয়োগের প্রস্তাব
করা হয়। এজন্য উক্ত প্রকল্পে দুশো কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়।
উক্ত প্রকল্পে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের
অগ্রাধিকার দিয়ে ১ যুগ পূর্বে দৈনিক দুশো টাকা করে ভাতা প্রদানের প্রস্তাব
দেওয়া হয়। অথচ দীর্ঘ ১ যুগ পরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মত সমযোগ্যতা
চেয়ে নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই বাছাই করে পুল শিক্ষক নিয়োগ দান করা
হয়। অথচ ভাতা রাখা হয়, এক যুগ পূর্বের দুশো টাকা, তরুণ মেধাবীদের অন্যান্য
শিক্ষকদের মতো সকল সুবিধা বঞ্চিত করে দৈনিক ভিত্তিতে মাত্র দুশো টাকা ভাতা
প্রদান করা এ যেন, পুল শিক্ষকদের ওপর সরকারের নির্মম পরিহাস। আমাদের দেশের
মাঠে-ঘাটে ৮টা থেকে ২টা পর্যন্ত কর্মরত শ্রমিকের দৈনিক মজুরী কমপক্ষে ৫০০
টাকা।
প্রাথমিকের পুল শিক্ষকগণ মহামান্য
সুপ্রীম কোর্টে দেশের সকল প্রাথমিক শিক্ষকের মতো নিয়োগদানের জন্য রিট আবেদন
করেন। মহামান্য আদালত শিক্ষকদের আবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রায়
প্রদান করেন। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের সময়ক্ষেপণ মোটেই কাম্য
নয়। নন এমপিও, আইসিটি ও পুল শিক্ষকদের দুঃখ-কষ্ট বেদনার কথা লিখতে গিয়ে
লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর রচিত পাদটিকা গল্পের পণ্ডিত মহাশয়ের স্মৃতি আজ ভেসে
উঠলো। পণ্ডিত মহাশয় ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বললেন ‘বলতো দেখি লাট সাহেবের
কুকুরের পেছনে মাসে পঁচাত্তর টাকা খরচ হয়, আর সে কুকুরের যদি তিনটি ঠ্যাং
থাকে তবে প্রতি ঠ্যাংয়ের জন্য কত টাকা খরচ হয়?’ ছাত্ররা উত্তরে বললো ২৫
টাকা। তারপর পণ্ডিত মহাশয় বললেন, উত্তম উত্তর। অপিচ, আমি, ব্রাক্ষ্মণী,
বৃদ্ধমাতা, তিন কন্যা, বিধবা, পিসি, দাসী একুনে আটজন। আমাদের সকলের জীবন
ধারণের জন্য আমি মাসে পাই পঁচিশ টাকা। ছাত্রদের উদ্দেশ্যে তিনি বললেন, এই
ব্রাক্ষ্মণ পরিবার লাট সাহেবের কুকুরের কয়টা ঠ্যাং এর সমান? পুরো শ্রেণির
ছাত্ররা মাথা নিঁচু করে বসে রইল। সমস্ত ক্লাস নিস্তব্ধ। পণ্ডিত মহাশয়ের মুখ
লজ্জা, তিক্ততা ও ঘৃণায় বিকৃত হয়ে গিয়েছে। ক্লাসের সব ছাত্র বুঝতে পেরেছে,
কেউ বাদ যায়নি। পণ্ডিত মহাশয়ের আত্মঅবমাননার কী নির্মম পরিহাস সর্বাঙ্গে
মেখেছেন আমাদের স্বাক্ষী রেখে।
পণ্ডিত মহাশয় যেন উত্তরের প্রতীক্ষায়
বসেই আছেন। এই নিস্তব্ধতার স্মৃতি আমাদের মন থেকে মুছে যায়নি। পণ্ডিত মহাশয়
যদি বেঁচে থাকতেন ননএমপিও, আইসিটি ও পুল শিক্ষকদের নিয়ে সরকারের
দৃষ্টিভঙ্গি ও মানবেতর ভাবে বেঁচে থাকার যন্ত্রণা কিভাবে বর্ণনা করতেন জানি
না? সংশ্লিষ্টরা তথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের সুধি সমাজ শিক্ষকদের
মানবেতর জীবন যাপনের যন্ত্রণা কতটুকু নিজেদের অঙ্গে মাখবেন। পণ্ডিত মহাশয়ের
মত শিক্ষক সমাজও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
আজকের দিনে প্রাথমিকে সহকারিদের মর্যাদা
ও বেতন স্কেল থার্ড ক্লাস। জাতির বিবেক আজ নিশ্চুপ। বিশ্বের সকল দেশের
শিক্ষকদের মর্যাদা ১ম শ্রেণির। স্বাধীন দেশের শিক্ষক সমাজ আজ অবহেলিত।
শিক্ষক সমাজকে মর্যাদা ও আর্থিক কষ্টে রেখে দেশের কাঙ্খিত উন্নয়ন বিঘ্নিত
হবে। জাতি গড়ার কারিগরদের মর্যাদা নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন-যাপন করুক ও
ঈদের অনাবিল আনন্দ তাঁদের মাঝে বিরাজ করুক। এ শুভ কামনায়।
লেখক : মোঃ সিদ্দিকুর রহমান, পরামর্শক, দৈনিকশিক্ষাডটকম ও আহ্বায়ক, প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম
- See more at:
http://www.dainikshiksha.com/%E0%A6%88%E0%A6%A6-%E0%A6%86%E0%A6%A8%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6-%E0%A6%AC%E0%A6%9E%E0%A7%8D%E0%A6%9A%E0%A6%BF%E0%A6%A4-%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%B2-%E0%A6%93-%E0%A6%86%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%BF/47086#sthash.kf6rDpzB.GVbkTPAi.dpuf
0 comments:
Post a Comment