কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, দুর্ভোগ

দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, আজ সোমবার সকাল ছয়টায় ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল রোববার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে আজ সোমবার ভোর ছয়টা পর্যন্ত ধরলায় ২১ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্রে ৫ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ১৬টি নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। জেলার ৪২০টি চরে পানি ঢুকে পড়েছে।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাফুজুর রহমান জানান, পানি দ্রুত বাড়ছে। গত বছরের চেয়ে ব্রহ্মপুত্রের পানি ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। ধরলার পানি অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। তিনি বলেন, উজানে পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিতে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় অন্যান্য নদ-নদীর পানি নামতে পারছে না। কারণ, জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত সব কটি নদ-নদীর পানি ব্রহ্মপুত্রে গিয়ে মিশেছে। সেই সঙ্গে বৃষ্টি থাকায় অন্যান্য নদীর পানি বের হতে না পেরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে।
চরাঞ্চল ঘুরে বন্যাকবলিত মানুষের দুর্ভোগের চিত্র চোখে পড়ে। জেলার ৪২০টি চরে পানি উঠেছে। চরের নিচু এলাকার বাড়িগুলো বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় লোকজন মাচা করে বসবাস করছে। প্রায় এক মাস ধরে এলাকাগুলো পানিতে ডুবে থাকায় এলাকার মানুষ খাদ্য, পানি ও জ্বালানিসংকটে পড়েছে।
আজ সকাল সাতটায় ধরলা নদীর অববাহিকায় ভোগডাঙা ইউনিয়নের চর বড়াইবাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ এলাকা ডুবে আছে। সড়কেও পানি। কোমরপুর থেকে ফুলবাড়ী উপজেলা পাকা সড়কে পানি উঠে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
কোমরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আব্দুর সাফী বলেন, এবার পানি আগের বছরগুলোর তুলনায় বেশি বেড়েছে। ২০০৭ সালের পর এসব এলাকায় এত পানি উঠতে দেখা যায়নি। যেসব এলাকায় আগে কখনো পানি ওঠেনি, সেসব এলাকায়ও এবার পানি উঠেছে। কুড়িগ্রাম সদর থেকে ফুলবাড়ী উপজেলা পর্যন্ত ধরলা নদীর দুই ধারে ইউনিয়নের অধিকাংশ ঘরবাড়ি ও সড়কে পানি উঠেছে।
দুধকুমার, গঙ্গাধর ও ফুলকুমার নদের অববাহিকায় নাগেশ্বরী, ভূরুঙ্গামারী উপজেলার চরাঞ্চলসহ আশপাশের এলাকার ঘরবাড়ি ও সড়ক বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। কুড়িগ্রাম সদর থেকে যাত্রাপুর যাওয়ার পাকা সড়কে কোমরসমান পানি। পাঁচগাছি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা পানিতে।
পাঁচগাছি ইউপির চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, ইউনিয়নের সব এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। বহু পাটখেত নষ্ট হয়ে গেছে। ব্রহ্মপুত্র, সোনাভড়ি, কালো ও জিঞ্জিরাম নদের পানি বেড়ে দুই উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
চর বড়াইবাড়ি এলাকার বন্যাকবলিত আবদুর রহিম বলেন, এক সপ্তাহ আগে তাঁর বাড়িতে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। ঘরের ভেতর চৌকি উঁচু করে তিনি পরিবারের সদস্য নিয়ে বসবাস শুরু করেছেন। রহিম জানান, তিনি কৃষিজমিতে দিনমজুরের কাজ করেন। জমি পানিতে ডুবে যাওয়ায় কাজ এখন পুরোপুরি বন্ধ। জমানো টাকাও শেষ। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তান নিয়ে এখন বিপাকে পড়েছেন। খাবারের ব্যবস্থা কোত্থেকে করবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।
বন্যার পানির তোড়ে গতকাল নাগেশ্বরী উপজেলার কালিগঞ্জ থেকে মাদারগঞ্জ সড়কের সাত মিটার দেবে গেছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী সোলায়মান আলী জানান, ওই সড়কের সাত মিটার পর্যন্ত দেবে গেছে। আরও ৭০ মিটার দেবে যাওয়ার পথে।
সড়ক নির্মাণে ত্রুটি থাকায় এই অবস্থা হয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে মাদারগঞ্জ এলাকার এক বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা বলেন, দুধকুমার নদের প্রবল স্রোতে এই রাস্তা দেবে গেছে। গত বছর এবং চলতি বছরও এ সড়কটি মেরামত করা হয়েছে। মেরামতের কাজ সঠিকভাবে হলে রাস্তার এই দুরবস্থা হতো না।
0 comments:
Post a Comment