advertisement

adverisement

your javascript ads here

Sunday, 17 July 2016

"গত চারদিন কিছুই না খাওয়ায় অসুস্থ বৃদ্ধা আপনার মা আজ সকালে মারা গেছেন"!

"গত চারদিন কিছুই না খাওয়ায় অসুস্থ বৃদ্ধা আপনার মা আজ সকালে মারা গেছেন"!

বৃদ্ধাশ্রমে মাকে রেখে এসেছে তপু।
সাড়ে তিন বছর প্রেমের ফলাফল তনিমা নামের সুন্দরি বউ।তপুর কাছে ভারী লক্ষী বউ তনিমা।বউয়ের কথায় উঠবস করে।কেন যেন বউয়ের কথায় উঠতে বসতে তপুর ইগোতে লাগেনা।বরং ভালো লাগাই কাজ করে।
যেখানে অফিসে সে বড় অফিসার সেখানে ঘরে তার অফিসার বউ।

.
বাবাকে হারিয়েছে বহু আগেই তপু।দুকূলে কেবল বৃদ্ধা মা'ই আছেন।ঘরের লক্ষী বউ।সেই
লক্ষীটার আগমনে শ্বাশুড়ির বাধন হারা আনন্দ। বউ সংসারটাকে আগলে রাখবে।গরম পানি করে দেবে। শরিরটা মাঝেমাঝে টিপে দেবে।বিছানাটা আর নোংরা থাকবে না।
.
দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারনী মায়ের এমন
চাওয়াগুলো ভালোবাসার চাওয়া।এমন ভালোবাসার পাওয়াটা এতটা করুন হবে ভাবেনি বৃদ্ধা।নতুন বউকে নিয়ে বেশ আমেজেই আছে তপু।খুবই ইচ্ছে করে
ছেলের বউয়ের সাথে একটু কথা বলতে।কিন্তু
পারেনা।কারন সবসময়ই বউয়ের মুখটা মলিন থাকে। অবশ্য খুব বেশিদিন লাগেনি বউটার বিরক্তির কারন বৃদ্ধা নিজেই এ কথাটি বুঝতে।
.
অনাহার আর অনাদরেই কেটে গেল পাঁচটি বছর। একদিন তপুর আকুতি মিনতি আপনি কত কষ্ট করছেন মা। এখানে আপনার সেবা করার কেউ নেই।সুন্দর একটা পরিবেশে যদি আপনাকে রেখে আসি যেখানেবসেবা যত্ন করার মানুষ থাকবে।সময় মত খাওয়া দাওয়া
করাবে।আপনি অনেক ভালো থাকবেন সেখানে। মা!
.
অপলক ছেয়ে আছে ছেলের দিকে।মনের
অজান্তেই দুফোঁটা অশ্রু ঝরে পড়ল।ছেলে সে
অশ্রুর কারন বুঝতে পারেনি।বউকে খুশি রাখতে,মাথার:বোঝা দূর করতেই মাকে রেখে এলো সেই পরিবেশটাতেই।
.
সেকালের ক্লাশ ফাইভ পর্যন্ত পড়া বৃদ্ধা জানেন এটাই বৃদ্ধাশ্রম।যাদের দেখাশুনা করার কেউ থাকেনা তারাই বৃদ্ধাশ্রমে থাকে।তবে কি তাকে দেখার আজ কেউই নেই!
.
মাকে গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছিল তখন তপু।যাওয়ার সময় নাতিটাকে বুকের সাথে জড়িয়ে বেশ কাঁদল তপুর মা।বড্ড ইচ্ছে হচ্ছিল বউটাকে একটু বলতেভনাতিটার দিকে খেয়াল রেখ।আমিতো আর থাকবো না।কিন্তু ঘোমরামুখী বউকে দেখে বলার সাহস
হলো না উনার।তপু মাকে রেখেই এলো বৃদ্ধাশ্রমে।
.
বাসায় ফিরে বউয়ের উচ্ছাস দেখে তপুর মনটা ভরেবগেল।একদিন বউ হাসতে হাসতে বলে "দেখো এখন থেকে ঘরটাকে কতটা পরিপাটি করে রাখি।আরবনোংরা করার কেউ নেই! দীর্ঘ পাঁচটা বছর ওই বৃদ্ধা কি জ্বালাতনটাই না করলেন!"
.
তপুর ছেলেটি মায়ের কথাগুলো শুনছিল।হঠাৎই বলে উঠল "আম্মু তোমাকে না এই শাড়িটাতে অনেক সুন্দর লাগছে।যত্ন করে রেখে দিও।আমি যখন দাদীর মত তোমাকেও রেখে আসবো তখন এই শাড়িটা পরে যেও কেমন?"
.
কিছু সময়ের জন্য তনিমা তাকিয়ে রইলো কেবল ছেলেটার দিকে।কিছু বলতে পারছিল না! ঠিক তখনই বাবাকে বলে "তোমার পাঞ্জাবীটাও রেখে দিও বাবা।আমি যখন বিয়ে করবো এই পাঞ্জাবীটা পরিয়ে তোমায় রেখে আসবো দাদীর মত!"
.
তপুর বুকের ভেতরটা প্রচন্ডরকম কেঁপে
উঠলো।বাচ্ছা ছেলেটা এগুলো কি বলছে!তখনই ছেলেটা বলে "জানো দাদী আমাকে বলেছিল তোমরাতো দাদীকে দুরে রেখে আসছো।ভআমি যেন তোমাদের রেখে না আসি।আমি বলেছিলাম "আম্মু বলেছে আব্বু আম্মু যা করবেবআমিও যেন তাই করি!"
.
তপু আর তনিমা চুপচাপ হয়ে গেল।তনিমা তপুকে আকুতি ভরা কন্ঠে বলছে "ওগো যাও আম্মাকে নিয়েবআসো"।তপু পাগলের মত বউকে দুরে ঠেলে দিল।কাঁদতে কাঁদতে বলছে "মাগো চারটা দিন তুই দুরে।আমার ভাত হজম হচ্ছেনা।আমি আসছি মা তোর পায়ে পড়তে।তোকে ফিরিয়ে আনতে।
.
হঠাৎই ফোনটা বেঁজে উঠলো।রিসিভ করতেই
বৃদ্ধাশ্রম থেকে ফোন "গত চারদিন কিছুই না খাওয়ায় অসুস্থ বৃদ্ধা আপনার মা আজ সকালে মারা গেছেন"!
.
ফোনটা কান থেকে রাখার শক্তিও হারিয়ে ফেলে তপু।তনিমা শ্বাশুড়ির আদর করে দেওয়া কানের দুলগুলো খুলে হাতে নিল।বুকের সাথে মিশিয়ে অঝোর ধারায় কাঁদতে লাগল।

0 comments:

Post a Comment