পোস্টন্যাটাল ডিপ্রেশন: দরকার সাহায্য

শারমেইন ইয়েবস্লে
পোস্টন্যাটাল ডিপ্রেশন বা প্রসব-পরবর্তী বিষন্নতার বিষয়টিকে বাংলাদেশে
এখনও তেমন একটা গুরুত্বের চোখে দেখা হয় না। পুরো বিশ্বে প্রতি ১০ জনের
মধ্যে ১ জন নারী সন্তান জন্মদানের পরের এক বছরে কোনো না কোনো সময়
বিষন্নতায় ভোগেন। উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে এই বিষন্নতা প্রকট আকার ধারণ
করতে পারে এবং মা, বাচ্চা বা পরিবারের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
পোস্টন্যাটাল ডিপ্রেশনের লক্ষণ:

# হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই মন খারাপ হয়ে যাওয়া, কান্না পাওয়া।
# আত্নবিশ্বাসের অভাব বোধ করা, নিজেকে মূল্যহীন বা দোষী মনে হওয়া।
# বাচ্চার সাথে সময় কাঁটাতে ভাল না লাগা, আগে যেসব জিনিস ভাল লাগত সেগুলোও ভাল না লাগা
# কাজে মনোনিবেশ করা কঠিন হয়ে পড়া।
# ঘুম না আসা, এমনকি অনেক ক্লান্ত থাকার পরও
# বেশীরভাগ সময় বিরক্ত হয়ে থাকা, হঠাৎ হঠাৎ অকারণে বা খুব ছোট ব্যাপারে ক্ষেপে যাওয়া।
# লাগাতার দুশ্চিন্তা করা।
# পরিবারের সদস্য বা বন্ধুদের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়া।
# ক্ষুধামন্দা বা বেশি বেশি ক্ষুধা লাগা।
# প্যানিক অ্যাটাক অর্থাৎ হঠাৎ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়া।
# মৃত্যুচিন্তা, আত্মহত্যা করার চেষ্টা।
চিকিৎসকরা বলছেন হতাশারা পাশাপাশি উদ্বেগও একটি সাধারণ সমস্যা
এবং অনেক বাবা-মা হতাশা এবং উদ্বেগ একই সঙ্গে অনুভব করেন। এসব উপসর্গ যদি
দু সপ্তাহের বেশি থাকে তাহলে চিকিৎসকের সাহায্য নেয়া জরুরি।
যদি আপনার কাছের কেউ এই সমস্যায় ভোগেন, তাহলে আপনি যা করতে পারেন:
# অমায়িকভাবে জিজ্ঞেস করুন তারা তাদের মনের কথা খুলে বলতে চায় কী না।
# তাদেরকে বুঝিয়ে বলুন তারা একা নন, এসব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
# তাদেরকে পরামর্শ দিন সমস্যার ব্যাপারে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে।
সাহায্য করুন কাজের মাধ্যমে

মাঝে মাঝে সরাসরি সাহায্য চাওয়া অনেকের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।
নতুন বাবা-মাকে প্রথম কয়েক মাস কাজে সাহায্য করলে তা হয়ে ওঠে অমূল্য উপহার।
যদি মনে করেন আপনার কোনো বন্ধু বা আত্মীয় প্রসব-পরবর্তী বিষন্নতায় ভুগছে
তাহলে -
# আপনার সেই বন্ধু বা আত্মীয়ের বাড়িতে যান, কথাবার্তার ফাঁকে
তার থালাবাসন ধুয়ে দিন, কাপড়গুলো গুছিয়ে দিন কিংবা ভেজা কাপড় নেড়ে দিন। যদি
আপনার বন্ধুর আরেকটি বাচ্চা থাকে, তাহলে তাকে নিয়ে ঘণ্টা খানেকের জন্য
কোথাও বেড়িয়ে আসুন। অথবা বাচ্চাকে স্কুলে আনা-নেওয়ার ব্যাপারে সাহায্য
করুন।
# নবজাতকের পরিবারে খাবার তৈরি করে নিয়ে গেলে তারা সব সময়ই
খুশি হবে। কারণ বাচ্চাকে সামলাতে গিয়ে অনেকেই রান্নার সময় পান না। এক হাতে
খাওয়া যায়, ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যায় এমন স্বাস্থ্যকর কোনো খাবার তৈরি করে
নিয়ে যেতে পারেন।
# সদ্য মা হওয়া কোন নারী যিনি পোস্টন্যাটাল ডিপ্রেশনে ভুগছেন,
তিনি হয়ত অন্য কারও কাছে নিজের বাচ্চাকে ছেড়ে দিতে চাইবেন না। তারপরও মাঝে
মাঝে বাচ্চাটিকে একটু কোলে নিন কিংবা একটু ঘুরিয়ে আনার প্রস্তাব দিন। এই
ফাঁকে তার মা একটু বিশ্রাম নিতে পারবে। দূরে যাওয়ার দরকার নেই, সঙ্গে বসে
এক কাপ চা খেলেও তার কিছুটা ভাল সময় কাটবে।
যদি আপনার মনে হয় আপনার পরিচিত কেউ পোস্টন্যাটাল ডিপ্রেশনের শিকার,
তাহলে দেরি না করে তাকে সাহায্য করুন। তার সঙ্গী কিংবা পরিবারের কোনো
সদস্যের সঙ্গে কথা বলুন, অথবা তাকে সঙ্গে করে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান।
0 comments:
Post a Comment