advertisement

adverisement

your javascript ads here

Tuesday, 19 July 2016

সুন্দরবন রক্ষায় ইউনেসকোর হস্তক্ষেপ কামনা !!

সুন্দরবন রক্ষায় ইউনেসকোর হস্তক্ষেপ কামনা !!

 সুন্দরবনের বেশ কাছাকাছি এলাকা বাগেরহাটের রামপালে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়েছে বিশ্বের তিনটি প্রভাবশালী পরিবেশবাদী সংগঠন। এ বিষয়ে জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থার (ইউনেসকো) হস্তক্ষেপ চেয়েছে এসব সংগঠন।

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের কাছে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংগঠন ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ, দ্য সিয়েরা ক্লাব এবং ৩৫০ডটঅর্গ।
মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, এ ব্যাপারে ওই তিন সংগঠন আবেদনপত্রের মাধ্যমে জনমত গড়ে তুলেছে। আবেদনে ৫০ হাজার স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব স্বাক্ষর সংবলিত আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে ইউনেসকোর কাছে।
সুন্দরবনকে বিপদাপন্ন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তালিকায় রাখার আবেদনও করে ওই তিন সংগঠন। তুরস্কের ইস্তাম্বুলে গত রোববার শেষ হয় ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির সম্মেলন। এর আগেই ইউনেসকোর কাছে ওই আবেদন জমা দেওয়া হয়।
১৯৯৭ সালে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় বিশ্বের অন্যতম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন।
‘ফ্রেন্ডস অব আর্থ’ হচ্ছে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামভিত্তিক একটি সংস্থা। সারাবিশ্বের ৭৪টি দেশের পরিবেশবাদী সংগঠনের নেটওয়ার্ক হিসেবে কাজ করে ওই সংস্থা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্যালিফোর্নিয়ায় ‘৩৫০ডটঅর্গ’ এর সদর দপ্তর। ২০১৩ সালে গান্ধী শান্তি পুরস্কার বিজয়ী পরিবেশবাদীকর্মী ম্যাককিবেন ওই সংস্থার পুরোধা। সংস্থাটি কাজ করে কার্বন নি:সরণ নিয়ে। বিশ্বব্যাপী কার্বন নি:সরণ নিয়ে সচেতনতাসহ পরিবেশ ইস্যুতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে সংস্থাটি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পরিবেশবাদী সংগঠন ‘সিয়েরা ক্লাব’। বিশ্ব উষ্ণায়ন হ্রাস, কয়লাভিত্তিক দূষণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে নব্বইয়ের দশক থেকে কাজ করছে সিয়েরা।
‘ক্ষমতা আছে ইউনেসকোর’
সুন্দরবন ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের অবস্থা বর্ণনা করে একটি আবেদনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী জনমত গড়ে তোলে ওই তিন সংগঠন। সেখানেই মানুষ স্বাক্ষর করে সুন্দরবন বাঁচানোর পক্ষে দাঁড়ায়।
ওই আবেদনে বলা হয়, সুন্দরবনের অত্যন্ত কাছে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ভারতের সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। এতে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে মানুষ ও পরিবেশের ভবিষ্যৎ অবস্থা।
আবেদনে আরো বলা হয়, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে লাখ লাখ টন কয়লা প্রয়োজন হবে, যা যাবে নদীপথে। বিষাক্ত দূষণের শিকারের সম্ভাবনা আছে এখানে।
আরো বলা হয়, ভারত ও বাংলাদেশ সরকারকে বার্তা দেওয়ার ক্ষমতা আছে ইউনেসকোর। বিপদাপন্ন হেরিটেজের তালিকায় সুন্দরবনের নাম উল্লেখ করে এখানে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধ করার ব্যাপারে উভয় দেশকে বার্তা দিতে পারে ইউনেসকো।
যুদ্ধ, সশস্ত্র সংঘর্ষ, ভূমিকম্প, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দূষণ, অনিয়ন্ত্রিত নগরায়নের মতো বিষয় থাকলে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তালিকাভুক্ত এলাকাকে বিপদাপন্ন বলে ঘোষণা করে ইউনেসকো। আর এসব এলাকার উন্নয়ন বা রক্ষায় বিভিন্নভাবে কাজ করে জাতিসংঘের ওই সংস্থা।
এরই মধ্যে ভূমিকম্পের কারণে ইরানের বাম সিটি, অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে ইয়েমেনের জাবিদ শহর, সশস্ত্র সংঘর্ষের কারণে আফগানিস্তানের বামিয়ান অঞ্চল, গৃহযুদ্ধের কারণে কঙ্গোর গারামবা, কাহুজি-বিয়েগার উদ্যান, সালোঙ্গা, ভিরুঙ্গা এবং অকাপি এলাকা বিপদাপন্ন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তালিকাভুক্ত  হয়েছে।

‘বিতর্ক যেখানে’
ওয়াশিংটন পোস্টের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়েক হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে অবস্থিত সুন্দরবন। বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশেই সুন্দরবনের অবস্থান। নানা বৈচিত্র্যের বৃক্ষ, পাখির প্রাচুর্য, সাগর আর নদীর মাছ, বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর জন্য সুন্দরবন সারাবিশ্বে খ্যাত। আর এ বনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে সারা বিশ্ব এক নামেই চেনে। যদিও এসব প্রাণী ও পাখিও বিপন্ন হওয়ার পথে।
তবে এ বনকে ঘিরেই আছে বহু মানুষের জীবিকা। মানুষ মাছ ধরে, বনকে ঘিরে বেড়ে ওঠে। আবার এ সুন্দরবন নিজ উদ্যোগে বাঁচিয়ে রাখে এসব এলাকার মানুষকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর সামুদ্রিক ঝড়, জলোচ্ছাসের বাধা হয়ে দাঁড়ায় এ বন।
এই যখন অবস্থা, ঠিক তখনই বাগেরহাটের রামপালে নির্মাণ করা হচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্র। যা সুন্দরবনের খুব কাছাকাছি। ২০১২ সালে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগ শুরু হয়। গঠিত হয় বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল)। ওই প্রতিষ্ঠানই উৎপাদন করবে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
বিশ্বব্যাংকের বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। আর এ কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়টি দেশের সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। আর রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
পরিবেশবাদী সংগঠন ৩৫০ডটঅর্গর পরামর্শক রেনুকা সারোহা বলেন, ‘প্রথম দিকে এটা ছিল ভূমি রক্ষার আন্দোলন। একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরো পরিবেশ ব্যবস্থার কী করতে পারে তা সম্পর্কে দরিদ্র কৃষকদের কোনো ধারণাই ছিল না।’
রেনুকা সারোহা জানান, প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা আছে, কাজের জন্য পানি ব্যবহার করা হবে পশুর নদ থেকে। ব্যবহারের পর দূষিত পানিটা ফেলে দেওয়া হবে ওই পশুর নদেই। পরিবেশবাদীরা এ বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। সুন্দরবনের এ নদকে ঘিরে আছে ব্যাপক প্রাণবৈচিত্র্য। কেবল ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলই নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হবে ওই এলাকা ঘিরে বেঁচে থাকা জনগোষ্ঠীও।
সারোহা বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লাও বেশ উদ্বেগের বিষয়। বলা হচ্ছে, কয়লা অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা হবে অথবা ভারত থেকে জাহাজের মাধ্যমে আসবে। কিন্তু বিষয়টি স্পষ্ট নয়।
‘আপনি যদি কয়লার উৎস সম্পর্কে না জানেন, এ ব্যাপারে যদি কয়লা সরবরাহের চুক্তি না থাকে, তাহলে কীভাবে প্রভাব সমীক্ষণ করবেন?’, যোগ করেন সারোহা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নদীপথে কয়লা পরিবহন নিয়েও পরিবেশবাদীরা প্রশ্ন তুলেছে। কেননা এতে দূষিত হতে পারে নদীর পানি। বছরখানেক আগে এ নদেই তেলবাহী জাহাজ ডুবে যায়। আর তেল ছড়িয়ে পড়ে পানিতে।
৩৫০ডটঅর্গর পরামর্শক রেনুকা সারোহার দুশ্চিন্তা আরো গভীরে। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে এ এলাকাটা একটি শিল্প এলাকায় পরিণত হবে।’ তিনি জানান, পুরো প্রতিবেশের ধ্বংস তখন আর ঠেকানো যাবে না।
বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বিআইএফপিসিএল জানায়, বাংলাদেশের ও বিশ্বের অন্যান্য সংস্থার নিয়মনীতি মেনেই এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। সুন্দরবনের প্রাণী, এলাকার জনগোষ্ঠী, পশুর নদ কোনো কিছুরই ক্ষতি হবে না বলে দাবি করা হয়ে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে।
বাংলাদেশে পরিবেশবাদী সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রতিবাদ করছে। তবে পাশাপাশি চলছে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যেহেতু সুন্দরবন ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অংশ, এ কারণে ইউনেসকোর দৃষ্টি আকর্ষণের বিষয়টি প্রয়োজন। ইউনেসকো এ বিষয়ে সরকারসহ বিভিন্ন সংস্থাকে পরামর্শসহ আলোচনা করতে পারে।
ইউনেসকোর কর্মপন্থা অনুযায়ী, বিপদাপন্ন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তালিকা থেকে কোনো এলাকার নাম সরানোর জন্য সংস্থাটি বিভিন্নভাবে কাজ করবে।
পরিবেশবাদী সংগঠনের একজন কর্মী হিসেবে রেনুকা সারোহা জানান, ইউনেসকোর ওই তালিকায় সুন্দরবনের নামটি উঠলে বনটি বাঁচানোর ক্ষেত্রে একটি সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। 

0 comments:

Post a Comment