advertisement

adverisement

your javascript ads here

Thursday, 7 July 2016

ফুটপাতে ভালোবাসার প্রথম ঈদ ||

ফুটপাতে ভালোবাসার প্রথম ঈদ ||


আরিফ সাওন : বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা। ফুটপাতে বসে একপাত্রে খাচ্ছেন দুজন। তাদের একজন নারী, আরেকজন পুরুষ। পুরুষটি জিন্স পরা কিন্ত খালি গায়ে। আর নারী ম্যাক্সি পরা।
খুব কাছাকাছি দুজন। বসেও আছেন দুজন দুজনার দিকে মুখ করে। পুরুষের হাতের বাম পাশে রয়েছে একটি পানির
বোতল। আর খাবার পাত্রের ঢাকনার ওপর রয়েছে লবন এবং কয়েকটি কাচামরিচ।

দুজনার মাঝে প্লাস্টিকের ছোট গামলা রেখে খাবার খাচ্ছেন তারা। যখন খাবার মুখে দিচ্ছিলেন, তখন দুজনের মাথা একসঙ্গে লেগে যাচ্ছিল। এটা কোনো সিনেমা বা নাটকের দৃশ্য নয়। এ দৃশ্য নাটক সিনেমাকে হার মানায়।



যখন মাথা লেগে যাচ্ছিল, দূর থেকে মনে হচ্ছিল ‘হার্ট’ (ভালবাসার প্রতীক) আকৃতি। ‘হার্ট’ আকৃতির তো হবেই। কারণ, এটা তাদের ভালোবাসার প্রথম ঈদ। আর সেই ঈদ তারা উদযাপন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দোয়েল চত্বরের পাশে ফুটপাতে বসে।

তারা জানান, ফুটপাতই তাদের বাড়িঘর। এমন অনেক মানুষই আছেন যাদের ঈদ উদযাপন হচ্ছে ফুটপাতে।

কথা বলে জানা যায়, তারা দুজন স্বামী-স্ত্রী (আব্দুর রাজ্জাক-জেসমিন আক্তার)। স্ত্রী অন্তঃসত্বা। আব্দুর রাজ্জাক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আট মাস আগে বিয়ে করেছি। স্ত্রীর পেটে সন্তান।’

আব্দুর রাজ্জাক কুমিল্লার দাউদকান্দির মুডুবি গ্রামের তাবেল হোসেনের ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে রাজ্জাক বড়। জেসমিনের বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশালের ঘাটাখালি গ্রামে। তার বাবার নাম আব্দুল হুদা কাদের। ছয় ভাই-বোনের  মধ্যে জেসমিন মেঝো।

আব্দুর রাজ্জাক আরো বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে পোশাক কারখানায় কাজ করার সময় জেসমিনের সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে জেসমিনকে ভাল লেগে যায়। পরে প্রেমের প্রস্তাব দেই।’



তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবের প্রথমদিনেই জেসমিন রাজি হয়নি। ও কোনো মতেই রাজি হচ্ছিল না। তিনদিন পরে হঠাৎ এসে জানায়, সে রাজি।’

রাজ্জাক যখন এ কথা বলছিলেন, তখন জেসমিন মৃদু হেসে মুখ লুকানোর চেষ্টা করছিলেন।

রাজ্জাক বলেন, ‘এ বিয়ে বাবা-মা মেনে নেননি। তাই জেসমিনকে নিয়ে ফুটপাতে বাস করি। আগে জেসমিন পোশাক কারখানায় কাজ করত। এখন কোনো কাজ করে না।’

আব্দুর রাজ্জাক কমলাপুরে পণ্য ওঠা নামানোর শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। এতে যা আয় হয়, তা দিয়ে চলে দুজনের সংসার।

জেসমিন জানান, ঈদে নতুন জামা কাপড় কেনা হয়নি। নানা স্বাদের খাবারও জোটেনি। তবুও দুঃখ নেই, কষ্ট নেই। একরাশ হাসি দিয়ে বলেন, ‘আমাদের ঈদ ভালোই কাটছে। ৮০ টাকা দিয়ে ভাত-মাছ কিনে এনে দুজনে একসঙ্গে খাচ্ছি। এটাই আমাদের ঈদ।’

0 comments:

Post a Comment