শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার পর গুলশান থানার একটি টহল টিম দায়িত্ব পালন করছিল গুলশানে হোটেল ওয়েস্টিনের পাশে। হঠাৎ টিমের দলনেতার ওয়াকিটকিতে একটি খবর এলো_ 'লেকভিউ ক্লিনিকের পাশে সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করেছে।' বার্তাটি পাঠান গুলশান থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম। সময় নষ্ট না করে টহল টিমের সদস্যরা লেকভিউ ক্লিনিকের
উদ্দেশে রওনা দেন। ৯টার দিকে তারা সেখানে পেঁৗছে যান। এরপর দেখেন, লেকভিউর পাশে হলি আর্টিসান বেকারি ও ও'কিচেন রেস্তোরাঁর প্রধান গেটের কাছে একজন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। আহত ব্যক্তি নিজেকে পরিচয় দিচ্ছিলেন এক জাপানি নাগরিকের গাড়িচালক হিসেবে। নাম আবদুর রাজ্জাক রানা। তিনি তখন বলছিলেন, 'আমাকে বাঁচান। ভেতরে অনেককে হত্যা করা হয়েছে।' টহল টিমের ছয় সদস্য আরেকটু এগিয়ে যেতেই তাদের লক্ষ্য করে কয়েকজন দুর্বৃত্ত গুলি ও গ্রেনেড ছুড়তে ছুড়তে বাইরে বেরিয়ে আসে।
ফারুক হোসেন আরও বলেন, পুলিশের পরবর্তী টিম আসার আগ পর্যন্ত সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করতে আমরা কিছু কৌশল নিয়েছি। আমাদের আগে ঘটনাস্থলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো দল পেঁৗছেনি। দু'জন কনস্টেবল আহত হওয়ার পর তাদের কাছে থাকা শটগান নিয়ে কিছুক্ষণ পরপরই গুলি করতে থাকি। যদিও আমার কাছে পিস্তল ছিল। শটগানের গুলি ছুড়লে বিকট শব্দ হয়। তাই বন্দুকধারীদের আতঙ্কিত করতে শটগানের গুলি ছুড়ি। যাতে তাড়াতাড়ি গুলি শেষ হয়ে না যায় তাই কিছু সময় পরপর থেমে থেমে গুলি করেছি। পুলিশের অন্য টিম আসার পর ফারুকসহ আহত অন্যদের হাসপাতালে নেওয়া হয়।এ সময় রেস্তোরাঁর বাইরে একটি প্রাডো গাড়ি দাঁড়ানো অবস্থায় ছিল উল্লেখ করে ফারুক বলেন, সম্ভবত জঙ্গিরা ওই গাড়ি দিয়ে পালিয়ে যেত। টহল টিমের প্রতিরোধের কারণে তারা পালাতে পারেনি।গুলশানের জিম্মি সংকটের ঘটনায় নিহত দুই পুলিশ কর্মকর্তার স্মরণে গতকাল রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। সেখানেও পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা গুলশানের জিম্মি সংকটের ঘটনায় ফারুকের ভূমিকার ভুয়সী প্রশংসা করেন। ফারুকের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে। বছরখানেক আগে তিনি গুলশান থানায় যোগদান করেন।ফারুকের সহকর্মী কনস্টেবল প্রদীপ চন্দ্র দাস সমকালকে বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় ইফতার করে হোটেল ওয়েস্টিনের পাশে অবস্থান করছিলাম। তখন ওয়াকিটকিতে একটি মেসেজ পেয়ে টহল টিমের সবাই লেকভিউতে চলে যাই। সেখানে যাওয়ার আগেই জঙ্গিরা রেস্তোরাঁর ভেতর থেকে হামলা চালায়। তারপর তারা পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় আমরা প্রতিরোধ গড়ি। তারা গ্রেনেড ও গুলি ছুড়ে পালানোর চেষ্টা করে। পাল্টা গুলির কারণে তারা রেস্তোরাঁর ভেতরে চলে যায়। তখন তিনজন আহত হয়েছে। আহত হওয়ার পরও গুলি ছুড়ে তাদের পালাতে দিইনি। তখনও জানা ছিল না ভেতরে আসলে কী ঘটেছিল।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান সমকালকে বলেন, মূলত রেস্টুরেন্টের পাশের বাড়ির এক বাসিন্দা ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজিকে ফোন করে গোলাগুলির ঘটনাটি জানান। এরপর তিনি সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের অবগত করেন। তবে দ্রুত টহল টিমের সদস্য ফারুক সেখানে না পেঁৗছলে উগ্রপন্থিরা পালিয়ে যেত।এদিকে প্রথম প্রতিরোধের পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ পুলিশ রেস্তোরাঁয় অভিযান চালানোর চেষ্টা করে। এ সময় জঙ্গিদের হামলায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল করিম ও বনানী থানার ওসি সালাহউদ্দিন খান নিহত হন। পরদিন শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে সফল কমান্ডো অভিযান চালানো হয়। অভিযানের পর ঘটনাস্থল থেকে ছয় জঙ্গির লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে শুক্রবার রাতে হামলার ৩০ মিনিটের মধ্যে ২০ জিম্মিকে নৃশংসভাবে হত্যা করে জঙ্গিরা।
0 comments:
Post a Comment