যুক্তরাষ্ট্রের
টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ডালাসে কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর পুলিশি হামলার বিরুদ্ধের এক
প্রতিবাদ মিছিল থেকে পুলিশের ওপর গুলি চালানো হয়েছে। গুলিতে এ পর্যন্ত ৪
পুলিশ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১১ জন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন
খবরটি নিশ্চিত করেছে।এরআগে ২০১৫ সালেও সেখানকার পুলিশ সদর দফতরে হামলা
হয়েছিল।সিএনএন
চতুর্থ পুলিশের মৃত্যুর খবর জানানোর আগে ডালাসের পুলিশ প্রধান ডেভিড
ব্রাউন এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ডালাসে নিহত পুলিশের সংখ্যা ৩। আহত অবস্থায়
রয়েছেন ৭জন। এদের মধ্যে দুইজনের অস্ত্রোপচার চলছে। আর ৩ জন আশঙ্কাজনক
অবস্থায় রয়েছেন। একটি বিক্ষোভ শুরুর প্রস্তুতিকালে সেখানকার খুব কাছাকাছি
অবস্থান থেকে ওই হামলা চালানো হয়।এ ঘটনায় এখনও কাউকে সন্দেহ করা হয়নি। কাউকে গ্রেফতার কিংবা আটকও করা হয়নি।উল্লেখ্য,
যুক্তরাষ্ট্রে গত মঙ্গল ও বুধবার দুইদিনে পরপর দুইদিনে দুইজন কৃষ্ণাঙ্গ
পুলিশের হাতে খুন হন। এই প্রেক্ষাপটেই পুলিশের ওপর বিক্ষোভ থেকে হামলা
চালানো হলো।লুইজিয়ানার ব্যাটন রগ শহরে মঙ্গলবার পুলিশের গুলিতে এক
কৃষ্ণাঙ্গ নিহত হন। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলছিল। চলমান বিক্ষোভের মধ্যেই
বুধবারের কৃষ্ণাঙ্গ হত্যাকাণ্ডের আরেকটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। নতুন
হত্যাকাণ্ডটি ঘটে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যে।মার্কিন সংবাদমাধ্যম হাফিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার ছড়িয়ে পড়া নতুন ভিডিওতে দেখা গেছে মিনেসোটায় ফিলানডো ক্যাসটিলে নামের এক কৃষ্ণাঙ্গের রক্তাক্ত শরীরের দিকে গুলি তাক করে আছে পুলিশ। এই ব্যক্তির প্রেমিকার অভিযোগ, পুলিশ ফিলানডোর কাছে থাকা আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ও রেজিস্ট্রেশনের ব্যাপারে জানতে চায়। ফিলানডো পুলিশকে জানান, তার কাছে একটি পিস্তল আছে এবং তা বহন করার জন্য লাইসেন্সও রয়েছে। পরে পুলিশ তাকে গুলি করে।ঘটনার সময় ফিলানডোর পাশের আসনে বসা ছিলেন প্রেমিকা। সেখান থেকে তিনি ভিডিও ধারণ করেন। ভিডিওতে দেখা যায়, গাড়িতে রক্তাক্ত অবস্থায় বসে আছেন ফিলানডো। আর এক পুলিশ সদস্য তার দিকে বন্দুক তাক করে আছেন। পুলিশ কর্মকর্তাকে লক্ষ্য করে ওই নারীকে বলতে শোনা যায়- ‘তার কোনও ঘটনার রেকর্ড নেই। ও কখনও জেলে ছিল না। ও কোনও গ্যাং-এরও সদস্য ছিল না।’
তখন ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি তাকে ওটা বের করতে নিষেধ করেছিলাম। তাকে হাত বের করতে বলেছিলাম।’
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, ওই নারী অভিযোগ করেছেন ফিলানডোকে চারবার গুলি করা হয়েছে। পুলিশকে তিনি আরও বলেন, ‘ফিলানডো তার লাইসেন্স আর রেজিস্ট্রেশনের কপি বের করতে চেয়েছিল।’
এরইমধ্যে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে মঙ্গলবার লুইজিয়ানার ব্যাটন রগ শহরের একটি ষ্টোরের সামনে এক কৃষ্ণাঙ্গকে হত্যার ঘটনায় দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ চলছে। ন্যায়বিচারের দাবিতে লুইজিয়ানার রাস্তায় জড়ো হয়েছেন হাজারো বিক্ষোভকারী। কেউ কেউ আবার ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার স্লোগান দিতে থাকেন।
মঙ্গলবারের ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় ৩৭ বছর বয়সী আফ্রিকান আমেরিকান এল্টন স্টারলিংকে গুলি করেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। স্টারলিং মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে স্টারলিং হত্যার ঘটনার আরেকটি ভিডিও পাওয়া গেছে।
এদিকে প্রাথমিক ময়নাতদন্তে স্টারলিং-এ বুকে ও পিঠে বেশ কয়েকটি গুলির আঘাত শনাক্ত হওয়ার কথা জানানো হয়েছে।
এ বছর এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের পুলিশ বাহিনী বর্ণবাদী মনোভাবে আক্রান্ত বলে উল্লেখ করে বিশেষ এক মার্কিন টাস্ক ফোর্স। পুলিশের নির্বিচার গুলির বিরোধিতা করে জনগণের প্রতিবাদের মুখে বিশেষ এ টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছিল। তদন্তের পর, টাস্ক ফোর্স জানায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পুলিশের গুলির শিকার শিকাগোর শত শত মানুষের ৭৪ ভাগই আফ্রিকান-আমেরিকান। তদন্ত প্রতিবেদনে তাই বলা হয়, শিকাগোর মানুষের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর প্রতি সংখ্যালঘুদের আতঙ্ক আর আস্থাহীনতা খুবই যৌক্তিক। স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও একাধিকবার মার্কিন সমাজের অভ্যন্তরে বর্ণবাদের সংস্কৃতির কথা স্বীকার করেছেন।
/এফইউ/বিএ/
0 comments:
Post a Comment