advertisement

adverisement

your javascript ads here

Monday, 4 July 2016

একের পর এক গুলি ছুড়ে জঙ্গিদের পালানো ঠেকাই ||

একের পর এক গুলি ছুড়ে জঙ্গিদের পালানো ঠেকাই  ||


শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার পর গুলশান থানার একটি টহল টিম দায়িত্ব পালন করছিল গুলশানে হোটেল ওয়েস্টিনের পাশে। হঠাৎ টিমের দলনেতার ওয়াকিটকিতে একটি খবর এলো_ 'লেকভিউ ক্লিনিকের পাশে সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করেছে।' বার্তাটি পাঠান গুলশান থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম। সময় নষ্ট না করে টহল টিমের সদস্যরা লেকভিউ ক্লিনিকের
উদ্দেশে রওনা দেন। ৯টার দিকে তারা সেখানে পেঁৗছে যান। এরপর দেখেন, লেকভিউর পাশে হলি আর্টিসান বেকারি ও ও'কিচেন রেস্তোরাঁর প্রধান গেটের কাছে একজন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। আহত ব্যক্তি নিজেকে পরিচয় দিচ্ছিলেন এক জাপানি নাগরিকের গাড়িচালক হিসেবে। নাম আবদুর রাজ্জাক রানা। তিনি তখন বলছিলেন, 'আমাকে বাঁচান। ভেতরে অনেককে হত্যা করা হয়েছে।' টহল টিমের ছয় সদস্য আরেকটু এগিয়ে যেতেই তাদের লক্ষ্য করে কয়েকজন দুর্বৃত্ত গুলি ও গ্রেনেড ছুড়তে ছুড়তে বাইরে বেরিয়ে আসে।

গ্রেনেডের আঘাতে টহল টিমের তিন সদস্য আহত হন। আহত হয়েও তারা দমে যাননি। পাল্টা গুলি ছুড়তে থাকেন। দুর্বৃত্তরা তখন বাধ্য হয়ে আর্টিসানের ভেতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়। এ সময় আহত অবস্থায় টহল টিমের দলনেতা ফারুক হোসেন ওয়াকিটকিতে গুলশানের ডিসি মোস্তাক আহমেদকে খবর দেন, 'স্যার আমাদের অ্যাটাক করা হয়েছে। দুর্বৃত্তরা গুলি ছুড়ছে, বোমা নিক্ষেপ করছে।' এই বার্তার ১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য রেস্তোরাঁ ঘিরে ফেলেন। এভাবেই গত শুক্রবার রাতে হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় হামলাকারী জঙ্গিদের পালানোর পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। টহল টিমের সাহস আর বীরত্বের কারণেই হামলার পর পালানোর সব ছক করা থাকলেও জঙ্গিরা পালাতে পারেনি। রেস্তোরাঁর বাইরে জঙ্গিদের জন্য অপেক্ষা করছিল একটি প্রাডো গাড়িও।টহল টিমের দলনেতা এসআই ফারুকের পায়ে ৮টি স্পিল্গন্টার লেগেছে। ভেঙে গেছে তার ডান পা। তিনি এখন গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। টহল টিমের সদস্য কনস্টেবল প্রদীপ চন্দ্র দাস ও আলমগীর হোসেন আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। কনস্টেবল রুবেল ও জিয়া সামান্য আহত হয়েছেন। এই চার কনস্টেবল মিরপুরের পুলিশ অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) কর্মরত।টহল টিমের দলনেতা এসআই ফারুক হোসেন গতকাল সেই রাতের পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন সমকালের কাছে। ফারুক জানান, সময়টা সুনির্দিষ্টভাবে ঠিক মনে নেই তার। গুলশান থানার ওসি ওয়াকিটকিতে বার্তা পাঠান লেকভিউ ক্লিনিক আক্রান্ত হয়েছে। এই বার্তা পাওয়ার পর এক মুহূর্ত দেরি না করে ছয় সদস্যের টহল টিম নিয়ে সেখানে পেঁৗছে যান তিনি। সেখানে গিয়ে দেখেন, মূল গেটের ভেতরে একজন আহত হয়ে পড়ে আছেন। তিনি জানালেন, ভেতরে অনেককে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় রেস্তোরাঁর বাইরে দাঁড়িয়েছিল একটি প্রাডো গাড়ি। পুলিশের টহল গাড়ি দেখার পরপর সেটা দ্রুত পালিয়ে গেল। হোটেলের ভেতর থেকে কয়েকজন দুর্বৃত্তও পালানোর চেষ্টা করছিল। গাড়িটি সম্ভবত তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। জঙ্গিদের লক্ষ্য করে গুলি শুরু হলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। গ্রেনেডের আঘাতে প্রথমে দু'জন কনস্টেবল আহত হন। তারপরও তাদের লক্ষ্য করে আমরা গুলি ছুড়তে থাকি। তখন তারা রেস্তোরাঁর ভেতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়। এ সময়ে ওয়াকিটকিতে আক্রান্ত হওয়ার খবর দিই। সবাইকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট নিয়ে আসতে বলি। জঙ্গিদের অন্তত পাঁচ সদস্যকে দেখেছি আমি। দু'জনের কাছে ব্যাগ ছিল। সবার কাছেই ছিল ক্ষুদ্রাস্ত্র।

ফারুক হোসেন আরও বলেন, পুলিশের পরবর্তী টিম আসার আগ পর্যন্ত সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করতে আমরা কিছু কৌশল নিয়েছি। আমাদের আগে ঘটনাস্থলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো দল পেঁৗছেনি। দু'জন কনস্টেবল আহত হওয়ার পর তাদের কাছে থাকা শটগান নিয়ে কিছুক্ষণ পরপরই গুলি করতে থাকি। যদিও আমার কাছে পিস্তল ছিল। শটগানের গুলি ছুড়লে বিকট শব্দ হয়। তাই বন্দুকধারীদের আতঙ্কিত করতে শটগানের গুলি ছুড়ি। যাতে তাড়াতাড়ি গুলি শেষ হয়ে না যায় তাই কিছু সময় পরপর থেমে থেমে গুলি করেছি। পুলিশের অন্য টিম আসার পর ফারুকসহ আহত অন্যদের হাসপাতালে নেওয়া হয়।এ সময় রেস্তোরাঁর বাইরে একটি প্রাডো গাড়ি দাঁড়ানো অবস্থায় ছিল উল্লেখ করে ফারুক বলেন, সম্ভবত জঙ্গিরা ওই গাড়ি দিয়ে পালিয়ে যেত। টহল টিমের প্রতিরোধের কারণে তারা পালাতে পারেনি।গুলশানের জিম্মি সংকটের ঘটনায় নিহত দুই পুলিশ কর্মকর্তার স্মরণে গতকাল রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। সেখানেও পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা গুলশানের জিম্মি সংকটের ঘটনায় ফারুকের ভূমিকার ভুয়সী প্রশংসা করেন। ফারুকের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে। বছরখানেক আগে তিনি গুলশান থানায় যোগদান করেন।ফারুকের সহকর্মী কনস্টেবল প্রদীপ চন্দ্র দাস সমকালকে বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় ইফতার করে হোটেল ওয়েস্টিনের পাশে অবস্থান করছিলাম। তখন ওয়াকিটকিতে একটি মেসেজ পেয়ে টহল টিমের সবাই লেকভিউতে চলে যাই। সেখানে যাওয়ার আগেই জঙ্গিরা রেস্তোরাঁর ভেতর থেকে হামলা চালায়। তারপর তারা পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় আমরা প্রতিরোধ গড়ি। তারা গ্রেনেড ও গুলি ছুড়ে পালানোর চেষ্টা করে। পাল্টা গুলির কারণে তারা রেস্তোরাঁর ভেতরে চলে যায়। তখন তিনজন আহত হয়েছে। আহত হওয়ার পরও গুলি ছুড়ে তাদের পালাতে দিইনি। তখনও জানা ছিল না ভেতরে আসলে কী ঘটেছিল।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান সমকালকে বলেন, মূলত রেস্টুরেন্টের পাশের বাড়ির এক বাসিন্দা ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজিকে ফোন করে গোলাগুলির ঘটনাটি জানান। এরপর তিনি সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের অবগত করেন। তবে দ্রুত টহল টিমের সদস্য ফারুক সেখানে না পেঁৗছলে উগ্রপন্থিরা পালিয়ে যেত।এদিকে প্রথম প্রতিরোধের পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ পুলিশ রেস্তোরাঁয় অভিযান চালানোর চেষ্টা করে। এ সময় জঙ্গিদের হামলায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল করিম ও বনানী থানার ওসি সালাহউদ্দিন খান নিহত হন। পরদিন শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে সফল কমান্ডো অভিযান চালানো হয়। অভিযানের পর ঘটনাস্থল থেকে ছয় জঙ্গির লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে শুক্রবার রাতে হামলার ৩০ মিনিটের মধ্যে ২০ জিম্মিকে নৃশংসভাবে হত্যা করে জঙ্গিরা।

0 comments:

Post a Comment